শনিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
দুই দলের ভাবনায় ইসি পুনর্গঠন

আইন করার পক্ষে আওয়ামী লীগ

রফিকুল ইসলাম রনি

আইন করার পক্ষে আওয়ামী লীগ

স্বাধীনতার ৫০ বছরে বিভিন্ন সরকারের আমলে গঠিত নির্বাচন কমিশন নিয়ে বারবার বিতর্ক হলেও এখন পর্যন্ত কোনো সরকারই নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়ন করেনি। বিতর্ক এড়াতে নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়নের কথা ভাবছে আওয়ামী লীগ সরকার। এ নিয়ে কাজও শুরু হয়েছে বলে সরকার ও দলের নীতিনির্ধারক সূত্র জানিয়েছেন।

বাংলাদেশের সংবিধানের ১১৮ (১) অনুচ্ছেদে সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়েছে, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনারকে লইয়া বাংলাদেশের একটি নির্বাচন কমিশন থাকিবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত কোন আইনের বিধানাবলী-সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগদান করিবেন।’ শুধু নির্বাচন কমিশন গঠন নয়, কমিশনের কাজের ধরন সম্পর্কেও আইনের মাধ্যমে বিস্তারিত ধারণা দেওয়া আছে সংবিধানে। এতে আইনের কথা বলা হলেও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এসেও নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে কেউ আইনের কথা ভাবেননি। নিজেদের সুবিধার জন্য নানাভাবে এসব পদে নিয়োগ দিয়েছেন বলে মনে করেন রাজনৈতিক ও সংবিধান বিশেষজ্ঞরা। তবে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিতর্ক এড়াতে চায়। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন উপহার দিতে আইন তৈরির পথে হাঁটছে বর্তমান সরকার। আইনের মাধ্যমে কমিশন গঠন হলে বিতর্ক থাকবে না বলে মনে করছেন সরকারের নীতিনির্ধারক ফোরামের নেতারা। এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে আমরা আইনের কথা ভাবছি। সেভাবে কার্যক্রম শুরু হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে যে পদ্ধতি আছে তা নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। মহামান্য রাষ্ট্রপতি সব রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়েই কমিশন গঠন করে থাকেন।’ সূত্রমতে, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে আজিজ কমিশন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছিল। সে সময় আইন প্রণয়নের দাবিও উঠেছিল জোরালোভাবে। কিন্তু আইন করার পক্ষে ছিল না সে সময়ের সরকার। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে আইন প্রণয়ন না করলেও নতুনত্ব নিয়ে আসে ‘সার্চ’ কমিটি গঠনের মাধ্যমে। ফলে এ কমিশন নিয়ে আগের মতো বিতর্ক হয়নি। ২০১২ সালে সার্চ কমিটির মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনার নিয়োগ দিয়েছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রয়াত মো. জিল্লুর রহমান। একইভাবে ২০১৭ সালে নিবন্ধনকৃত সব রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়ে সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দেন বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকে আইন প্রণয়ন না করলে আওয়ামী লীগকে দায় নিতে হবে, এমন ভাবনা থেকেই আইন প্রণয়নের কথা ভাবছে বর্তমান সরকার। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছেন, ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে আইন মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করেছে। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। এত অল্প সময়ে আইন প্রণয়নের কাজটি হবে কি না তা-ও ভাবা হচ্ছে। মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশন আইনের খসড়া করে তা সংসদীয় কমিটিতে পাঠাবে। সেখানে যাচাই-যাছাই শেষে জাতীয় সংসদের মাধ্যমে তা আইনে পরিণত হবে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দেশে অনেক আইন করা হলেও নির্বাচন কমিশন গঠনের আইন হয়নি। বর্তমান সরকার আইনটি প্রণয়নের চিন্তাভাবনা করছে। এর ফলে সংবিধানের আলোকে নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন না থাকায় অতীতে যে আস্থাহীনতা আর রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে তা কেটে যাবে।’ তিনি দাবি করেন বিদ্যমান ‘সার্চ কমিটি’ ব্যবস্থাও ভালো ব্যবস্থা। এর মাধ্যমেও নির্বাচন কমিশন গঠিত হলে বিতর্ক করার সুযোগ নেই। স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠনের গুরুত্বপূর্ণ এ আইনটি এত দিনেও কেন হয়নি- এ প্রসঙ্গে একাধিক সংবিধান বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, যখন যে সরকার ক্ষমতায় ছিল তারা এসব নিয়োগের ওপর নিয়ন্ত্রণটা ছাড়তে চায়নি। আইন হলে সরকারের নিয়ন্ত্রণটা চলে যাবে। খেয়ালখুশিমতো নিয়োগ দিতে পারবে না, এজন্যই কোনো সরকার এসব আইন করতে চায় না।

সর্বশেষ খবর