রবিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চিঠি

শর্ত পূরণ ছাড়া আর নতুন উপজেলা নয়

উবায়দুল্লাহ বাদল

প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ ছাড়া আর নতুন কোনো উপজেলা গঠন করবে না সরকার। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সংক্রান্ত শর্ত পূরণ ছাড়া নতুন কোনো উপজেলা স্থাপনের প্রস্তাব না পাঠাতে স্থানীয় সরকার বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছে। সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) চিঠি দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।

বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী, নতুন উপজেলা গঠন করতে হলে সংশ্লিষ্ট এলাকায় পৌরসভাসহ কমপক্ষে  সাতটি ইউনিয়ন থাকতে হবে। পৌরসভা না থাকলে ইউনিয়ন সংখ্যা অবশ্যই আটটি হতে হবে। এলাকার আয়তন কমপক্ষে ৩০০ বর্গকিলোমিটার ও লোকসংখ্যা হতে হবে আড়াই লাখের বেশি।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, গত ২৬ জুলাই মাদারীপুরের ডাসার, সুনামগঞ্জের মধ্যনগর ও কক্সবাজারে ঈদগাঁও থানাকে উপজেলা গঠনের প্রস্তাব অনুমোদন দেয় প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি (নিকার)। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। সূত্র জানায়, নতুন ওই তিনটি উপজেলাই গঠন করা হয়েছে সরকারের বিদ্যমান ‘নতুন উপজেলা, থানা এবং তদন্ত কেন্দ্র স্থাপন সংক্রান্ত নীতিমালা’র শর্ত লঙ্ঘন করে। ওইদিন (২৬ জুলাই) এ সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘উপজেলা হতে যে মানদন্ড রয়েছে এগুলো তা পুরোপুরি পূরণ করে না। কিন্তু তিনটিই রিমোট এরিয়া। এ জন্য নিকার সম্মতি দিয়েছে। একই সঙ্গে নিকার নির্দেশনা দিয়েছে এরপর থেকে প্রয়োজনীয় মানদন্ড না থাকলে যেন প্রস্তাব না আনা হয়।’

স্থানীয় সূত্র জানায়, মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার বালিগ্রাম, কাজীবাকাই, নবগ্রাম, ডাসার ও গোপালপুর এই পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে ডাসার উপজেলা গঠন করা হয়। এর আয়তন ৭৬ দশমিক ৮ বর্গকিলোমিটার। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী জনসংখ্যা ৭১ হাজার ৪৯৪। সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের এলাকা ডাসার। কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাঁও ইসলামপুর, ইসলামাবাদ, জালালাবাদ ও পোকখালী এই পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে ঈদগাঁও নতুন উপজেলা হিসেবে অনুমোদন পায়। বর্তমানে লোকসংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার। স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হেলালুদ্দীন আহমেদ ঈদগাঁও এলাকার সন্তান। এ ছাড়া সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলার মধ্যনগর, চামরদানী, বংশীকুন্ডা উত্তর ও বংশীকুন্ডা দক্ষিণ এই চারটি ইউনিয়ন নিয়ে মধ্যনগর উপজেলা গঠিত হয়। এর আয়তন ২২১ বর্গ কিলোমিটার। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী জনসংখ্যা রয়েছে ৯২ হাজার ৭৪৫ জন। অর্থাৎ নবগঠিত এ তিনটি উপজেলা গঠনের ক্ষেত্রেই বিদ্যমান নীতিমালার শর্তপূরণ হয়নি।

এ ধরনের আর কোনো নতুন উপজেলার প্রস্তাব যেন নিকারে পাঠানো না হয়, সে জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে গত ২২ আগস্ট স্থানীয় সরকার বিভাগে চিঠি পাঠানো হয়। এতে বলা হয়, নিকারের ১১৭তম বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ‘নতুন উপজেলা ও থানা স্থাপন সংক্রান্ত নীতিমালায় বর্ণিত শর্তাবলি পূরণ না হলে ভবিষ্যতে কোনো উপজেলা স্থাপনের প্রস্তাব যেন উপস্থাপন না করা হয়। সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে’ অনুশাসন দেন। প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের অনুরোধ করা হয় চিঠিতে। এরপর গত ২৯ আগস্ট সব জেলার ডিসিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠি দেয় স্থানীয় সরকার বিভাগ। চিঠিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর উক্ত অনুশাসন যথাযথভাবে অনুসরণ করে নতুন উপজেলা গঠনের প্রস্তাব পাঠানোর অনুরোধ করা হলো।

জানা গেছে, প্রশাসনিক কোনো ইউনিট স্থাপন বা সংস্কারের জন্য দেশের সর্বোচ্চ ফোরাম হচ্ছে নিকার। সরকার গঠনের পরই সাধারণত সরকারপ্রধানের নেতৃত্বে নিকার গঠন করা হয়। স্থানীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থায় এই নিকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিভাগ, সিটি করপোরেশন, জেলা, উপজেলা, থানা, পুলিশ ফাঁড়ি এসব গঠন বা সংস্কারের জন্য এ কমিটির অনুমোদন বাধ্যতামূলক। শুধু প্রশাসনিক বিষয়ই নয়, স্থানীয় রাজনীতিতে এসব প্রশাসনিক ইউনিট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রাজনীতিবিদরা ভোটের মাঠে সুবিধা করার জন্য বেশির ভাগ সময় এসব নতুন প্রশাসনিক ইউনিট গঠন বা সীমানা সম্প্রসারণের জন্য প্রভাবশালী মন্ত্রী-সচিবদের কাছে তদবির করে বেড়ান। মাদারীপুরের ডাসার, সুনামগঞ্জের মধ্যনগর ও কক্সবাজারে ঈদগাঁও থানাকে উপজেলা করতে, সেসব এলাকার কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও সচিব দীর্ঘদিন ধরে নিকারের বৈঠক করে দ্রুত এসব গঠনে অনুমোদনের তাগিদ দিয়ে আসছিলেন। এসব কারণে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে সবগুলো প্রস্তাব নিকারে উপস্থাপনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়।

সর্বশেষ খবর