সোমবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
স্থায়ী কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত

নির্বাচন ও আন্দোলন পরিকল্পনা নিয়ে বসছে বিএনপি

কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের মতামত নেবে দলটি - হবে নির্বাহী কমিটির বৈঠক

মাহমুদ আজহার

নির্বাচন ও আন্দোলন পরিকল্পনা নিয়ে বসছে বিএনপি

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্র্বাচনকে সামনে রেখে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সঙ্গে বৈঠক করবে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। ভোটের পাশাপাশি আন্দোলনের রোডম্যাপ চূড়ান্ত করতে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের নেতাদের মতামত নিতে চায় দলটি।

১৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের ধারাবাহিক সভা অনুষ্ঠিত হবে। ভার্চুয়াল বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গত শনিবার সন্ধ্যায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। জানা যায়, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটিসহ সংশ্লিষ্টরা গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন কার্যালয়ে সশরীরে বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন। প্রতিদিন বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে এ বৈঠক শুরু হবে। আগামীকাল (মঙ্গলবার) প্রথম বৈঠকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্যরা অংশ নেবেন। এরপর বুধবার সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক, সম্পাদক ও সহ-সম্পাদকদের নিয়ে বসবে বিএনপি। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক হবে। পর্যায়ক্রমে দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গেও বিএনপির হাইকমান্ড বৈঠক করবে বলে জানা গেছে। 

এ ব্যাপারে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশন গঠন ইস্যুতে স্থায়ী সমাধান চাই। তবে এর আগে নিরপেক্ষ সরকার চাই যাদের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে। সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে এ সমাধান হতে হবে। এ জন্য দেশের গণতান্ত্রিক সব রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্ট নাগরিকদের মতামত নিতে হবে। কাজটি এমনভাবে করতে হবে যা সবার কাছেই গ্রহণযোগ্য হয়। বিগত দিনের মতো একতরফা হলে কেউ মেনে  নেবে না।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দলীয় ফোরামে আলোচনার পর আমরা নির্বাচন কমিশন গঠন ইস্যুতে আমাদের প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির কাছে দেব। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন যতক্ষণ পর্যন্ত না হবে আমাদের আন্দোলন চলবে। দেশের জনগণ এ সরকারের অধীনে কোনো গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে বলে মনে করে না।’ বিএনপির দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স জানান, ‘নির্বাহী কমিটির বৈঠক সাধারণ কমিটির সবার উপস্থিতিতে বড় পরিসরে হয়ে থাকে। কিন্তু বড় কোনো স্থান না পাওয়ায় গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে হোটেল লা  মেরিডিয়ানে ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি কারাবন্দী হওয়ার পর আর কোনো সভা ডাকা হয়নি।

স্থায়ী কমিটির বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যে প্রস্তুতির কথা বলেছেন, তা নিয়ে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। নেতাদের প্রশ্ন, সরকারের  মেয়াদ এখনো দুই বছরের বেশি সময় বাকি। এত আগে সাধারণত ক্ষমতাসীনদের দিক থেকে নির্বাচনের কথা বলা হয় না। কেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এত আগেই নির্বাচনের কথা বলছেন, বিষয়টি ভাবতে হবে। এই অবস্থায় আগামী বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এরই মধ্যে নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে। সরকার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে চলতি বছরে প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে। এটা নিয়ে বিএনপিকে ব্যস্ত করা হতে পারে।

বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সব নেতাই একমত হন, দেশে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হলে একটি নিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ও ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন প্রমাণ করে বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় রেখে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। এই অবস্থায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন ও বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে করণীয় ঠিক করতে হবে। সেজন্য দলের সবার মতামত নিতে হবে। স্থায়ী কমিটির নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাহী কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্টজনদের মতামতও নেওয়া হবে। এ নিয়ে বিএনপি দলীয়ভাবে একটি প্রস্তাবনাও তুলে ধরবে। পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি সময় দিলে তার সঙ্গেও বৈঠক করতে চায় দলটি। সেখানেও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ও নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে বিএনপির দাবিগুলো পুস্তক আকারে তুলে ধরা হবে।

প্রত্যাহার হচ্ছে ১২ ছাত্রদল নেতার বহিষ্কারাদেশ : স্থায়ী কমিটির বৈঠকে চলমান পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে ১২ ছাত্রদল নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারেরও সিদ্ধান্ত হয়েছে। দলীয় শৃঙ্খলা বহির্ভূত কর্মকান্ডে জড়িত থাকার সুষ্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ১২ জন সদস্যকে প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। সেই ১২ ছাত্রনেতা হলেন- বাশার সিদ্দিকি, জহির উদ্দিন তুহিন, এজমল হোসেন পাইলট, ইকতিয়ার কবির, মামুন বিল্লাহ, আসাদুজ্জামান আসাদ, বায়েজিদ আরেফিন, দবির উদ্দিন তুষার, গোলাম আজম সৈকত, আবদুল মালেক ও আজীম পাটোয়ারী।

সর্বশেষ খবর