বুধবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

৪৬০ কোটি টাকার মালিক শ্রমিক নুরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

৪৬০ কোটি টাকার মালিক শ্রমিক নুরুল

টেকনাফ স্থলবন্দরে চুক্তিভিত্তিক কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে চাকরি নিয়ে দালাল সিন্ডিকেটের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন নুরুল ইসলাম। তাদের কাছ থেকে কৌশল রপ্ত করে একপর্যায়ে নিজেই গড়ে তোলেন ১০-১৫ সদস্যের দালাল সিন্ডিকেট। দালালি, পণ্য খালাস, বৈধ পণ্যের আড়ালে অবৈধ মালামাল এনে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনে যান নুরুল। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে মালিক হয়ে যান ৪৬০ কোটি টাকার। সাভার, টেকনাফ, সেন্টমার্টিন, ভোলাসহ বিভিন্ন জায়গায় নামে-বেনামে গড়ে তোলেন অঢেল সম্পদ-সম্পত্তি। সাভারে পার্ক ও বন্দরে জাহাজ কেনার পরিকল্পনাও করেছিলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।  সোমবার রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে নুরুলকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৩ এর সদস্যরা। তার কাছ থেকে ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৫০০ জাল টাকা, ৩ লাখ ৮০ হাজার মিয়ানমারের মুদ্রা, ৪ হাজার ৪০০ পিস ইয়াবা ও ২ লাখ ১ হাজার ১৬০ টাকা জব্দ করা হয়। র‌্যাব বলছে, ইয়াবা কেনাবেচা ও জাল টাকার কারবারের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন নুরুল। গড়ে তুলেছিলেন নামে-বেনামে একাধিক প্রতিষ্ঠানও।

গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ২০০১ সালে টেকনাফ স্থলবন্দরে দৈনিক চুক্তিভিত্তিক ১৩০ টাকায় কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি নিয়েছিলেন ভোলা সদরের পশ্চিম কানাই নগরের মো. আবদুল মোতালেবের ছেলে নুরুল ইসলাম। বন্দরে কর্মরত থাকার সময়ে নিজের অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে চোরাকারবারি, শুল্ক ফাঁকি, অবৈধ পণ্য খালাস, দালালি ইত্যাদির কৌশল রপ্ত করেন। একই সঙ্গে দালালির বিভিন্ন সিন্ডিকেটে যুক্ত হন। পরে নিজেই সেই সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করেন। ২০০৯ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে আস্থাভাজন একজনকে একই পদে নিয়োগের ব্যবস্থা করেন। চাকরি ছেড়ে দিলেও দালালি সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ নিজের কাছে রেখে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিতে থাকেন। অল্প দিনের মধ্যে নুরুল টেকনাফ বন্দরকেন্দ্রিক দালাল সিন্ডিকেটগুলোর প্রধান হয়ে যান। তার সিন্ডিকেটে ১০-১৫ জন সদস্য রয়েছে। যারা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে দালালি কার্যক্রমগুলো করে থাকে। এই সিন্ডিকেটটি পণ্য খালাস, পরিবহন সিরিয়াল নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি পথে অবৈধ মালামাল খালাসে সক্রিয় ছিল। সিন্ডিকেটের সহায়তায় পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে কাঠ, শুঁটকি, বরইয়ের আচার, মাছ ইত্যাদির আড়ালে অবৈধ পণ্য নিয়ে আসত। চক্রটির সদস্যরা টেকনাফ বন্দর, ট্রাক স্ট্যান্ড, বন্দর লেবার ও জাহাজের আগমন-বহির্গমন নিয়ন্ত্রণ করত। অবৈধ পণ্যের কারবারের জন্য হুন্ডি সিন্ডিকেটের সঙ্গে সমন্বয় এবং চতুরতার সঙ্গে আন্ডার ও ওভার ইনভয়েস কারসাজি করত নুরুল ইসলাম। অবৈধ আয়ের উৎসকে ধামাচাপা দিতে সে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছিল। যার মধ্যে এমএস আল নাহিয়ান এন্টারপ্রাইজ, এমএস মিফতাউল এন্টারপ্রাইজ, এমএস আলকা এন্টারপ্রাইজ, আলকা রিয়েল স্টেট লিমিটেড এবং এমএস কানিজ এন্টারপ্রাইজ অন্যতম। ইতিমধ্যে ঢাকায় ৬টি বাড়ি ও ১৩টি প্লট কিনেছেন নুরুল। এছাড়াও সাভার, টেকনাফ, সেন্টমার্টিন, ভোলাসহ বিভিন্ন জায়গায় নামে-বেনামে সর্বমোট ৩৭টি জায়গা, প্লট, বাগানবাড়ি ও বাড়ি রয়েছে তার। তার অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদের আনুমানিক মূল্য ৪৬০ কোটি টাকা। তার নামে-বেনামে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ১৯টি ব্যাংক একাউন্ট রয়েছে। বর্তমানে সে সাভারে পার্ক ও বন্দরে জাহাজ কেনার পরিকল্পনা করেছিলেন বলে র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন। নুরুলের সঙ্গে কারবারিদের ইয়াবা বেচাকেনার তথ্যও আমরা পেয়েছি। তার ঢাকার বাসা থেকে ইয়াবাও জব্দ করা হয়েছে। কক্সবাজার ও টেকনাফ কেন্দ্রিক মাদক কারবারিদের সঙ্গে তার সখ্যতা রয়েছে।

আমদানি-রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও তার ছিল সখ্যতা। কম্পিউটার অপারেটরের পদে থাকার সময় আমদানি-রপ্তানিকারক দুটি বেনামি প্রতিষ্ঠানে কাজ করে বিপুল অর্থ হাতিয়েছে। সরকার দলীয় কোনো পদ-পদবি না থাকলেও সখ্যতার ভিত্তিতে দালালির কাজ করত সে। নুরুল ইসলাম টেকনাফ বন্দরকেন্দ্রিক দালালি সিন্ডিকেটের অন্যতম মূলহোতা। পার্শ্ববর্তী দেশকেন্দ্রিক বাণিজ্য করার সুবাদে সে দেশের দালালদের সঙ্গেও তার বেশ যোগাযোগ ছিল।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর