বুধবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ধর্ষিতার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলার ধারা বাতিল হচ্ছে

♦ সংশোধন হচ্ছে দেড় শ বছরের পুরনো সাক্ষ্য আইন ♦ বাধা কাটবে ভার্চুয়াল বিচারেও

আরাফাত মুন্না

ধর্ষণ মামলার বিচারে ধর্ষিতার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ থাকা সাক্ষ্য আইনের সেই বিতর্কিত ১৫৫(৪) ধারা বাতিল হচ্ছে। ধর্ষণের শিকার নারীর জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিতে অনেক দিন ধরেই দেড় শ বছর আগে ১৮৭২ সালে করা এ আইনের সংশ্লিষ্ট ধারাটি বাতিলের দাবি আসছিল বিভিন্ন মহল থেকে। যুগোপযোগী করে   বাংলা ভাষায় তৈরি করা খসড়া আইনটি পাস হলে ভার্চুয়াল মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ বিচারকাজ পরিচালনার বাধাও কাটবে। আইন মন্ত্রণালয় সূত্র বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে। সূত্রটি জানায়, ইতিমধ্যে সংশোধিত আইনের খসড়া তৈরি হয়েছে। বিতর্কিত ১৫৫(৪) ধারা বাতিলের পাশাপাশি ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনা-সংক্রান্ত অনেক ধারা নতুন সাক্ষ্য আইনে থাকবে, যা পুরনো আইনে ছিল না। এর মাধ্যমে আসামি বা সাক্ষীকে আদালতে সশরীরে হাজির না করে শুধু ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে সাক্ষ্য গ্রহণ বা জেরা করার সুযোগ থাকবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সাক্ষ্য আইনের ১৫৫(৪) ধারা বাতিলে জনগণের দাবি আছে। এ ধারায় ধর্ষণের ঘটনায় ভিকটিমকে তার চরিত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করার সুযোগ রয়েছে। এ উপধারাটি আমরা ডিলিট করার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি। সংশোধিত আইনে এটি থাকবে না।’ ‘ধর্ষণের শিকার নারীকে তার চরিত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা যাবে না। দুশ্চরিত্র হলেই যে ধর্ষণ করা যাবে, এ বিষয়টি আমরা অনুমোদন দিতে পারি না’- বলেন মন্ত্রী। ভার্চুয়াল আদালতে পূর্ণাঙ্গ বিচার কার্যক্রম পরিচালনায় বর্তমানে সাক্ষ্য আইনই বাধা হয়ে আছে উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের একটি সাক্ষ্য আইন আছে, আর সেখানে স্পষ্টভাবে বলা আছে কীভাবে সাক্ষ্য দিলে তা গ্রহণযোগ্য হবে। ফলে আসামিকে কারাগার থেকে বা সাক্ষীকে আদালতে উপস্থাপন না করে সাক্ষ্য গ্রহণ বা জেরা করার সুযোগ ১৮৭২ সালে করা আইনে ছিল না। তাই আমরা সাক্ষ্য আইনটা যুগোপযোগী করে সংশোধন করছি।’ আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমি চেয়েছিলাম চলতি অধিবেশনেই সাক্ষ্য আইনটা তুলতে। তবে করোনাকালীন সংসদে একই সময়ে সব সংসদ সদস্য থাকতে পারেন না। তবে শিগগিরই সংশোধনী প্রস্তাব সংসদে তোলা হবে।’ এই সময়ের মধ্যে অংশীজনদের সঙ্গে খসড়া নিয়ে আলোচনা করবেন বলেও জানান আইনমন্ত্রী।

জানা গেছে, ভারতীয় উপমহাদেশের আদালতে আইন পরিচালনার জন্য সর্বপ্রথম ১৮৫০ সালে স্যার হেনরি সামার মেইন একটি সাক্ষ্য আইনের খসড়া বিল তৈরি করেন, যা পরে এ উপমহাদেশে ব্যবহারের অনুপযোগী বলে প্রতীয়মান হয়। পরে ১৮৭১ সালে স্যার জেমস ফিটজজেমস ফিস্টফেন নতুন করে একটি খসড়া প্রস্তুত করেন, যা কার্যকর হয় ১৮৭২ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে। মূলত সে খসড়া আইনই গুটিকয় সংশোধনীসহ এখনো ব্যবহার করা হচ্ছে বিচারকাজে।

যা আছে সাক্ষ্য আইনে : সাক্ষ্য আইন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দেশের বিধিবদ্ধ আইন দ্বারা পরিচালিত ট্রাইব্যুনাল ও আদালতে বিচার পরিচালনায় কীভাবে একজন সাক্ষীর কাছ থেকে সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে অথবা কোন পদ্ধতিতে গ্রহণ করা হবে। কোনটি সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণীয়, কোনটি গ্রহণীয় নয় এসব বিষয় উল্লেখ রয়েছে এ আইনে। তিনটি অংশে বিভক্ত ১৬৭টি ধারা-সংবলিত এ আইনে মূলত দুই ধরনের এভিডেন্সের (সাক্ষ্যের) কথা আছে। প্রথমত মৌখিক এবং দ্বিতীয়ত ডকুমেন্টারি।

বিতর্কিত ১৫৫(৪) ধারা : ব্রিটিশ আমলে প্রণীত সাক্ষ্য আইনের ১৫৫(৪) ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি যখন বলাৎকার বা শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগে ফৌজদারি মামলার মুখোমুখি হন, তখন দেখানো যেতে পারে যে, অভিযোগকারিণী সাধারণভাবে দুশ্চরিত্র নারী।’

ভার্চুয়াল বিচারের প্রতিবন্ধকতা : আইনটি পর্যালোচনায় দেখা যায়, আইনের ধারা ৩-এ ডকুমেন্ট হিসেবে পাঁচটি উদাহরণ দেওয়া আছে। এতে ডকুমেন্ট বলতে কোনো পদার্থের ওপর অক্ষর, অঙ্কন বা চিহ্নের সাহায্যে কিংবা উক্ত পক্ষের একাধিক পন্থায় প্রকাশিত বা বর্ণিত কোনো বিষয়, লিখিত যে কোনো জিনিস, মুদ্রিত, লিথোগ্রাফকৃত, ফটোগ্রাফকৃত সব শব্দই ডকুমেন্ট বা দলিল। কিন্তু এ আইনে ডিজিটাল ক্যামেরা, মোবাইলে ধারণ করা অডিও বা ভিডিও কিংবা অডিও ভিজুয়াল রেকর্ডের কোনো বিষয় উল্লেখ নেই। আইনে উল্লেখ না থাকায় বর্তমানে ডিজিটাল সাক্ষ্যের কোনো মূল্য নেই।

সর্বশেষ খবর