রবিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

মঞ্চ ছেড়ে পালালেন প্রজন্ম লীগ নেতারা

নিজস্ব প্রতিবেদক

গুলিস্তানের ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিশাল শামিয়ানা টাঙানো হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে বিশাল মঞ্চ। মঞ্চের সামনে নানা রঙের চেয়ার সাজানো। একটু আগে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে শোভাযাত্রা করা হয়েছে প্রেস ক্লাব, পল্টন, গুলিস্তান এলাকায়। এসবের আয়োজক ‘রাজনৈতিক দোকানখ্যাত’ আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ। সংগঠনের ১৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ছিল গতকাল। এ উপলক্ষেই এত আয়োজন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায়, সকাল সাড়ে ১০টা। সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অপেক্ষা করছেন আলোচনা পর্ব শুরু করার। কিন্তু ভুঁইফোড় এই সংগঠনের নেতাদের অধীর অপেক্ষায় গুড়েবালি দিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। দলের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের পরিষ্কার নির্দেশ দিয়েছেন ভুঁইফোড় কোনো সংগঠনের কার্যক্রম দলীয় কার্যালয়ের আশপাশে করা যাবে না। এমনকি ‘লীগ’ শব্দ ব্যবহার করাও যাবে না। দলের শীর্ষ নেতার হুঁশিয়ারিতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে মঞ্চ ছেড়ে সটকে পড়লেন  প্রজন্ম লীগের নেতারা। জানা যায়, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সম্পাদকমন্ডলীর নির্ধারিত সভা ছিল গতকাল। দলীয় কার্যালয়ের সামনে আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের বিশাল মঞ্চ দেখে বিস্মিত হন কেন্দ্রীয় নেতারা। বিরক্ত হয়ে ব্যবস্থা নিতে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এ সময় ওবায়দুল কাদের দলের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াকে নির্দেশ দেন দ্রুত সময়ের মধ্যে ওই ভুঁইফোড় সংগঠনের মঞ্চ সরিয়ে নিয়ে স্থান খালি করতে। বিপ্লব বড়ুয়া সঙ্গে সঙ্গে প্যান্ডেল সরানোর নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাড়া ভুঁইফোড় সংগঠন এখানে অনুষ্ঠান করতে পারবে না। মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ আমাদের অনুমোদিত কোনো সংগঠন নয়। মঞ্চ এখনই সরাতে হবে। না হলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’ এ সময় আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খান, কার্যনির্বাহী সদস্য সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের দফতর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। এরপর মঞ্চ ছেড়ে সংগঠনের নেতারা দ্রুত চলে যান। আর কর্মীরা মঞ্চ সরিয়ে নিতে শুরু করেন। সম্পাদকমন্ডলীর সভা শুরুর সময় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে কিছুক্ষণ আগে খবর পেলাম এক ভুঁইফোড় দোকান, প্রতিষ্ঠালগ্নের কী আয়োজন করেছে আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ। মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মের ব্যাপারে আমাদের কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু ‘লীগ’ আর ‘আওয়ামী’ যখন যুক্ত হয় তখন এখানে আমাদের সংশ্লিষ্টতা এসে যায়। এখানে আমাদের ভাবমূর্তির বিষয়টা এসে যায়, কারণ এসব দোকান অনেকে খুলে থাকে চাঁদাবাজির জন্য, এগুলো আসলে চাঁদাবাজির প্রতিষ্ঠান। সবাই করে তা নয়, কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান আছে, এরা চাঁদাবাজিনির্ভর। এরা দলের নাম ভাঙায়। কাজেই এসব সংগঠনের কোনো প্রকার আয়োজনে, বৈঠকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী হোক যেটাই হোক, আমি আমাদের কেন্দ্রীয় নেতাদের আহ্‌বান জানাব, আপনারা কোনো অবস্থাতেই এসব সংগঠনের সভায় উপস্থিত থাকবেন না।’

বৈঠক সূত্র জানায়, সভায় ভুঁইফোড় সংগঠন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। কোনো কেন্দ্রীয় নেতা যেন এসব সংগঠনের অনুষ্ঠানে না যান সে জন্য কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে কোনো মন্ত্রীও যেন এসব অনুষ্ঠানে না যান সে জন্য তাদের বলা হবে। আওয়ামী লীগের অনুমোদনের বাইরে ভুঁইফোড় সংগঠনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অ্যাকশন শুরু হলো। এর আগে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হলেও কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি।

বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চলমান : আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর সভায় বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনা হয়। তাদের সাধারণ ক্ষমা করা হলেও দলীয় পদ-পদবিতে না রাখার পক্ষে সম্পাদকমন্ডলীর সদস্যরা একমত পোষণ করেন। বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে বিদ্রোহীদের সাধারণ ক্ষমার প্রসঙ্গটি আনেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ। এ সময় দলের আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাসসহ অন্যরা বক্তব্য রাখেন। এ সময় বিদ্রোহী উপজেলা চেয়ারম্যানকে মদদ দেওয়া এবং ওই চেয়ারম্যানের পক্ষে মন্ত্রিসভার একজন সিনিয়র মন্ত্রীর মিছিলে অংশ নেওয়ার প্রসঙ্গটি উঠে আসে। এ সময় নেতারা মত দেন, বিদ্রোহীরা সরাসরি এমপি-মন্ত্রীদের দোষারোপ করছেন। বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে তাহলে কেন তাদের মদদদাতা এমপি-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না?

শেখ হাসিনার জন্মদিনে বর্ণাঢ্য আয়োজন : আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর। এ বছর আওয়ামী লীগের ৪০ বছর সভানেত্রীর দায়িত্ব পালনের বছর। দিনটিকে জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালন করার উদ্যোগ নিয়েছে আওয়ামী লীগ। সারা দেশে দোয়া মাহফিল, আলোচনা সভা, কেক কাটা, আনন্দ র‌্যালি করবে আওয়ামী লীগ। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয়ভাবে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আয়োজন করা হবে। একই সঙ্গে থাকছে তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদের সম্পাদনায় বিশেষ প্রকাশনা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর