সোমবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

খালেদার দন্ড স্থগিত আরও ছয় মাস, যেতে পারবেন না বিদেশ

বিশেষ প্রতিনিধি

কারাদন্ডপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দন্ড স্থগিতের মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য মুক্তির মেয়াদ বাড়াতে পরিবারের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আগের সব শর্ত বহাল রেখে চতুর্থবারের মতো সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানো হয়।

গতকাল সচিবালয় থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আগের শর্তে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। এর আগে ১৫ মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে খালেদা জিয়ার কারাভোগের মেয়াদ ছয় মাস স্থগিত করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর সেই মেয়াদ শেষ হচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া শর্ত সাপেক্ষে যে জামিন পেয়েছেন এবং চিকিৎসা করাচ্ছেন সেই সময় বৃদ্ধির জন্য তার পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়। সে আবেদন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর অনুমোদন দিয়েছি। একই শর্তে চতুর্থবারের মতো সাজা স্থগিতের মেয়াদ আগের সব শর্ত বহাল রেখে ছয় মাসের জন্য বাড়ানো হয়েছে। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ছয় মাস গণনা করা হবে। খালেদা জিয়াকে তার নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য প্রথমে ছয় মাস সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। সে সুবিধা আবারও চতুর্থবারের মতো দেওয়া হলো। তিনি (খালেদা জিয়া) নিজ বাসায় থেকে যেভাবে চিকিৎসা নিতে চান সেভাবে চিকিৎসা নেবেন। তবে তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না। পাশাপাশি অন্যান্য শর্ত বহাল থাকবে। স্থায়ী মুক্তির দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, তাহলে তাদের আদালতে যেতে হবে। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের পক্ষে যে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব, সেটা আমরা নিয়েছি। আর বাদবাকি যেগুলো আছে তার জন্য আদালতে যেতে হবে। এর আগে চলতি মাসের প্রথমে খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর এ আবেদন করেন। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মতামতের জন্য আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। উল্লেখ্য, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদন্ড দেয় পুরান ঢাকার বকশীবাজার আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ আদালত। রায় ঘোষণার পর খালেদা জিয়াকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী রাখা হয়। এরপর ৩০ অক্টোবর এ মামলায় আপিলে তার আরও ৫ বছরের সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করে হাই কোর্ট। একই বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে ৭ বছরের সশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দেয় একই আদালত। রায়ে ৭ বছরের কারাদন্ড ছাড়াও খালেদা জিয়াকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদন্ডের আদেশ দেয় আদালত। কারান্তরিন অবস্থায়ই চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে নেওয়া হয় খালেদা জিয়াকে। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা শেষে তাকে আবারও কারাগারে পাঠানো হয়। এভাবে কয়েক দফায় তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে এবং হাসপাতাল থেকে কারাগারে নেওয়া হয়। এর মধ্যে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে বিএনপি নেতারা খালেদা জিয়ার মুক্তির জোর দাবি তোলেন। পরিবারের পক্ষ থেকেও খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয়। সেই প্রেক্ষাপটে সরকারের নির্বাহী আদেশে দন্ড স্থগিত করে কারাবন্দী খালেদা জিয়াকে দুই বছর পর গত বছরের ২৫ মার্চ শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দেওয়া হয়। এরপর থেকে গুলশানের ভাড়া বাসা ফিরোজায় আছেন খালেদা জিয়া। তার নানা ধরনের শারীরিক জটিলতা রয়েছে। এর মধ্যে এপ্রিলে তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। হাসপাতালে চিকিৎসাও নেন তিনি। আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর তার দন্ড স্থগিতের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ইতিমধ্যে দন্ড স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানোর বিষয়ে মতামত দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর