বুধবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
বিশ্বের সব স্থানে ভ্যাকসিন নিশ্চিত সময়ের দাবি- শেখ হাসিনা

এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কার পেলেন প্রধানমন্ত্রী

জাতিসংঘ সদর দফতরে বঙ্গবন্ধু স্মরণে বৃক্ষরোপণ

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কার পেলেন প্রধানমন্ত্রী

নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সল্যুশন্স নেটওয়ার্ক আয়োজিত সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘এসডিজি অগ্রগতি’ পুরস্কার দেওয়া হয় -পিআইডি

জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জনের পথে বাংলাদেশের সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে ‘এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কার’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিউইয়র্কে টেকসই উন্নয়নবিষয়ক নবম বার্ষিক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর হাতে এ সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়। এ পুরস্কার বাংলাদেশের জনগণকে উৎসর্গ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের নেতা এ সময় টেকসই উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দিয়ে কভিড-১৯ পরিস্থিতি থেকে স্থায়ীভাবে উত্তরণের লক্ষ্যে একটি বৈশ্বিক    রোডম্যাপ তৈরির আহ্‌বান জানান। তিনি পাঁচ দফা প্রস্তাব রেখে বলেন, এসডিজি অর্জন নিশ্চিত করতে যথাযথভাবে বৈশ্বিক কভিড-১৯ মহামারী মোকাবিলা করা প্রয়োজন। এখন বিশ্বের সব স্থানে ভ্যাকসিন নিশ্চিত করা সময়ের দাবি এবং তা অতি জরুরি।

ইউএন সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশন্স নেটওয়ার্ক (এসডিএসএন), গ্লোবাল মাস্টার্স অব ডেভেলপমেন্ট প্র্যাকটিস, আর্থ ইনস্টিটিউট ও কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে সোমবার এ ভার্চুয়াল সম্মেলনের আয়োজন করে। সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশন্স নেটওয়ার্কের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক জেফরি ডি. স্যাক্স সম্মেলনে তাঁর বক্তব্যে মহামারীর মধ্যেও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অগ্রগতি ধরে রাখায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পরিচয় করিয়ে দিতে গিয়ে তাঁকে ‘জুয়েল ইন দ্য ক্রাউন অব দ্য ডে’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। সম্মেলনে মহামারীর বাধা কাটিয়ে এসডিজি অর্জনে বৈশ্বিক ‘রোডম্যাপ’ চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জাতিসংঘ সদর দফতরে বঙ্গবন্ধু স্মরণে বৃক্ষরোপণ : সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনকর্মের আলোকে বিশ্ব সংস্থাও অনাগত ভবিষ্যতে শোষিত-বঞ্চিত আর ক্ষুধার্ত মানুষের কল্যাণে নিরন্তরভাবে কাজ করবে। সে প্রত্যাশায় সোমবার সকালে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরের উত্তর লনের বাগানে একটি বৃক্ষ রোপণ করলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোপিত বৃক্ষের কাছেই উৎসর্গ করা হলো একটি বেঞ্চ। যেখানে ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত মানবতাবাদীরা দুই দন্ড বসে স্বস্তির নিঃশ্বাস নেবেন।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বৃক্ষরোপণের বিশেষ এ কর্মসূচির সময় আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ বৃক্ষটা শতবর্ষের ওপর টিকে থাকবে এবং শান্তির বারতাই বয়ে বেড়াবে।’ বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, জাতির পিতা সব সময় শান্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন। দরিদ্র মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্যই ছিল তাঁর এ সংগ্রাম। সেখানে বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষের কথা যেমন তিনি ভেবেছেন, তেমনিভাবে সারা বিশে^র ক্ষুধা ও দারিদ্র জর্জরিত, শোষিত-বঞ্চিত মানুষের কথাও বলেছেন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে তাঁর দরাজ কণ্ঠে বাংলায় বক্তব্য উচ্চারণের সময়ও জাতির জনক বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন- সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। এটাই ছিল বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য। শান্তির জন্যই তিনি সংগ্রাম করেছেন। আর শান্তি ছাড়া কখনো কোনো দেশের উন্নতি হয় না। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এ মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমসহ পদস্থ কর্মকর্তারা।

এখন সারা বিশ্বে ভ্যাকসিন নিশ্চিত করা সময়ের দাবি : টেকসই উন্নয়নের ওপর নবম বার্ষিক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কভিড-১৯ পরিস্থিতি থেকে স্থায়ীভাবে উত্তরণ নিশ্চিত করে ২০৩০ সাল নাগাদ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের জন্য একটি বৈশ্বিক রোডম্যাপের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে ফিরে যাওয়ার জন্য একটি সাহসী ও উচ্চাভিলাষী বৈশ্বিক রোডম্যাপ প্রণয়ন করা প্রয়োজন, যাতে কেউ পেছনে পড়ে না থাকে।’

শেখ হাসিনা তাঁর বক্তব্যে পাঁচ দফা প্রস্তাব রেখেছেন, যাতে এসডিজি অর্জন নিশ্চিত করতে যথাযথভাবে বৈশ্বিক কভিড-১৯ মহামারী মোকাবিলা করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘এ বৈশ্বিক মহামারী থেকে টেকসই উত্তরণের ওপরই এখন এসডিজির সাফল্য নির্ভর করছে। এখন বিশ্বের সব স্থানে ভ্যাকসিন নিশ্চিত করা সময়ের দাবি এবং তা অতি জরুরি।’ তিনি তাঁর দ্বিতীয় প্রস্তাবে বলেন, ‘২০৩০ এজেন্ডা বাস্তবায়নে আমাদের সম্পদের যে বিশাল ব্যবধান রয়েছে তা অবশ্যই কমাতে হবে।’

তৃতীয় প্রস্তাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘চলমান বৈশ্বিক মহামারীর অভিঘাতের কারণে ১৯৯৮ সালের পর এই প্রথমবারের মতো বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য বৃদ্ধি পাচ্ছে তার জন্য আমরা উদ্বিগ্ন।’ তিনি আরও বলেন, ‘অধিকন্তু আমাদের পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সামাজিক সুরক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনীর ওপর অধিক গুরুত্ব দিতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী তাঁর চতুর্থ প্রস্তাবে বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি যে কভিড-১৯ পরিস্থিতি থেকে পুনরুদ্ধার পদক্ষেপগুলো ভবিষ্যতে যে কোনো ধরনের বিপর্যয় বা দুর্যোগ মোকাবিলায় জোরালো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণকে পূর্ণতা দেবে।’

সর্বশেষ প্রস্তাবে বাংলাদেশের নেতা বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নে অবশ্যই পর্যবেক্ষণ জোরদার করা ও যান্ত্রিক সহায়তার ওপর আরও গুরুত্ব দিতে হবে। এ ব্যাপারে জাতিসংঘের সমন্বয় বাড়ানো উচিত।

জরুরি পরিস্থিতি ও বিপর্যয় মোকাবিলায় যথাযথ ও সময়োপযোগী সহায়তা পদক্ষেপ নিশ্চিত করার ওপরও তিনি গুরুত্বারোপ করেন। প্রধানমন্ত্রী মহামারী ও অন্যান্য জরুরি পরিস্থিতির জন্য প্রতিটি স্তরে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রস্তুতি বৃদ্ধির পরামর্শ দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কভিড-১৯ বিশ্বকে হতাশ করেছে। এ বৈশ্বিক প্রাণঘাতী মহামারী বহু মানুষের জীবন কেড়ে নেওয়ার পাশাপাশি এর কারণে অসংখ্য মানুষ তাদের জীবিকা হারিয়েছে। মহামারীর কারণে বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মানুষ দরিদ্র হয়ে পড়েছে ও ক্ষুধার্ত রয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, মহামারীর কারণে শিক্ষার ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে, বিশেষত শিশুদের শিক্ষা। বাংলাদেশের মতো জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি এ মহামারীতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এর ফলে আমাদের উন্নয়নের অর্জন ও এসডিজির অগ্রগতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’

এ ব্যাপারে বাংলাদেশের প্রস্তুতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনে অ্যাডাপটেশন ও মিটিগেশন প্রচেষ্টায় পথিকৃৎ। আমরা সম্প্রতি একটি উচ্চাভিলাষী ও আধুনিক এসডিজি পেশ করেছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সবুজ উন্নয়নের মাধ্যমে সমৃদ্ধি অর্জন, লবণাক্তসহিষ্ণুতা ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে প্রাধান্য দিয়ে ‘মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যান’ গ্রহণ করেছি।’

ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশিত সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট ২০২১-এর বরাত দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০১৫ সাল থেকে এসডিজি সূচকে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি লাভ করেছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বে প্রথম পাঁচটি দ্রুততম অর্থনৈতিক অগ্রগতির দেশের মধ্যে অন্যতম এবং জিডিপিতে বাংলাদেশের অবস্থান ৪১তম। তিনি আরও উল্লেখ করেন, জাতিসংঘ এ বছর বাংলাদেশকে এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের স্বীকৃতি দিয়েছে।

সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে যোগদান : গতকাল স্থানীয় সময় সকালে (বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যায়) জাতিসংঘের ৭৬তম সাধারণ পরিষদ অধিবেশনের উচ্চ পর্যায়ের আলোচনায় যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ২৪ সেপ্টেম্বর ভাষণ দেবেন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর