বৃহস্পতিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
চার মন্ত্রীর বৈঠক

ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকের দায় নেবে না সরকার

ই-কমার্সে হবে নতুন আইন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর শৃঙ্খলার জন্য গতকাল সচিবালয়ে গুরুত্বপূর্ণ চার মন্ত্রীর বৈঠকে যে বিষয়টি উঠে এসেছে, সেটি হলো- এরই মধ্যে যেসব গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন- সরকার তাদের দায় নেবে না। তবে নতুন করে এ খাতের গ্রাহক যাতে আর ক্ষতির মুখে না পড়েন, সেজন্য নতুন আইন ও একটি পৃথক ই-কমার্স নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতারণার সঙ্গে জড়িত কোম্পানিগুলোর মালিকদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য মানি লন্ডারিং আইন ও ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন সংশোধনের সুপারিশ করা হয়েছে। ডেসটিনি, যুবকের মতো যেসব কোম্পানির সম্পদ রয়েছে, তাদের মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে কীভাবে গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধ করা যায়, সে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গতকাল বিকালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ডিজিটাল কমার্স বিষয়ক চার মন্ত্রীর বিশেষ সভায় এসব সুপারিশ ও মন্তব্য উঠে আসে। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সভাপতিত্বে সভায় অংশ নেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, তথ্য ও সম্প্র্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পুলিশের আইজি বেনজীর আহমেদসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি।

সভা শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, লোভের কারণে গ্রাহকরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। আপনি ৫টি কিনে লাভ করেছেন, এরপর আবার অপ্রয়োজনীয় ১০টি পণ্যের অর্ডার দিয়েছেন। এ টাকা সরকার নেয়নি। ফলে সরকার কোনো দায় নেবে না। গ্রাহকের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, প্রতারণা ঠেকাতে হলে আপনাকে লোভ সংবরণ করতে হবে।

মন্ত্রী বলেন, সরকারের কাজ ব্যবসায়ীদের সাহায্য করা। তারা যে মানুষকে লোভ দেখাচ্ছে, এটা কমার্স মিনিস্ট্রি দেখবে না। এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, সভায় ডেসটিনি, যুবকের দায় নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এসব কোম্পানির মালিকদের কেউ কেউ জেলে আছেন। তাদের কিছু সম্পদ আছে। বর্তমানে এসব সম্পদের ভ্যালুও বেড়েছে। আমরা তাদের কাছে পরিকল্পনা চাইব যে কীভাবে তারা এসব দায় মেটাবেন। ডেসটিনি, যুবক মালিকদের জেল থেকে বের করার ইঙ্গিত দিয়ে মন্ত্রী বলেন, সম্পদ বিক্রির জন্য জেল (প্রতারক কোম্পানির মালিকদের) থেকে বের করতে হবে। এ জন্য আইনি কী প্রক্রিয়া আছে সেটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেখবে।  ইভ্যালির মালিকও কি ছাড়া পাচ্ছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, যাদের সম্পদ নেই, তাদের ছেড়ে তো কোনো লাভ নেই। তারা যেন অন্তত জেলে থেকে শাস্তি ভোগ করে সেটা নিশ্চিত করতে দুটি আইন সংশোধন করা হবে। প্রতারকদের শাস্তি দিতে আমাদের প্রচলিত আইনে যে দুটি ধারা আছে ৪২০ ও ৪০৬-এ দুটি ধারা দুর্বল। এগুলো সংশোধন করা হবে।  মন্ত্রী জানান, ৪ জুলাই ডিজিটাল কমার্স নির্দেশিকা জারির আগ পর্যন্ত পণ্য সরবরাহের আগেই ৬ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে; কিন্তু নির্দেশিকা জারির পর লেনদেন হয়েছে মাত্র ৪০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০০ কোটি টাকা পণ্য সরবরাহের কারণে কোম্পানিগুলোর কাছে ছাড় হয়েছে। বাকিটা বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমে আটকে আছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যে কাজ করছে এটাই তার প্রমাণ। সভা শেষে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর শৃঙ্খলার জন্য গৃহীত সুপারিশগুলো তুলে ধরেন। এগুলো হলো- নতুন ডিজিটাল কমার্স আইন করা, ই-কমার্স নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ গঠন করা, ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকের অর্থ ফেরত দিতে এবং প্রতারক প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের কঠোর শাস্তি দিতে পুরনো দুটি আইন সংশোধন করা, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের জন্য ভোক্তা অধিকারের পাশাপাশি একটি  সেন্ট্রাল মনিটরিং সেল গঠন করা ও নতুন প্রতিষ্ঠানের জন্য ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন নম্বর গ্রহণ করা।  বাণিজ্য সচিব জানান, সভায় ই-কমার্স ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ করার সুপারিশ এসেছিল। আমরা বলেছি, লাখ লাখ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার জীবন-জীবিকা এর সঙ্গে জড়িত। ১০ থেকে ১২টি প্রতারক কোম্পানির জন্য পুরো ই-কমার্স বাণিজ্য বন্ধ করা যাবে না। তবে এগুলো সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য আমরা কিছু আইন ও কর্তৃপক্ষ গঠন করব। এ ছাড়া তাদের সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ে রাখা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর