বৃহস্পতিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

১০১ ইয়াবা কারবারির অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে গতি নেই

আত্মসমর্পণের পর মুক্তি পেয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বার হয়েছেন ১২ জন

আলাউদ্দিন আরিফ

আত্মসমর্পণ করা ১০১ ইয়াবা কারবারির অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে গতি নেই। ২০ মাসেও এসব ইয়াবা কারবারির বিরুদ্ধে একটি মামলাও দায়ের করতে পারেনি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আত্মসমর্পণকারীরা বিভিন্ন সময়ে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন,  এই ইয়াবা কারবারিদের কেউ কেউ আবার পুরনো কারবারে সম্পৃক্ত হয়েছেন। এদিকে গত ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে টেকনাফের ৪টি ইউনিয়নে প্রার্থী হয়েছেন আত্মসমর্পণকারী ৩২ জন। এদের মধ্যে একজন চেয়ারম্যান ও ১১ জন মেম্বার নির্বাচিত হয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ৩ নম্বর টেকনাফ সদর ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান হয়েছেন আত্মসর্পণ করা ইয়াবা কারবারি জিয়াউর রহমান জিহাদ।

জানা যায়, গত বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও তৎকালীন আইজিপির  কাছে আত্মসমর্পণ করেন  ১০২ ইয়াবা কারবারি। তাদের চারজনই টেকনাফের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির আপন ভাই। আত্মসমর্পণের সময় কারবারিরা সাড়ে ৩ লাখ পিস ইয়াবা ও ৩০টি আগ্নেয়াস্ত্র জমা দিয়েছিলেন। আত্মসমর্পণ করা কারবারিদের মধ্যে শাহপরীর দ্বীপ এলাকার মো. রাসেল পরে মারা যান এবং অন্যরা বিভিন্ন সময়ে জামিনে মুক্তি পান।  ইয়াবাসহ মাদক কারবারে সম্পৃক্ত হয়ে অঢেল সম্পদের মালিক হওয়ায় ১০২ জন কারবারির তালিকা দুদকে দিয়ে অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান করার অনুরোধ করে পুলিশ। ২০ মাসের বেশি সময় পার হলেও দুদক এসব কারবারির বিরুদ্ধে কোনো মামলা করতে পারেনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর উপ-পরিচালক মুহ. মাহবুবুল আলম বলেন, ‘পুলিশের পক্ষ থেকে ১০২ জনের তালিকা দেওয়া হয়েছে। তাদের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান চলছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে তালিকায় কিছু ব্যক্তি আছেন সম্পদশালী এবং কিছু ব্যক্তি দরিদ্র বা তেমন কোনো সম্পদ পাওয়া যায়নি। আমরা কাজ করছি। করোনার লকডাউনজনিত কারণসহ নানা কারণে অনুসন্ধানগুলো এখনো সম্পন্ন করা যায়নি। এর মধ্যে কিছু প্রতিবেদন প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। কতটি প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে এবং কতটি বাকি আছে সেটা নথি দেখে বলতে হবে।’

জানা গেছে, গত বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার জেলার টেকনাফের ১০২ জন ইয়াবা কারবারি আত্মসমর্পণ করেন। এর কয়েক দিন পর ৩ মার্চ কক্সবাজার জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে এসব মাদক কারবারির অবৈধভাবে অর্জিত স্থাবর/অস্থাবর সম্পত্তির অনুসন্ধানের জন্য ডিআইজি (ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট) বরাবর চিঠি পাঠানো হয়। পুলিশ সদর দফতর দুদক, সিআইডি ও এনবিআরকে চিঠি দেয়। দুদকের কাছে পাঠানো পুলিশের চিঠিতে বলা হয়, ‘আত্মসমর্পণ করা মাদক কারবারিদের নামে-বেনামে ও তাদের পরিবার এবং আত্মীয়-স্বজনের নামে থাকা সব স্থাবর/অস্থাবর সম্পত্তি যাচাইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে তথ্যাদি প্রেরণ করা হবে এবং তাদের অর্জিত সম্পত্তি যাচাই সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে মর্মে শর্তানুযায়ী তারা (ইয়াবা কারবারি) সম্মত হয়েছে। জনশ্রুতি রয়েছে, এসব মাদক কারবারি প্রচুর ধন-সম্পদের মালিক। মূলত মাদক ব্যবসার মাধ্যমে তারা এ ধন-সম্পদের মালিক হয়েছেন। তাই স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি যাচাই করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।’

মুক্তি পাওয়া ইয়াবা কারবারিদের কেউ কেউ আবার ইয়াবা কারবারে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছেন বলে স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘যেসব মাদক কারবারি জামিনে মুক্তি পায় তাদের আমরা পর্যবেক্ষণে রাখি। নতুন করে কেউ আবার মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত হলে বা অপরাধে জড়ানোর তথ্য পেলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা  নেব। এ বিষয়ে আমাদের মনিটরিং রয়েছে।’

প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, আত্মসমর্পণ করা ১০২ ইয়াবা কারবারির মধ্যে শাহজাহান আনসারীর বাড়ি কক্সবাজারে। অপর ১০১ জন টেকনাফের বাসিন্দা। তারা হলেন- সাবরাং ইউনিয়নের মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে দানু মেম্বার, শাহপরীর দ্বীপের রেজাউল করিম মেম্বার, সামশু মেম্বার, সাহেদ রহমান নিপু, সাহেদ কামাল, নুরুল আমিন, আলী আহমদ, মৌলভী বশির, হোসেন আহমদ, শওকত আলম, ডেইল পাড়ার নুরুল আমিন, মুন্ডার ডেইলের মনজুর, আলীর ডেইলের জাফর আহমদ, আবদুল হামিদ, শামীম, দক্ষিণ নয়াপাড়ার নূর মোহাম্মদ, আলমগীর ফয়সাল, ডেইল পাড়ার মো. সাকের মিয়া, নয়াপাড়ার মো. তৈয়ব, টেকনাফ পৌর এলাকা ও সদর ইউনিয়নের আবদুস শুক্কুর, আমিনুর রহমান ওরফে আবদুল আমিন, দিদার মিয়া, আবদুল আমিন, নুরুল আমিন, শফিকুল ইসলাম সফিক, ফয়সাল রহমান, আবদুর রহমান, জিয়াউর রহমান, পৌর কাউন্সিলর নুরুল বশর ওরফে নুরশাদ, দক্ষিণ জালিয়াপাড়ার ইমাম হোসেন, বড় হাবিব পাড়ার ছিদ্দিক, পুরনো পল্লান পাড়ার শাহ আলম, অলিয়াবাদের মারুফ বিন খলিল বাবু, মৌলভী পাড়ার একরাম হোসেন, মধ্য ডেইল পাড়ার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, চৌধুরী পাড়ার মংমং ছেং ওরফে মমচি ও দক্ষিণ জালিয়া পাড়ার জুবাইর হোসেন, মধ্যম জালিয়া পাড়ার মোজাম্মেল হক, ডেইল পাড়ার আবদুল আমিন, নাজির পাড়ার এনামুল হক মেম্বার, ভুট্টোর ভাগিনা আফসার, আবদুর রহমান, সৈয়দ হোসেন, মো. রফিক, মো. হেলাল, জামাল হোসেন, মৌলভী পাড়ার মো. আলী, নাইট্যং পাড়ার মো. ইউনুস, উত্তর লম্বরীর আবদুল করিম ওরফে করিম মাঝি, সদর কচুবনিয়ার বদিউর রহমান, রাজার ছড়ার আবদুল কুদ্দুস, জাহালিয়া পাড়ার মো. সিরাজ, নতুন পল্লানপাড়ার  মো. সেলিম, নাইট্যং পাড়ার মো. রহিম উল্লাহ, চৌধুরী পাড়ার মোহাম্মদ আলম, তুলাতলীর নুরুল বশর, হাতিয়ার ঘোনার দিল মোহাম্মদ, মোহাম্মদ হাছন, রাজার ছড়ার হোসেন আলী, উত্তর জালিয়া পাড়ার নুরুল বশর মিজি, আবদুল গনি, জালিয়া পাড়ার মো. হাশেম, পুরান পল্লান পাড়ার ইসমাইল, নাইট্যং পাড়ার আইয়ুব, নুর হাবিব, মাঠপাড়ার কামাল, শিলবনিয়াপাড়ার আইয়ুব, জালিয়া পাড়ার আলম, নুরুল আলম, বাহারছড়া ইউনিয়নের জাহাজ পুরার নুরুল আলম, শামলাপুর জুমপাড়ার শফি উল্লাহ, ছৈয়দ আলম, উত্তর শীলখালীর মো. আবু ছৈয়দ, হ্নীলা ইউনিয়নের হ্নীলা পশ্চিম  লেদার নুরুল হুদা মেম্বার, আলী খালীর জামাল মেম্বার, শাহ আজম, পশ্চিম সিকদার পাড়ার ছৈয়দ আহমদ, রশিদ আহমদ, পশ্চিম লেদার নুরুল কবীর, পূর্ব লেদার জাহাঙ্গীর আলম, জাদিমোরার মোহাম্মদ হাসান আবদুল্লাহ, লেদার ফরিদ আলম, মো. হোছন, জহুর আলম, আবু তাহের, বোরহান, হামিদ, রবিউল আলম, আলী খালীর হারুন, হ্নীলা পশ্চিম সিকদার পাড়ার মাহাবুব, বাজার পাড়ার মো. শাহ, পূর্ব পানখালীর নজরুল ইসলাম, পশ্চিম পানখালীর নুরুল আবছার, ফুলের ডেইলের রুস্তম আলী, আলী নেওয়াজ, আবু তৈয়ব ও রমজান। এদের মধ্যে আবদুস শুক্কুর, আমিনুর রহমান, মো. ফয়সাল রহমান ও শফিকুল ইসলাম হচ্ছে আবদুর রহমান বদির আপন ভাই। এ ছাড়া বদির ভাগিনা সাহেদ রহমান নিপু, ফুফাতো ভাই কামরুল হাসান রাসেল, খালাতো ভাই মংমং সেন ওরফে মমচি ও বেয়াই শাহেদ কামাল রয়েছেন।

 

 

 

সর্বশেষ খবর