শনিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

জটিল রোগীদের সুরক্ষায় বেশি কার্যকর মডার্নার টিকা

সিনোফার্মে দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষার আভাস

জয়শ্রী ভাদুড়ী

ক্যান্সার, লিভার, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, কিডনি রোগে আক্রান্ত জটিল রোগী ও গর্ভবতী নারীদের জন্য এমআরএনএ টিকা মডার্না বেশি কার্যকর। সম্প্রতি এক গবেষণার প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গেছে জটিলতায় ভোগা টিকা গ্রহীতাদের মধ্যে ভেক্টর টিকা কভিশিল্ডের তুলনায় মডার্নার অপটিক্যাল ডেনসিটি দ্বিগুণ। এ টিকা দেওয়ার পরে শরীরে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডি কমতেও বেশি সময় লাগে।

জটিল রোগীদের ওপর কভিশিল্ড ও মডার্নার প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেছেন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ডা. আশরাফুল হক। বার্ন ইনস্টিটিউটে মডার্নার দুই ডোজ টিকা নেওয়া ১০০ রোগীর ওপর এ গবেষণা করা হয়।

এলিজা পদ্ধতি (এনজাইম-লিঙ্কড ইমিউনোসরবেন্ট অ্যাসে ম্যাথোড) অনুসরণ করে এ টেস্ট করা হয়। এ পদ্ধতিতে যে ফল আসে তাকে অপটিক্যাল ডেনসিটি বলা হয়। এই ফলের ওপর নির্ভর করে অ্যান্টিবডি কতটা সুরক্ষা দেবে টিকা গ্রহীতাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, দুই ডোজ টিকা নেওয়ার ১৪ দিন পর ডায়াবেটিস, কিডনি, ক্যান্সারসহ বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগীদের শরীরে টিকার অপটিক্যাল ডেনসিটি ১৪ এর বেশি পাওয়া গেছে। কারও কারও অপটিক্যাল ডেনসিটি ১৮ পাওয়া গেছে। গবেষণায় অংশ নেওয়াদের বয়স ৫০ বছরের বেশি ছিল। গবেষণায় অংশ নেওয়াদের মধ্যে ৭২ জন পুরুষ ও ২৮ জন নারী ছিলেন। এর আগে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কভিশিল্ড টিকার দুই ডোজ নেওয়া ১ হাজার মানুষের ওপর গবেষণা করেছেন ডা. আশরাফুল হক। কভিশিল্ড টিকার দুই ডোজ গ্রহণের পরে গ্রহীতাদের শরীরে শতভাগ অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছিল। সেই গবেষণায় অংশ নেওয়া জটিল রোগীর সংখ্যা ছিল ৩৫০ জন। কভিশিল্ড দুই ডোজ নেওয়া জটিল রোগীদের অপটিক্যাল ডেনসিটি ছিল ৬-৮ এর মধ্যে। ডা. আশরাফুল হক বলেন, জটিল রোগীদের সেল (কোষ) দুর্বল হওয়ায় টিকা নেওয়ার পর অন্যদের তুলনায় তাদের কম অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। কিন্তু মডার্নার টিকা নেওয়া জটিল রোগীদের শরীরে আমরা কভিশিল্ডের তুলনায় অ্যান্টিবডি বেশি পেয়েছি, যা কমতে সময় লাগবে। তিনি আরও বলেন, ‘জটিল রোগীদের সুরক্ষায় এমআরএনএ টিকা যেমন মডার্না, ফাইজার এগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দিতে হবে। আমাদের যেহেতু এমআরএনএ টিকা শুধু উপহার ও কোভ্যাক্স থেকে আসছে তাই সেসব টিকা সবাইকে না দিয়ে জটিল রোগী এবং গর্ভবতীদের দিলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে। আমাদের আরেকটি গবেষণায় উঠে এসেছে ইনএক্টিভিটেড (নিষ্ক্রিয়) টিকা সিনোফার্ম দীর্ঘমেয়াদে সুরক্ষা দেওয়ার আভাস দিচ্ছে। তাই সুস্থ মানুষ ও তরুণদের সিনোফার্ম টিকা দিয়ে জটিল রোগী এমআরএনএ টিকা দেওয়া উচিত।’ এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. সায়েদুর রহমান বলেছেন, ‘জটিল রোগীদের শরীরে এমআরএনএ টিকা ভালো কাজ করছে এটি একটি ভালো তথ্য। তবে এটি নিয়ে এখনো কথা বলার সময় আসেনি। আমাদের দেশে এমআরএনএ টিকার স্বল্পতা রয়েছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৫৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষকে টিকা দিতে হবে, কারণ মৃত্যুর হার তাদের মধ্যে বেশি। দেশে যে টিকাই পাওয়া যাক তাই বয়স্ক ও জটিল রোগীদের দিতে হবে।’ দেশে এ পর্যন্ত মডার্নার টিকা এসেছে ৫৫ লাখ ডোজ। গত ১৩ জুলাই থেকে মডার্নার টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত দেশে মডার্নার টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন ২৫ লাখ ৮২ হাজারের বেশি মানুষ। দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিয়েছে ২৪ লাখের বেশি মানুষ। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাতে এখন এমআরএনএ টিকা ফাইজারের ১০ লাখ ডোজ আছে। আরও ৫০ লাখ ডোজ ফাইজার টিকা শিগগিরই দেশে আসার কথা রয়েছে। গত ২২ সেপ্টেম্বর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানিয়েছেন, নতুন করে ৭১ লাখ ডোজ ফাইজার (যুক্তরাষ্ট্রের অনুদান) এবং ১৮ লাখ ডোজ মডার্নার টিকা (কোভ্যাক্সের নিয়মিত বরাদ্দ) বাংলাদেশ পেয়েছে। চলতি বছরের শেষে টিকাগুলো পাঠানো হবে। কভিশিল্ড টিকা দিয়ে চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সারা দেশে করোনা সংক্রমণ রোধে গণটিকাদান শুরু হয়। কভিশিল্ডের টিকার সংকটের কারণে মাঝে কিছুদিন টিকা কর্মসূচিতে ভাটা পড়লেও পরবর্তীতে ফাইজার, মর্ডানা ও সিনোফার্মের টিকা দেওয়া শুরু হয়। এখন পর্যন্ত দেশে অন্তত এক ডোজ টিকা নিয়েছে ২ কোটি ৩৮ লাখের বেশি মানুষ, আর দুই ডোজ টিকা নিয়েছে ১ কোটি ৫৭ লাখের বেশি মানুষ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর