বৃহস্পতিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

শোকজ আরও দুই আমদানিকারককে

নিম্নমানের বিটুমিন আমদানি

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

আমদানি নীতি লঙ্ঘন করে নিম্নমানের বিটুমিন আমদানি করায় আরও দুই প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস। সাত দিনের মধ্যে জবাব না দিলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। প্রতিষ্ঠান দুটি হচ্ছে চট্টগ্রামের ‘জাহাঙ্গীর অ্যান্ড আদার্স’ ও ‘হাসান কনস্ট্রাকশন’। পর পর তিনটি সরকারি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা করায় দুটিতে মান উত্তীর্ণ হয়নি আমদানি করা বিটুমিন। এ কারণে দুই আমদানিকারকের বিরুদ্ধে ২৩ সেপ্টেম্বর কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করা হয়।

এর আগে মান সনদ জালিয়াতি করে নিম্নমানের বিটুমিন আমদানির দায়ে আরেক আমদানিকারক ‘ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড’কে ৫০ লাখ টাকা শুল্কসহ জরিমানা করেছিলেন কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম বলেন, ‘নিম্নমানের বিটুমিন আমদানি করে ছাড় করার সুযোগ এখন নেই। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি সরকারি নির্দেশনা মেনে গুণমান নিশ্চিত করে বিটুমিন ছাড় দিতে। এখানে ল্যাব পরীক্ষায় যারা গুণগতমান নিশ্চিত করেছেন কেবল তারাই ছাড় পেয়েছেন।’

হাসান কনস্ট্রাকশন জুলাইয়ে প্রায় ১০ লাখ কেজি বিটুমিন আমদানি করে। কাস্টমসে বিল অব এন্ট্রি জমার পর গুণগতমান পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠানো হয় ইস্টার্ন রিফাইনারিতে। পরীক্ষায় নেগেটিভ রিপোর্ট আসে। পরে আমদানিকারক নমুনা বিএসটিআইতে পাঠালে পজিটিভ রিপোর্ট আসে। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এবার নমুনা বুয়েটে পাঠালে নেগেটিভ রিপোর্ট আসে অর্থাৎ মান উত্তীর্ণ হয়নি। ফলে চালানটি আটক করেন কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এবং ২৩ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠানটিকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেন।

বিটুমিনের আরেক বড় আমদানিকারক জিপিএইচ গ্রুপের প্রতিষ্ঠান জাহাঙ্গীর অ্যান্ড আদার্স জুলাইয়ে ২ লাখ ৩৮ হাজার কেজির একটি চালান চট্টগ্রাম বন্দরে আনে। এখানেও প্রথম নমুনা ইস্টার্ন রিফাইনারিতে ‘নিম্নমান’ বলে সনদ পায়। এরপর বিএসটিআইতে নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠালে রিপোর্ট ভালো আসে। বিষয়টি সন্দেহজনক হওয়ায় বুয়েটে নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠায় কাস্টমস। সে পরীক্ষায় নিম্নমান বলে সনদ দেওয়া হয়। এর পরই চালানটির খালাস আটকে যায়। এ অবস্থায় আমদানিকারক চালানটি খালাসে নতুন কৌশল খুঁজতে থাকেন এবং উচ্চ আদালতে রিট করেন। কিন্তু রায় তাদের পক্ষে আসেনি। পরে চালানটি আটক করে কাস্টমস। নিয়ম অনুযায়ী তাদের কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, জুলাইয়ের পর বিটুমিনের আরও অন্তত পাঁচটি চালান এনেছে জাহাঙ্গীর অ্যান্ড আদার্স। ইস্টার্ন রিফাইনারির ল্যাবে পরীক্ষায় সবকটিতেই নেগেটিভ রিপোর্ট এসেছে। সর্বশেষ ২২ সেপ্টেম্বরের চালানের নমুনা পরীক্ষায়ও নেগেটিভ রিপোর্ট এসেছে।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের সহকারী কমিশনার উত্তম চাকমা বলেন, ‘নিম্নমানের পণ্য আমদানিযোগ্য নয়। এ ক্ষেত্রে তারা আমদানি নীতি আদেশ লঙ্ঘন করেছেন। কাস্টমস আইন অনুযায়ী যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। দুই আমদানিকারকের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা জানতে কারণ দর্শানো নোটিস জারি করা হয়েছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে তা জানাতে বলা হয়েছে।’

দেশে নিম্নমানের বিটুমিন আমদানির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এতে সড়ক রক্ষণাবেক্ষণে হাজার কোটি টাকা গচ্চা যাচ্ছিল সরকারের। সর্বশেষ ২৫ মে বিটুমিনের মান নিশ্চিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তিনটি নির্ধারিত ল্যাবে মান পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করে। এর পর থেকেই মূলত নিম্নমানের বিটুমিন আমদানির চক্রটি বিপাকে পড়ে।

সর্বশেষ খবর