শুক্রবার, ১ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

আজ দেশে ফিরছেন

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ হাউস উদ্বোধন করেন -পিআইডি

ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের নিজস্ব ভবন ‘বাংলাদেশ হাউস’-এর দৈন্যদশা কাটল এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক আগ্রহেই সংস্কার সাধিত ভবনটির উদ্বোধন হলো। ২৯ সেপ্টেম্বর বিকালে সীমিত পরিসরে এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এ মোমেন, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, রাষ্ট্রদূত এম শহীদুল ইসলামসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, পুরনো জরাজীর্ণ ভবনটির সংস্কারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা দ্বিতীয়বারের মতো দায়িত্ব গ্রহণের পরই ৩ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেন। কিন্তু পাঁচ বছরেও ভবনটির সংস্কার করা হয়নি। এ নিয়ে ২০১৯ সালের মধ্য জুনে ‘ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ ভবন রাষ্ট্রদূতের কিচেন’ শিরোনামে বাংলাদেশ প্রতিদিনের উত্তর আমেরিকা সংস্করণ একটি সংবাদ প্রকাশ করলে গণভবন হস্তক্ষেপ করে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন নির্দেশ দেন দ্রততম সময়ে সংস্কারের কাজ শেষ করতে। এর পরই মূলত কাজ শুরু হয় এবং করোনার কারণে তার উদ্বোধনও বিলম্বিত হয়।

মেরিল্যান্ড স্টেটের বেথেস্ডায় ৪ হাইবরো কোর্টে অবস্থিত ভবনের সামনে একটি গাছের চারা (ফ্রিঞ্জ ট্রি) রোপণের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষ মুনাজাতে অংশ নেন। এর পরই ‘বাংলাদেশ ভবন’-এর নামফলক উন্মোচন করেন। এ সময় আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। কারণ ১৯৭৪ সালের সেপ্টেম্বরে তদানীন্তন মার্কিন প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণে ওয়াশিংটন ডিসিতে আসার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ ভবনে ছিলেন। সেই স্মৃতি রোমন্থনকালে শেখ হাসিনা একটি জায়গা নির্দিষ্ট করে জানান যে সেখানে বসেছিলেন জাতির পিতা। এজন্য এ ভবনের প্রতি রয়েছে তাঁর বিশেষ দুর্বলতা। এটি সাধারণ কোনো ভবন নয়, ঐতিহাসিক একটি স্থান। এখান থেকেই ইতিহাসের সূচনা হয়েছে। তাই ভবনটির সংরক্ষণের দায়িত্ব সবার। নামফলক উন্মোচনের জন্য ওই ভবনের সামনে এলে শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানান সেলিনা মোমেন, জেসমীন ইসলামসহ বিশিষ্টজনেরা। করোনার পরিপ্রেক্ষিতে নিতান্তই আপনজন ছাড়া কারও প্রবেশাধিকার ছিল না ওই ভবনে। পিতার স্মৃতিবিজড়িত ভবনটি সংস্কারের পর একান্ত আপনজনের সান্নিধ্যে উদ্বোধনের বিষয়টিকেও তিনি ঐতিহাসিক হিসেবে অভিহিত করেন। ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের বসবাসের জন্য কেনা এ ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় সংস্কারের প্রয়োজন দেখা দেয়। এজন্য বরাদ্দ করা হয় ৩ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু সংস্কার শুরু না করায় রাষ্ট্রদূতের বাসা ভাড়া বাবদ প্রতি মাসে বাংলাদেশ সরকারকে গুনতে হয় ৮ হাজার ডলার। গত সাড়ে ছয় বছরে এ বাবদ সরকারের ব্যয় হয়েছে ৬ লাখ ২৪ হাজার ডলারের কাছাকাছি।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ হাউস ও দূতাবাস ভবন উদ্বোধন হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৯৯৬ সরকার আমলেই। নিউইয়র্কে বাংলাদেশ মিশন ও স্থায়ী প্রতিনিধির আবাসনও কেনা হয়েছে শেখ হাসিনার আমলে। সে সময় স্থায়ী প্রতিনিধি ছিলেন ড. এ কে এ মোমেন। নিউইয়র্কে নিজস্ব ভবনে বাংলাদেশ কনস্যুলেট অফিস স্থাপনের একটি পরিকল্পনার কথা এবারও বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। সুন্দর একটি ভবন খোঁজার কথা জানিয়ে আসছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ঢাকা থেকে ভবন কেনার প্রাক্কালে তা পরিদর্শনের জন্য একটি টিমও নিউইয়র্ক সফর করে। কিন্তু ভবন খোঁজার আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আজও দূর হয়নি। নিজস্ব ভবনে কনস্যুলেট অফিস (যেখানে থাকবে একটি মিলানয়তন, লাইব্রেরি, গবেষণা কেন্দ্র, সোনালি এক্সচেঞ্জ, বিমানের অফিস) স্থাপিত হলে নানা অজুহাতে প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে না- এমন কথাও রয়েছে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। সেজন্য আট বছরের অধিক সময় ধরে নিজস্ব ভবনে কনস্যুলেট স্থাপনের পরিকল্পনাটি ফাইলচাপা রয়েছে।

উল্লেখ্য, বিভিন্ন সার্ভিসের মাধ্যমে প্রতি বছর বিপুল অর্থ আয় করে এ কনস্যুলেট। সে অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা হওয়া সত্ত্বেও কেন নীতিনির্ধারকরা বাড়ি খোঁজার অজুহাতে প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহকে ঝুলিয়ে রেখেছেন সে প্রশ্নও অনেকের। প্রধানমন্ত্রীর আজ দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর