শনিবার, ২ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

অভিযোগে নানা অসংগতি নুসরাতকে তলব পিবিআইর

নিজস্ব প্রতিবেদক

অভিযোগে নানা অসংগতি নুসরাতকে তলব পিবিআইর

মোসারাত জাহান মুনিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় দ্বিতীয় মামলার তদন্তে নানা অসংগতি পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। প্রথম ও দ্বিতীয় মামলার বাদী একজন হলেও দুটি মামলার এজাহারে রয়েছে ভিন্ন বক্তব্য। দুই এজাহারে বাদীর বক্তব্যে ভিন্নতার কারণ জানতে এবার বাদীকেই তলব করছেন তদন্তসংশ্লিষ্টরা। যে কোনো সময় তাকে ডাকা হতে পারে বলে নিশ্চিত করেছেন সূত্র। একই সঙ্গে একাধিক সূত্র বলছেন, ঘটনার পর থেকে নুসরাত নানা ধরনের তথ্য দিয়েছেন তদন্তসংশ্লিষ্ট এবং গণমাধ্যমকর্মীদের। এ কারণে তাকে গুরুত্বের সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করলে মামলার অনেক রহস্য উন্মোচিত হবে।

আইন বিশ্লেষকরা বলছেন, যে কোনো মামলা করতে গেলে প্রথম যে অভিযোগটি করা হয় সেটি গৃহীত হয়। পরে সে অভিযোগ থেকে সরে আসার কোনো পথ নেই। কিন্তু এখানে দেখা যাচ্ছে যে নুসরাত প্রথম দফায় যে অভিযোগগুলো করেছিলেন দ্বিতীয় দফায় অন্যরকমভাবে

মামলাটি সাজিয়েছেন। এটা থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে এ মামলাটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

তদন্তসংশ্লিষ্ট তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আমরা সবকিছুই খতিয়ে দেখব।’ জানা গেছে, নুসরাত প্রথম অভিযোগ করেছিলেন গুলশান থানায়। সে অভিযোগে তিনি মুনিয়ার মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করেছিলেন এবং আত্মহত্যা ও প্ররোচনা মামলা দায়ের করেছিলেন। নুসরাত দ্বিতীয় অভিযোগটি করেন ৮ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে। এ মামলায় তিনি মুনিয়াকে হত্যা এবং ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। দুটি মামলার অভিযোগনামার মধ্যে অসংগতি রয়েছে এবং একটি মামলার সঙ্গে আরেকটির কোনো মিল নেই।

একাধিক সূত্র বলছেন, শুধু প্রথম মামলাটি নয়, দুটি অভিযোগের মধ্যে অসংগতি থেকে বোঝা যায় এ মামলাটি করা হয়েছিল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এবং এক ধরনের ব্ল্যাকমেলিংয়ের জন্য।

তদন্ত কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, নুসরাত ৮ নম্বর নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনে যে মামলার অভিযোগ করেছেন সেখানে তিনটি অসংগতি রয়েছে- ১. এজাহারে বলা হয়েছে যে মুনিয়াকে হত্যা করা হয়েছে কিন্তু মুনিয়াকে কখন, কীভাবে হত্যা করা হলো তা নেই। যে কোনো হত্যাকান্ডের মামলায় সময় এবং ঘটনাস্থল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আসামিদের কাউকে না কাউকে অবশ্যই সে হত্যাকান্ডের স্থলে উপস্থিত থাকতে হবে। এটি এ মামলার সবচেয়ে বড় ত্রুটি বলে মনে করছেন একাধিক সূত্র।

২. মুনিয়া যখন নুসরাতকে টেলিফোন করেন এবং নুসরাত যখন কুমিল্লা থেকে ঢাকায় ফিরছিলেন তখন তাদের টেলিআলাপে একবারও মুনিয়া মৃত্যুর আশঙ্কা করেননি বা তাকে হত্যা করা হতে পারে এ রকম আশঙ্কা করেননি। বরং মুনিয়া কিছুদিন নির্বিঘ্নে ঢাকার বাইরে ঘুরে আসতে চেয়েছিলেন। ৩. মৃত্যুর আগে ব্যক্তির যেসব কথাবার্তা তাকে বলা হয় তার লাস্ট স্টেটমেন্ট বা শেষ বক্তব্য। সেই শেষ বক্তব্যের কোথাও মুনিয়া নিজেকে ধর্ষিতা বলে দাবি করেননি। এ তিনটি অসংগতির বিষয় তদন্ত কর্মকর্তারা খতিয়ে দেখছেন।

পিবিআই-সূত্র বলছেন, ৬ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় মামলা দায়েরের পর আদালত তদন্তভার পিবিআইকে দেয়। এর তিন দিনের মধ্যে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ একটি দল কুমিল্লায় গিয়ে বাদীর সঙ্গে কথা বলেন। তবে পরে ঘটনার প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে নানা প্রশ্নের উদ্রেক হলে বাদীকে তলবের সিদ্ধান্ত হয়। সূত্র বলছেন, মামলার তদন্তে ইতিমধ্যে পিবিআই অনেক দূর এগিয়ে গেছে। গুলশানের যে ফ্ল্যাটে ২৮ এপ্রিল মুনিয়া মারা যান, তারা সেই ফ্ল্যাটের ভিডিও সিসিটিভি ফুটেজ নিয়েছেন। মুনিয়ার ডায়েরি ও অন্যান্য কাগজপত্র এবং মুনিয়ার ফোনের কল রেকর্ড জব্দ করেছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর