রবিবার, ৩ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

মুনিয়ার বাসায় শেষ গিয়েছিলেন নুসরাতের তিন সহযোগী

নিজস্ব প্রতিবেদক

মুনিয়ার বাসায় শেষ গিয়েছিলেন নুসরাতের তিন সহযোগী

নুসরাত

মুনিয়ার মৃত্যুরহস্য এখন তদন্ত করছে পিবিআই। তদন্ত করতে গিয়ে একের পর এক বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। হত্যা ও ধর্ষণের মামলা তদন্ত করতে গিয়ে তদন্ত কর্মকর্তারা ইতিমধ্যে গুলশানের ওই ফ্ল্যাটের সিসিটিভি ফুটেজ ও রেজিস্টার বুক জব্দ করেছেন। ওই সমস্ত সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। উল্লেখ্য, মুনিয়ার মৃত্যুর দুই ঘণ্টা আগে ওই ফ্ল্যাটে তিন ব্যক্তি প্রবেশ করেছিলেন। সিসিটিভি ফুটেজে তাদের ছবি পাওয়া গেছে। কিন্তু তিনজন একই সময়ে প্রবেশ করেননি। প্রথম জনের প্রবেশের ৪৫ মিনিট পর দ্বিতীয় জন এবং তার ১৫ মিনিট পর তৃতীয় জন প্রবেশ করেন। এর আগে নুসরাতের সঙ্গে মুনিয়ার টেলিআলাপের রেকর্ড পর্যালোচনা করলে দেখা যায় সেখানে নুসরাত বলছেন, ‘ওদেরকে পাঠাচ্ছি, ওদেরকে বসার ব্যবস্থা কর আমি আসছি।’  এরা কারা? এ সিসিটিভি ফুটেজের সঙ্গে পরে নুসরাত যখন থানায় গেলেন সেই গুলশান থানার সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, যে তিনজন সেদিন মুনিয়ার মৃত্যুর আগে গুলশানের ফ্ল্যাটে গিয়েছিলেন তারাই আবার নুসরাতের সঙ্গে গাড়িতে করে গুলশান থানায় যান এবং গুলশান থানায় যখন নুসরাত মুনিয়ার মৃত্যু নিয়ে মামলা দায়ের করেন সে সময় তাদের নুসরাতের পাশে দেখা গেছে।

প্রশ্ন উঠেছে, নুসরাত কুমিল্লা থেকে মুনিয়ার ফ্ল্যাটে আসার পরপরই এ তিনজন কোথা থেকে মুনিয়ার ফ্ল্যাটে এলেন। আরও তদন্তে দেখা গেছে, নুসরাতের কাছে মুনিয়ার ফ্ল্যাটের একটি চাবির ডুপ্লিকেট চাবি থাকত এবং এ চাবিটি তিনি এ তিনজন সহযোগীকে দিয়েছিলেন বলেও প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া গেছে। আবার যখন নুসরাত আদালতে নারাজি দরখাস্ত করেন তখনো ওই তিন ব্যক্তিকে নুসরাতের সঙ্গে দেখা যায়, তারা কোর্টে ঘোরাঘুরি করছেন। এরও পরে যখন নুসরাত ৮ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন তখনো এ তিনজনকে পাওয়া গেছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এ তিনজন নুসরাতের একান্ত ব্যক্তিগত সহযোগী এবং বিশ্বস্ত। এরা কুমিল্লায়ও নুসরাতের জমিজমাসংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তিতে কাজ করেন। নুসরাতের পারিবারিক ঝামেলার জন্য তাকে কিছু সন্ত্রাসী গোষ্ঠী পালতে হতো বলে স্থানীয় এলাকাবাসী জানিয়েছেন। বিশেষ করে তার ভাইয়ের সঙ্গে জমিজমা নিয়ে বিরোধ সহিংসতার পর্যায়ে পৌঁছে যায় এবং এ নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা আছে। এ কারণেই নুসরাত স্থানীয় সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর সঙ্গে ওঠাবসা শুরু করেন এবং তাদের নিয়মিত মাসোয়ারা দিতেন। একই সময়ে মুনিয়া যেন অবাধ্য না হয়ে যান এবং তার নাগালের বাইরে চলে না যান তাই তাকে নজরদারির মধ্যে রাখার জন্য এ রকম কয়েকজনকে ব্যবহার করা হতো। এরা প্রত্যেকেই পেশাদার সন্ত্রাসী এবং এদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। পুলিশ এখন এ তিনজনকে খুঁজছে। এ তিনজনকে অন্তত সাতটি জায়গায় নুসরাতের সঙ্গে দেখা গেছে এবং এ ভিডিওগুলো একটার পর একটা মিলিয়ে মুনিয়ার মৃত্যুর সঙ্গে এদের কোনো যোগসূত্র আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারণ মুনিয়া যদি সত্যি সত্যি হত্যাকান্ডের শিকার হন তাহলে সেই হত্যাকান্ডের সময় ওই ফ্ল্যাটে কাউকে থাকতে হবে।

এখন সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনায় দেখা যায়, তিন ব্যক্তি সেদিন ওই ফ্ল্যাটে গিয়েছিলেন। সে তিনজনই আবার নুসরাতের সঙ্গে সর্বক্ষণ ছায়ার মতো ঘোরাফেরা করছেন। এ রকম পরিস্থিতিতে এ মামলার তদন্ত একটি নাটকীয় মোড় নিয়েছে। বিভিন্ন মহল মনে করছে, নুসরাতের বিশ্বস্ত সহযোগী এ তিনজনকে গ্রেফতার করতে পারলেই এ মামলার রহস্যজট অনেকখানি খুলে যাবে। তবে তদন্তে এটি এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া গেছে যে মুনিয়ার মৃত্যুর দিন যাদের আসামি হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে তাদের কেউই মুনিয়ার ফ্ল্যাটে যাননি। সিসিটিভি ফুটেজে তাদের ফ্ল্যাটে যাওয়ার কোনো প্রমাণ মেলেনি। বরং যে তিনজন রহস্যজনকভাবে ভুল ঠিকানায় ফ্ল্যাটে গিয়েছিলেন সেই তিনজনকে নিয়েই এখন তদন্ত ক্রমে ঘনীভূত হচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছেন।

সর্বশেষ খবর