মঙ্গলবার, ৫ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

কারও কাছে রিফিউজি পালা একটা ব্যবসা

নিজস্ব প্রতিবেদক

কারও কাছে রিফিউজি পালা একটা ব্যবসা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে থাকলে অনেকের লাভ হয়। প্রত্যাবাসন নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই। মনে হয় কারও কারও কাছে রিফিউজি পালাটা একটা ব্যবসা। রিফিউজি না থাকলে তাদের চাকরিই থাকবে না। গতকাল জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্র সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় গণভবনে উপস্থিত থাকার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও ভিডিও কনফারেন্সে গণভবনের সঙ্গে সংযুক্ত ছিলেন সাংবাদিকরা।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বারবার তাগিদ দেওয়ার পরও আশাব্যঞ্জক সাড়া না পাওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো কোনো সংস্থা রোহিঙ্গাদের শরণার্থী করে রাখতেই বেশি আগ্রহী বলে মনে হয়েছে। এটা হলো আসল কথা। তিনি বলেন, অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মকান্ডে মনে হয় রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে নিজভূমে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে তাদের খুব বেশি আগ্রহ নেই। সবকিছুতেই ব্যবসা করা হচ্ছে। এর বেশি রোহিঙ্গা ইস্যুতে কিছু বলতে চাই না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার মনে হয় রিফিউজি থাকলে কিছু লোকের লাভই হয়। অনেক প্রস্তাব আসে, রোহিঙ্গাদের জন্য এখানে অনেক কিছু করে দিতে চায়। আমি সোজা বলে দিই যান মিয়ানমারে, ওখানে ঘর করেন, স্কুল করেন, এখানে করা লাগবে না। আমার কাছে যেটা মনে হয় সবকিছুই যেন (তাদের কাছে) একটা ব্যবসা। অনেক সংস্থা আছে যারা রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে বরাবরই ভালো সাড়া দিয়ে যাচ্ছে। আবার কিছু সংস্থা প্রত্যাবাসন প্রশ্নে সেই আগ্রহ দেখায় না।

বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার এই চাপে কক্সবাজারের পরিবেশ ও প্রতিবেশের যে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে জাতিসংঘে তা তুলে ধরার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সেখানে নানা ধরনের অসংগতি চলছে, নারী পাচার, শিশু পাচার, ড্রাগ পাচারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে তারা (রোহিঙ্গারা)। যেটা আমাদের জন্য সবচেয়ে আশঙ্কাজনক। আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বলছি, এটা সেখানে হচ্ছে, আরও হবে, যদি প্রত্যাবাসন না হয়।

গণভবন প্রান্তে সংবাদ সম্মেলন পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মঞ্চে এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। সিনিয়র সাংবাদিক, সম্পাদক ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ গণভবনে উপস্থিত ছিলেন।

সার্চ কমিটি করেই নির্বাচন কমিশন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নিয়ম অনুসারে রাষ্ট্রপতির আদেশে সার্চ কমিটি করেই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে। নির্বাচনে নিজেদের কোনো সম্ভাবনা নেই বলেই ভোট নিয়ে বিএনপি প্রশ্ন তোলে। জনগণ তাদের কেন ভোট দেবে সেটা বিএনপিকে জিজ্ঞেস করুন। গতকাল বিকালে গণভবনে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনে অংশগ্রহণ-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন সরকারপ্রধান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের আস্থা-বিশ্বাস নিয়েই আওয়ামী লীগ ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকতে চায়। তাই নির্বাচনকে নির্বাচনের মতোই দেখি। আমি আত্মতুষ্টিতে ভুগি না। কে কখন কার প্রতিপক্ষ হয়ে যায় তা বলা যায় না। নির্বাচন নির্বাচনই। কাজেই আত্মতুষ্টিতে ভুগলে চলবে না। এখন থেকেই আমরা সাংগঠনিক কাজগুলো করে নিচ্ছি। আওয়ামী লীগই একমাত্র সংগঠন যারা সময়মতো সম্মেলন করে এবং মানুষের পাশে দাঁড়ায়।

সাজাপ্রাপ্ত, যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানদের বহুজনের ইংল্যান্ডে আবাস : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি ও ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের গাড়িতে হামলার ঘটনা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘটনাটি দুঃখজনক বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অনেক সাজাপ্রাপ্ত আসামি, সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানদের বহুজনের আবাস ইংল্যান্ডে। সেখানে একজন ব্রিটিশ এমপির গাড়িতে হামলা। সে শুধু বঙ্গবন্ধুর নাতনিই নয়, একজন এমপিও। এরা কী-জাতীয় লোক? ইংল্যান্ডের মতো জায়গায়, একটি সভ্য জায়গায় এ ধরনের অসভ্য ঘটনা ঘটে। সেখানে তো কিছু লোক আছেই। এটা দুঃখজনক। আমি কাউকে দোষারোপ করতে চাই না, এটা ব্রিটিশ সরকার খুঁজে দেখবে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনি, স্বাধীনতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধী এবং তাদের পরিবারের সদস্যসহ তাদের দোসর কিছু দল আছে, তাদের ষড়যন্ত্র থাকবে সেটা আমি জানি। বারবার তো আমাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু মরি না কী করব? তবে মৃত্যুর ভয়ে কখনো আমি ভীত নই। যতক্ষণ শ্বাস আছে ততক্ষণ দেশের মানুষের সেবা ও কল্যাণ করে যাব। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলবই।

বুধবার স্থানীয় সময় রাতে ব্রিটিশ লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের গাড়িতে ভাঙচুর হয়। তার বাড়ির বাইরে পার্ক করা গাড়িটির ছাদে রাজনৈতিক বার্তাও লিখে যায় দুর্বৃত্তরা। পাশাপাশি ভেঙে ফেলা হয় জানালার কাচ।

বিএনপিকে মানুষ কেন ভোট দেবে? : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষ বিএনপির সময় কী পেয়েছে আর আওয়ামী লীগের সময় কী পেয়েছে তার তুলনা করতে হবে। জনগণ কাকে ভোট দেবে, আওয়ামী লীগের বাইরে আর কে আছে? তিনি বলেন, কারা, কেন, কী কারণে, কোন সুখের স্বপ্নে, কোন আশায় বিএনপিকে ভোট দেবে? আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি জানে নির্বাচনে জিততে পারবে না। একটা দল কীভাবে জিতবে? তাদের নেতৃত্ব কোথায়? একজন এতিমের টাকা আত্মসাৎ করে সাজাপ্রাপ্ত আসামি। আরেকজন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি, দেশান্তরি। বিএনপি তাদের নেতৃত্বে রেখেছে। জনগণ কোন ভরসায় ওই দলকে ভোট দেবে? তারা তো ইলেকশনও করতে পারবে না।

শেখ হাসিনা বলেন, করোনা এসে উন্নয়ন কার্যক্রমে কিছুটা বাধা দিয়েছে। কিন্তু বসে থাকিনি। অনেক দেশে খাদ্যাভাব। কিন্তু আমাদের দেশে অভাব হয়নি। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ চলে গেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি, টেলিভিশন দিয়েছি, মোবাইল ফোন দিয়েছি, বিদ্যুৎ দিয়েছি। এত সুবিধা পেয়েও গালিটা আমাকে বা আওয়ামী লীগকেই দিচ্ছে। বাঙালির চরিত্রেই আছে- ভালো করলে মুখ ঘুরিয়ে বসে থাকা। আমরা করলাম কেন?

বিএনপি শাসনামলের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলো। তাদের জঙ্গিবাদ, বাংলা ভাই, বোমা হামলা, সারা বাংলাদেশে গ্রেনেড হামলায় মানুষের জীবনের কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান কেউ বাদ যায়নি বিএনপির অত্যাচার থেকে। পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন। এ সময় হিন্দু সম্প্রদায়সহ আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ওপর নির্মম অত্যাচার-নির্যাতনের ছবি সংবাদ সম্মেলনে দেখান শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেখেন তখন কী অবস্থা মানুষের, আতঙ্কে মানুষ। মানুষের জীবনের কোনো নিরাপত্তা ছিল না। বলতে গেলে ১ অক্টোবর যে অত্যাচার শুরু হলো, যেভাবে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী মানুষকে অত্যাচার করেছে সেভাবে ধর্ষণ করা, হত্যা করা। সেখানে কে সাহস করে মামলা করবে? একমাত্র পূর্ণিমা সাহস করে মামলা করেছিল বলে এলাকা থেকে চলে যেতে হলো।

ক্ষমতা আমার কাছে ভোগের বস্তু নয় : আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমার কাছে ক্ষমতা ভোগের বস্তু নয়। আকাক্সক্ষা থাকলে আমার বাবা যেমন অনেক আগেই মন্ত্রী এমপি হতে পারতেন, আমিও পারতাম। কিন্তু সেটা তো আমি করিনি। মানুষের জন্য যা কিছু করার এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগই করেছে। এটি কারও ভালো না লাগলে তো বলার কিছু নেই।

জিয়ার আমলে গণফাঁসির বিষয়ে তথ্য বের করা দরকার : ’৭৫-পরবর্তী অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পর জিয়াউর রহমানের আমলে ক্যু-পাল্টা ক্যুর নামে নির্বিচারে সামরিক বাহিনীর অফিসার-সদস্যদের ফাঁসি দিয়ে হত্যা এবং গুমের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পক্ষ থেকে বিষয়টি তদন্তে কমিশন গঠনের দাবির বিষয়ে করা প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫-পরবর্তী ক্যু-পাল্টা ক্যুর নামে বিমানবাহিনীসহ সামরিক বাহিনীর অসংখ্য অফিসার-সদস্যকে বিভিন্ন কারাগারে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বিভিন্ন কারাগারে খোঁজ নিলেই ওই সময়ে কত হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, লাশ গুম করা হয়েছে সে তথ্য পাওয়া যাবে। কমিশন গঠনের দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এত বছর পরে হলেও মানুষের মধ্যে চেতনা এসেছে। জেনারেল জিয়া তার অবৈধ ক্ষমতা নিষ্কণ্টক করতে এসব হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। সামরিক বাহিনীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের বহু নেতা-কর্মীকে হত্যা এবং লাশ গুম করা হয়েছে। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের হত্যার বিচার বিএনপি কিন্তু করেনি। কথিত বিদ্রোহের একটা বিচারের নামে নয়জনকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। এটার অবশ্যই একটা তদন্ত হওয়া দরকার। বিমানবাহিনীসহ পুরো সামরিক বাহিনীর প্রায় ২ হাজার সদস্যকে জিয়ার আমলে হত্যা করা হয়েছে। এর বিরুদ্ধে একটা ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, আরও জনমত গঠন হওয়া দরকার।

তালেবানের উত্থানে ভয়ের কিছু নেই : ২১ বছর পর আফগানিস্তানে তালেবানের উত্থানে বাংলাদেশে যেন জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস আবার ফিরে না আসে সেজন্য সরকার সতর্ক রয়েছে বলে জানালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, তালেবানের উত্থানে ভয়ের কিছু নেই। যে কোনো অবস্থা মোকাবিলা করার মতো ক্ষমতা আমরা রাখি। তবে আফগানিস্তানের বাতাস কোনোভাবেই যেন আমাদের দেশে আসতে না পারে সেজন্য আমরা যথেষ্ট সতর্ক রয়েছি।

বাংলাদেশ টিকা তৈরি করতে প্রস্তুত : সংবাদ সম্মেলনে ভ্যাকসিনকে গোটা বিশ্বের জন্য সর্বজনীন পণ্য ঘোষণা করে সব দেশের জন্য ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করার বিষয়ে আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে কাজ করেছেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে বাংলাদেশেও করোনা ভ্যাকসিন উৎপাদনের জন্য সরকার ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। প্র্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সর্বশেষ যে রিপোর্ট আমাকে দিয়েছেন তাতে দেখেছি দেশে ভ্যাকসিন উৎপাদন নিয়ে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি। দেশে ভ্যাকসিন উৎপাদনের জন্য সব ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছি। আমি আশাবাদী আমরা শিগগিরই ভ্যাকসিন উৎপাদন করতে পারব। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি ইতিমধ্যে ১০ একর জায়গা নিয়ে রেখেছি। সার্বিক ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যে গাভির (টিকাবিষয়ক আন্তর্জাতিক জোট) সঙ্গে আলোচনা করেছেন, ডব্লিউএইচওর (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা) সঙ্গে আলোচনা করেছেন। আমরা বলেছি, আমরা ফরমুলা চাই। আমরা সিড চাই এবং আমরা বাংলাদেশে এটা (টিকা তৈরি) প্রস্তুত করতে পারব।

বাংলাদেশের সাফল্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি এটুকু বলব যে বাংলাদেশ, হ্যাঁ আমরা চেষ্টা করেছি। আমি বাংলাদেশের মানুষের কাছে কৃতজ্ঞ এ কারণে যে যখনই আমরা আহ্‌বান করেছি করোনা মোকাবিলার জন্য যা যা করণীয় তারা যেন তা পালন করে। অনেক সময়, প্রথম দিকে দ্বিধাদ্ধন্ধ ছিল। কিন্তু এখন সবাই অন্তত তা মেনে চলে। মেনে চললে পরে এমনকি টিকা নেওয়ার পরও কিন্তু মাস্কটা পরে রাখা বা একটু দূরত্ব রাখা বা হাতট পরিষ্কার রাখা- এটা কিন্তু করা উচিত। এটা করতে হবে। এটা করলে পরে আরও অনেকটা এগোতে পারব।

বাংলাদেশের ডিজিটাল সিস্টেম আমেরিকার চেয়েও ভালো : ডিজিটাল বাংলাদেশে ভার্চুয়াল কনফারেন্সসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থাগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও সুন্দর বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হলে ভার্চুয়াল মাধ্যমে কনফারেন্স শুরু করেছিলাম। এখানে চমৎকার সিস্টেম রয়েছে। এর মধ্যে আমি আমেরিকায় গিয়েও ডিজিটাল মাধ্যমে কনফারেন্স করলাম। সেখান থেকেও তো আমাদের এখানে সুন্দর ব্যবস্থা রয়েছে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশের ঘোষণা দিয়েছিলাম। আমাদের ব্যঙ্গ করা হলো। কিন্তু ডিজিটাল বাংলাদেশ কি বাস্তবায়ন হয়নি? আমরা তো সবকিছুই ডিজিটাল মাধ্যমে করছি। তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণের সময় যখন সবকিছু বন্ধ তখন তো ভার্চুয়াল মাধ্যমেই সবকিছু করেছি। প্রতিটি জেলায় ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে যুক্ত হয়ে সবার সঙ্গে কথা বলেছি। কোথাও কোনো সমস্যা হয়নি। চলমান সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আপনাদেরও তো এখন কষ্ট নেই। এখনই মেসেজ পাঠিয়ে দিচ্ছেন নিউজ হয়ে যাচ্ছে। কথা বলে রেকর্ড করে নিচ্ছেন, কারেকশন করে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। এ সময় ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে আদালত পরিচালনার কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

হায় হায় কোম্পানির অর্থ উদ্ধারের চেষ্টা চলছে : ই-কমার্সে প্রতারণা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ই-কমার্সসহ বিভিন্ন ‘হায় হায় কোম্পানিতে’ প্রতারিত মানুষের লুট হওয়া অর্থ উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। প্রতারকদের উপযুক্ত শাস্তির পাশাপাশি এসব অর্থ উদ্ধার হলে তা পাওনাদারদের ফেরত দেওয়া হবে। ই-কমার্স ও এমএলএম কোম্পানির প্রতারণা ও লাখো মানুষের হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হওয়া প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের দুঃসময়ের সুযোগ নিয়ে কিছু মানুষ টাকা বানানোর জন্য যে প্রতারণা করে এদের উপযুক্ত শাস্তি অবশ্যই হবে। আমরা বসে নেই। বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সরকারপ্রধান বলেন, একবার যখন ধরা হয়েছে তখন টাকাগুলো নিয়ে কোথায় রাখল, কী করল, কী সম্পদ বানাল তা-ও খুঁজে বের করা হবে এবং আমরা চেষ্টা করে যাব এগুলো যদি ফেরত আনা যায়, তাদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা আমরা করব।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, যেমন ধরেন কোকো টাকা পাচার করেছিল। আমরা কিন্তু কিছু টাকা হলেও ফেরত আনতে পেরেছি। খালেদা জিয়ার ছেলের টাকা কিছুটা আমরা ফেরত আনতে পেরেছি। আরও এ রকম বহু আছে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।

প্রতারক কোম্পানিগুলোর বিষয়ে গণমাধ্যমকে সংবাদ প্রকাশ করার আহ্‌বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে যেটুকু করার আমরা কিন্তু সেটুকু করেছি।

কৃষিপণ্য রপ্তানির দিকে নজর দিচ্ছি : সরকার কৃষিপণ্য রপ্তানির দিকে নজর দিচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের আমের স্বাদ একদম আলাদা। এবার আম পাঠালাম। প্রথম প্রথম তো একটু খাওয়াতেই হয়। তারপর আস্তে আস্তে পাঠাতে হয় তাই না... সে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা বিশেষ করে কৃষিজাত পণ্য রপ্তানির দিকে নজর দিচ্ছি। তার জন্য প্রথমেই দরকার ফসল খেত থেকে তোলার পর তা সংরক্ষণ এবং কার্গোয় তুলে দেওয়া। তার জন্য কার্গো ভিলেজ করতে হবে। যেখানে বিভিন্ন চেম্বার থাকবে। কোন ফসল-কোন তরকারিটা হবে, কোনটা কত ডিগ্রি তাপমাত্রায় ভালো থাকে এগুলোর কিন্তু আন্তর্জাতিক গবেষণার ফলাফল আছে। আর আমি নিজে নেদারল্যান্ডসে দেখেছি, আমাদের দেশেও এটা করব। খেত থেকে কার্গোয় নিয়ে আসার জন্য সে ধরনের যোগাযোগব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। এখন আমরা কার্গো ভাড়া করে বিদেশে পাঠাই, কিন্তু আমাদের নিজস্ব কয়েকটা কার্গো দরকার।

ঘর ভাঙল তা দেখালেন, কীভাবে ভাঙল দেখালেন না : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আশ্রয়ণের কিছু কিছু ঘর হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। প্রাকৃতিক কারণেও কিছু ঘর ভেঙেছিল। দুর্নীতির খোঁজ পাই মাত্র নয় জায়গায়। দেড় লাখ ঘরের মধ্যে ৩০০ ঘরে ঝামেলা হয়েছে। যারা ভাঙার পর টেলিভিশনে দেখাল তাদের কেন প্রশ্ন করেনি গণমাধ্যম। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এভাবে কেন ভাঙল এ প্রশ্ন সাংবাদিক ভাইয়েরা করেননি কেন? ঘর ভাঙল তা দেখালেন, কীভাবে ভাঙল দেখালেন না সাংবাদিকরা। জানি, কোনো গণমাধ্যমের কাছ থেকে এর উত্তর পাব না। সাংবাদিকরা কেন এসব বিষয় বিস্তারিত খোঁজ নিলেন না সে প্রশ্ন করেন প্রধানমন্ত্রী।

অচিন পাখি সরাসরি নিউইয়র্ক যাবে : প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘের সম্মেলনে যোগ দিতে এবার আমাদের নিজস্ব বিমানে করে সরাসরি নিউইয়র্কে গিয়েছি। ড্রিমলাইনার নামের এ বিমানটি সবচেয়ে আধুনিক। আমি এর নাম দিয়েছি ‘অচিন পাখি’। এটি অনেক কম দামে আমরা কিনেছি। এখন থেকে এ বিমানে করে সরাসরি কোনো বিরতি ছাড়া ১৪ ঘণ্টায় নিউইয়র্ক পৌঁছাতে সক্ষম হব। এটি আমাদের জন্য বড় মাইলফলক। প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনার কারণে অনেক জায়গায় যাতায়াত বন্ধ হয়ে গেছে। তাই আমরা সরাসরি বিমান কিনে এ ব্যবস্থা চালু রাখছি। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাবস্থায় দুর্নীতির কারণে আমাদের বিমান ধ্বংসের পথে ছিল। আমরা নতুন বিমান কিনেছি। আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার চেষ্টা করছি। কে কী সমালোচনা করল আমি তা নিয়ে চিন্তা করি না।

কৃষি খাতে বিভিন্ন গবেষণার প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, গবেষণা ছাড়া আমরা কোনো কিছু আবিষ্কার করতে পারব না। আমরা হাইব্রিড ধান উৎপাদন করেছি। আমাদের যেহেতু বন্যা হয়, সেই সঙ্গে সবজি, তরি-তরকারি, কবে শীতকাল আসবে, কবে ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম খাব? এখন সারা বছরই খাওয়া যাচ্ছে। এগুলো সবই গবেষণার ফল। এখন চেরি ফল হচ্ছে, আর অন্য সব হচ্ছে। আমার দেশি মাছ হারিয়ে যাওয়ার পথে ছিল। কিন্তু আমাদের গবেষণার ফল হিসেবে এখন সব ধরনের মাছ পাওয়া যাচ্ছে। লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশন নেটওয়ার্কের (এসডিএসএন) পক্ষ থেকে এসডিজি অর্জনে সর্বোচ্চ সাফল্যের জন্য আমাকে পুরস্কার দেওয়া হয়। মহামারীর মধ্যেও বাংলাদেশ যে অবিচলভাবে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে এগিয়ে যাচ্ছে; এ পুরস্কার তারই বিশ্বস্বীকৃতি। আমি আমার এ পুরস্কার দেশের জনগণকে উৎসর্গ করছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘের এবারের অধিবেশনে রোহিঙ্গা সমস্যা ও এর স্থায়ী সমাধানের বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়, যা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখবে বলে আমি আশা করি। শেখ হাসিনা বলেন, করোনা মহামারী শুরু হওয়ার প্রায় দুই বছর পর এবারই প্রথম আমি দেশের বাইরে সশরীরে কোনো আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিই। নিউইয়র্কে অবস্থানকালে আমার অত্যন্ত ব্যস্ত সময় কাটে। তিনি বলেন, এবারের অধিবেশনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল করোনা মহামারী থেকে টেকসই উত্তরণ। কভিড-১৯ টিকার সর্বজনীন প্রাপ্যতা, সহজলভ্যতা ও মহামারী থেকে টেকসই পুনরুদ্ধার স্বভাবতই আলোচনায় প্রাধান্য পেয়েছে। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন, নারীর ক্ষমতায়ন, সমতা ও অন্তর্ভুক্তি, বর্ণবাদ, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট তথা এসডিজি, পারমাণবিক অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণ ইত্যাদি বিষয় আলোচনায় উঠে এসেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রতিবারের মতো এবারও আমি বাংলায় বক্তব্য রাখি। তবে আমি কভিডমুক্ত একটি বিশ্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে টিকার সর্বজনীন সাশ্রয়ী মূল্যে প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করি। শেখ হাসিনা বলেন, টিকা বৈষম্য দূরীকরণে আমি কডিড-১৯ টিকাকে বৈশ্বিক সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করার জন্য বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্‌বান জানাই। তিনি বলেন, চলমান মহামারীর প্রকোপে শিক্ষাব্যবস্থার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা ও টেকসই পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে ডিজিটাল সরঞ্জামাদি ও সেবা, ইন্টারনেটের সুযোগ-সুবিধার সহজলভ্যতা ও শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখপূর্বক আমি জাতিসংঘকে অংশীদারি ও প্রয়োজনীয় সম্পদ নিশ্চিত করার জন্য অনুরোধ জানাই। অভিবাসী বহনকারী দেশগুলোকে অভিবাসীদের ন্যায়সংগত অধিকার, তাদের কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্য এবং কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য আহ্‌বান জানাই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সম্পর্কে আমি আবারও বিশ্বনেতাদের স্মরণ করিয়ে দিই যে রোহিঙ্গা সংকটের সৃষ্টি মিয়ানমারে, সমাধানও রয়েছে মিয়ানমারে। রাখাইন রাজ্যে তাদের মাতৃভূমিতে টেকসই ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের মাধ্যমেই কেবল এ সংকটের স্থায়ী সমাধান হতে পারে। আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ বিষয়ে গঠনমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করার অনুরোধ জানাই।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর