বুধবার, ৬ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা
ছাত্রলীগ নেতাদের শেখ হাসিনা

সংগঠন করলেই চাকরি দিতে পারব না, মেধা দিয়েই নিতে হবে

রফিকুল ইসলাম রনি

সংগঠন করলেই চাকরি দিতে পারব না, মেধা দিয়েই নিতে হবে

ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের পড়াশোনায় আরও বেশি মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আধুনিক ও প্রযুক্তি শিক্ষায়ও বেশি করে মনোযোগ দিতে হবে। প্রতিযোগিতার যুগে মেধার বিকল্প নেই। গত সোমবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আরও বলেন, শুধু রাজনীতি করলেই হবে না। আগে ভালো ছাত্র হতে হবে। পড়াশোনায় বেশি মনোযোগী হবে। পড়ালেখার বিকল্প নেই। এখন সবখানেই প্রতিযোগিতা। আমি কিন্তু অন্যদের মতো নই, যে আমার সংগঠন করলেই চাকরি দিয়ে দেব। আমি তা  পারব না। সবাইকে মেধা দিয়েই চাকরি নিতে হবে। এ জন্য রাজনীতির পাশাপাশি প্রচুর পড়াশোনা করতে হবে। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্র সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে গণভবনে গত সোমবার সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দীর্ঘ সময় সংবাদ সম্মেলন শেষে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী নানা ইস্যু নিয়ে আলাপ করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি সনজিদ চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি মো. ইব্রাহীম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সাঈদুর রহমান হৃদয়, দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান, সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। এ প্রসঙ্গে ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা নেত্রীর (শেখ হাসিনা) সঙ্গে সোমবার সৌজন্য সাক্ষাৎ করি। করোনাকালে অসহায় মানুষকে খাদ্য পৌঁছে দেওয়া, লাশ দাফন করা, শ্রমিক সংকটের সময়ে কৃষককে ধান কেটে গোলায় তুলে দেওয়ায় আমাদের ধন্যবাদ দেন নেত্রী। এ ছাড়াও ক্যাম্পাস খোলা, হল কমিটি করা, সংগঠন নিয়ে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। নেত্রী আমাদের কর্মকান্ডের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং আমরা যেভাবে ছাত্রলীগের কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছি তা অব্যাহত রাখতে বলেছেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘদিন নেত্রীর সঙ্গে দেখা করতে পারিনি। গত সোমবার আমরা প্রিয় নেত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য সময় পেয়ে। প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী অনেক কথা বলেছি। নেত্রীও প্রাণ খুলে কথা বলেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন পড়ালেখার ওপর। তিনি বলেছেন, আধুনিক ও প্রযুক্তি শিক্ষায়ও ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বেশি করে মনোযোগ দিতে হবে। প্রতিযোগিতার যুগে মেধার বিকল্প নেই। প্রতিযোগিতার মধ্যে মেধা দিয়েই চাকরি নিতে হবে।  সূত্র জানায়, শুরুতেই ছাত্রলীগ নেতাদের কথা বলতে দেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য তাদের কর্মকান্ড তুলে ধরেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে করণীয় কী এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা চান। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা আসুক। চেনা পরিবেশে ফিরে আসুক তারা। তবে শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক পরিবেশ যেন বিঘ্ন না ঘটে সেজন্য সেদিকটা লক্ষ্য রাখতে হবে। কেউ যেন শিক্ষার্থীদের ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কোনো বিষয়ে সমস্যা হলে কিংবা সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে ছাত্রলীগের দেখভালের দায়িত্বরত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় চার নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, বাহাউদ্দিন নাছিম ও বি এম মোজাম্মেল হকের পরামর্শ নিতে বলেন তিনি।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের সাংগঠনিক অনেক বিষয়ে নেত্রী পরামর্শ দিয়েছেন। এর মধ্যে ছাত্রলীগ নেতাদের পড়াশোনায় আরও বেশি মনোযোগী হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে সংগঠনকে ঢেলে সাজাতে, সরকার শিক্ষা ক্ষেত্রে কী কী উন্নয়ন করেছে, সেসব পদক্ষেপ শিক্ষার্থীদের মাঝে তুলে ধরতে বলেছেন।

সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সঙ্গে আলাপকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হল কমিটির বিষয়ে কথা বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি সনজিদ চন্দ্র দাস। তিনি বলেন, অনেক দিন হলো ঢাবির হল কমিটি হয় না। এতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা দেখা দিয়েছে। তখন শেখ হাসিনা বলেন, তাড়াহুড়ো না করে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর পরিস্থিতি দেখ, তার পর ধীরেসুস্থে কমিটি দেওয়ার প্রস্তুতি নাও। আরেকটি সূত্র জানায়, আলাপকালে প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগ নেতাদের বলেন, করোনা সংক্রমণ তো এখন অনেক কমে গেছে। এখন তোমরাও সংগঠন গোছানোর কাজ শুরু কর।

ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রথমে খুব মনোযোগ দিয়ে নেত্রী আমাদের কথা শুনেছেন। পরে সংগঠনকে গতিশীল করতে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন, সরকারের অর্জনগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরতে নির্দেশনা দিয়েছেন। বিশেষ করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে তরুণ ভোটারদের নৌকার পক্ষে টানতে উদ্যোগ নিতে বলেছেন। রাজনীতির পাশাপাশি পড়ালেখার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর