বুধবার, ৬ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

জোট ফ্রন্ট ছাড়াই চলবে বিএনপি

মাহমুদ আজহার

জোট ফ্রন্ট ছাড়াই চলবে বিএনপি

জোট-ফ্রন্ট ছাড়াই সামনে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। তবে যুগপৎ আন্দোলনে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে পাশে চায় দলটি। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ও বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবির আন্দোলনে যারা সহমত হবেন তাদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফরমের চিন্তাভাবনা করছে দলটি। একপর্যায়ে এক দফা দাবিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে যাবে বিএনপি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে করণীয় নির্ধারণে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পৃথকভাবে সংলাপ করার চিন্তাভাবনাও রয়েছে। ৮ ও ৯ অক্টোবর পেশাজীবীদের সঙ্গে বৈঠকের পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার দিনক্ষণ নির্ধারণ করবে বিএনপি। দলীয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সম্প্রতি দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন বিএনপির হাইকমান্ড। বৈঠকে নেতাদের মতামত নিয়ে একটি সারসংক্ষেপও তৈরি করা হয়। বৈঠকে অধিকাংশ নেতাই জোট-ফ্রন্ট বাদ দিয়ে সরকারবিরোধী সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের পক্ষে মত দেন। একই সঙ্গে তারা যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার পরামর্শ দেন। তারই ধারাবাহিকতায় শনিবার স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নেতাদের মতামত নিয়ে  আলোচনা হয়। স্থায়ী কমিটির সবাই জোট ও ফ্রন্ট ছাড়াই পথচলার ব্যাপারে একমত হন। জানা যায়, রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বিএনপির তৃণমূল নেতারা হাইকমান্ডের কাছে অভিযোগ করেন বিগত জাতীয় নির্বাচনের আগে গড়ে ওঠা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্ব বিএনপির হাতছাড়া হয়। নেতৃত্বকে হায়ার করা হয়। সামনে যে প্ল্যাটফরম গড়ে তোলা হবে কিংবা যুগপৎ আন্দোলন করা হবে তাতে বিএনপিকেই নেতৃত্ব দিতে হবে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা এখন দলীয় কর্মকান্ড নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছি। ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণে দলের নেতাদের ধারাবাহিক বৈঠক চলছে। এরপর আমরা ২০-দলীয় জোট বা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, পেশাজীবী বা বিশিষ্টজনদের সঙ্গেও বসে মতামত নিতে পারি। তবে এটা স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে। তা ছাড়া বেশ কিছুদিন ধরে করোনা পরিস্থিতিসহ নানা কারণে জোট ও ফ্রন্টের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়নি। গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বেগম খালেদা জিয়ার কারামুক্তি ও জনগণের ভোটাধিকার আদায়ে সবাইকে নিয়ে আমরা যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তুলতে চাই।’ জানা যায়, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এখন পুরোপুরি নিষ্ক্রিয়। ফ্রন্টকে আর টেনে তুলতে কেউই এগিয়ে আসছেন না। বিএনপিও আর ফ্রন্টগত কোনো ঐক্য চায় না। প্রতিটি দলের সঙ্গে ন্যূনতম দাবিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন চায় দলটি। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে বিএনপি, গণফোরাম, নাগরিক ঐক্য, জেএসডি ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ মিলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়। নির্বাচনের পর এ জোটের শরিকদের মধ্যে প্রথমে মনোমালিন্য, এরপর বিভক্তি দেখা দেয়। জোট থেকে বেরিয়ে যায় বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর দল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। ভাঙনে পড়ে আ স ম আবদুর রবের জেএসডি ও ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম। আ স ম রবের নেতৃত্বে জেএসডি এখন বিএনপির সঙ্গে থাকলেও আবদুল মালেক রতনের নেতৃত্বে জেএসডি আলাদা হাঁটছে। গণফোরামে টানাপোড়েন এখনো কাটেনি। বিভক্তির কারণে সম্মেলন না হওয়ায় দলটির এখনো কেন্দ্রীয় কমিটি করা যায়নি। দলটির কার্যক্রম স্থবিরপ্রায়। এ প্রসঙ্গে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে এখন অকার্যকর বলাই যায়। কারণ একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপির সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের কোনো বৈঠক হয়নি। বিএনপির ধারাবাহিক বৈঠকে নেতারা ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে বিশেষ করে ড. কামালকে নিয়ে অস্বস্তির কথা জানিয়েছেন। এখন এটাকে আর সে অর্থে ঐক্যফ্রন্ট বলা যাবে কি না বুঝতে পারছি না।’ এদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট এখন অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এ জোট এখন অনেকটাই ‘কাগুজে’। জোটের অন্য শরিক দলগুলোও হতাশ। সবাই যার যার মতোই পথ চলছে। আবার কেউ কেউ চাপে পড়ে কিংবা প্রলোভনে জোটও ত্যাগ করছে। সর্বশেষ শুক্রবার সপ্তম দল হিসেবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট ত্যাগ করে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল খেলাফত মজলিস। জোট ছাড়া নিয়ে বিএনপির তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। ২০ দলের অস্তিত্ব আছে কি না জানতে চাইলে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক বলেন, ‘একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর জোটের কোনো কার্যক্রম নেই। তাই এর কোনো অস্তিত্বও নেই। বিএনপি এখন নিজেদের মধ্যে বৈঠক-শলাপরামর্শ করছে। এটাকে আমি স্বাগত জানাই।’ বিএনপির দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘আমরা পেশাজীবীদেরও মতামত নেব। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও বসতে পারি। সে ক্ষেত্রে জোট বা ফ্রন্টকে আলাদাভাবে কিছু বলার প্রয়োজন পড়ে না।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর