শুক্রবার, ৮ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

দক্ষ কর্মীই যাবে প্রবাসে

ট্রেনিং করলে বিনামূল্যে পাসপোর্ট সেন্টারেই চাকরির ব্যবস্থা

জুলকার নাইন

ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসা বাংলাদেশের বিদেশি শ্রমবাজারে এখন চাহিদা শুধুই দক্ষ কর্মীদের। বিপুল সংখ্যক অদক্ষ কর্মী পাঠানোর দিন প্রায় শেষ। এখন সবাই চায় দক্ষ কর্মী। এর মধ্যেই কমে আসতে শুরু করেছে দেশের রেমিট্যান্সের পরিমাণও। আর লাখ লাখ অদক্ষ শ্রমিক পাঠিয়ে রেমিট্যান্সের পরিমাণও প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম। তাই বিশ্ববাস্তবতা মোকাবিলায় কর্মীদের দক্ষ করে বিদেশে যাওয়ার ওপর জোর দিয়েছে সরকার। বিদেশগমনেচ্ছুদের ট্রেনিং নিতে উদ্বুদ্ধ করতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নিয়েছে নানান উদ্যোগ। নেওয়া হয়েছে নামমাত্র খরচে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, প্রশিক্ষণের মধ্যেই পাসপোর্ট ও বিএমইটি নিবন্ধন এবং প্রশিক্ষণ থেকে চাকরির ব্যবস্থা।

প্রবাসী কল্যাণ সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীনের মতে, বাংলাদেশ থেকে সাত লাখ কর্মী পাঠালাম কিন্তু সেই তুলনায় কত পরিমাণ রেমিট্যান্স পেলাম। ফিলিপিন্স বা ভারত যত সংখ্যক কর্মী পাঠিয়ে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স আনে তার সঙ্গে তুলনা করলে বাংলাদেশের অনেক কম। তার মানে হচ্ছে বাংলাদেশের কোয়ালিটি মাইগ্রেশনের দিকে জোর দিতে হবে। কিছু দিনের জন্য কর্মী পাঠানোর সংখ্যার ওপর গুরুত্ব কম দিতে হবে। প্রবাসী কল্যাণ সচিব বলেন, মানুষকে যদি দক্ষতা দেওয়া যায় তাহলে তার জীবিকার ব্যবস্থা সে নিজেই করে নিতে পারে। তার চাকরির কোনো অসুবিধা হবে না। মানুষের দক্ষতা যত বাড়ানো যায় তার জীবিকার নিশ্চয়তা ততই বাড়ে। এ কারণেই আমরা অত্যন্ত সুচিন্তিতভাবেই মুজিববর্ষের স্লোগান নিয়েছিলাম, ‘মুজিববর্ষের আহ্বান, দক্ষ হয়ে বিদেশ যান’। আমাদের ৬৪টা টিটিসি ও ৬টা আইএমটি আছে, আরও ৪০টা আসবে। কিন্তু এতসব সুবিধা থাকার পরও টিটিসিগুলো থেকে সত্যিকার অর্থে কী অর্জন তা নিয়ে আমাদের হতাশা আছে। তাই আমরা নতুন ভাবে এগুলো নিয়ে ভাবনা শুরু করেছি। অনেকগুলো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আমরা জানি, একজন দক্ষ কর্মী পাঠিয়ে দশজন অদক্ষ কর্মীর চেয়ে বেশি রেমিট্যান্স উপার্জন করা সম্ভব।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. শহীদুল আলম জানান, মাত্র ১২ টাকা মাসিক বেতনে তিন মাস থেকে দুই বছরের কারিগরি প্রশিক্ষণ করানোর সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। এখানে খরচটা একেবারেই নামমাত্র। তবে প্রশিক্ষণটা হবে মানসম্পন্ন এবং একেবারেই কর্মজীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বছরে প্রায় ৩০ হাজার জনকে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ কর্মী হিসেবে তৈরি করার ব্যবস্থা ইতিমধ্যেই করা হয়েছে। ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে অনলাইনে। আগ্রহীরা যে কোনো ট্রেনিং সেন্টারে কোন কোর্স চলমান আছে তা অনলাইনে দেখেই আবেদন করতে পারবে এবং আসন সংখ্যা অনুসারে ভর্তির সুযোগ পাবে। দুই হাজার প্রশিক্ষণার্থী আবাসিকভাবেও প্রশিক্ষণ নিতে পারবে।

বিএমইটি মহাপরিচালক বলেন, ব্যাপকভাবে দক্ষ কর্মী তৈরির এই উদ্যোগে তরুণ যুবাদের আগ্রহী করতেও বেশ কয়েক ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আছে যারা ট্রেনিং নিতে আসবেন তাদেরকে পাসপোর্ট তৈরির সব ধরনের সাপোর্ট দেওয়া হবে। তাদের ফরম পূরণ থেকে শুরু করে বায়োমেট্রিক সুবিধাও টিটিসিতে দেওয়া হবে। চেষ্টা চলছে ট্রেনিং নিলে পাসপোর্টের খরচ যে কোনো তহবিল থেকে ব্যবস্থা করিয়ে দেওয়ার। পাসপোর্টের পাশাপাশি একজন কর্মীর বিদেশে যেতে যে বিএমইটি নিবন্ধন করতে হয় সেটাও ট্রেনিং সেন্টারে করিয়ে দেওয়া হবে। প্রশিক্ষণ শেষে সবাই পাবে সার্টিফিকেট। সবেচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো প্রশিক্ষণ শেষে ট্রেনিং সেন্টারগুলোতেই জব ফেয়ার করার চিন্তা করা হচ্ছে। ফলে ট্রেনিং শেষ করে প্রবাসে চাকরির সুযোগ পাবেন অনেকে।

জানা যায়, প্রতি বছর যে মানুষ বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। এর মাত্র এক-তৃতীয়াংশ প্রশিক্ষিত। এদের মধ্যে অধিকাংশই মধ্যপ্রাচ্যে যাচ্ছেন। কেউ কেউ কোম্পানির ভিসায় গেলেও কাজ না জেনে অদক্ষ হয়ে যাওয়ার কারণে ভোগান্তিতে পড়ছেন পদে পদে। এভাবে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের প্রায় ১ কোটি মানুষ বিভিন্ন কাজ করছেন। তার বেশির ভাগই আধা দক্ষ ও অদক্ষ হিসেবে বিদেশে গেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক জরিপ অনুযায়ী- বাংলাদেশ থেকে বিদেশে যাওয়া কর্মীদের ৬২ শতাংশ অদক্ষ, ৩৬ শতাংশ আধা দক্ষ ও দুই শতাংশ মাত্র অতি দক্ষ। যে কারণে এসব কর্মীর মজুরিও কম। বাংলাদেশের প্রতিযোগী ভারত, নেপালের মতো দেশগুলো যেখানে দক্ষ কর্মী পাঠানোর সংখ্যা প্রতিনিয়তই বাড়াচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশের দক্ষ কর্মী পাঠানোর সংখ্যা বাড়ছেই না বরং কমছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর