এক সপ্তাহের ব্যবধানে পিঁয়াজের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হওয়ার পর এখন পণ্যটির দাম কমাতে নানামুখী তৎপরতা শুরু করেছে সরকার। ডিসিদের চিঠি দিয়ে বাজার মনিটরিং জোরদার করার পাশাপাশি উৎপাদন, মজুদ ও সরবরাহ সংক্রান্ত তথ্য চাওয়া হয়েছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পিঁয়াজের ট্রাক ছাড়ের বিষয়ে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। পিঁয়াজ আমদানির জন্য দ্রুত অনুমোদন (আইপি) দিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ উইংকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। উপরন্তু নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দাম কমাতে করণীয় নির্ধারণে ১১ অক্টোবর জরুরি বৈঠক ডেকেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। ওই বৈঠকে পিঁয়াজ আমদানির ওপর আরোপিত ৫ শতাংশ কর প্রত্যাহারের প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, গত বছরের তুলনায় অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বেশি হওয়ায় এবং সরবরাহ স্বাভাবিক থাকায় এ বছর পিঁয়াজের দাম বাড়বে না বলে সরকারের কাছে তথ্য ছিল। কিন্তু হঠাৎ ‘গুজব’ তুলে পণ্যটির দাম বাড়ানোর সুযোগ নিয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। পূজার পর পিঁয়াজ রপ্তানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞা জারি হতে পারে এই গুজব ওঠার পর গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে পণ্যটির দাম ৪০ টাকা কেজি থেকে ৮০ টাকায় উঠেছে। এখন পণ্যটির দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিচ্ছে।
১৬ জেলার ডিসিকে চিঠি : পিঁয়াজ উৎপাদন ও আমদানি হয় এমন ১৬টি জেলার ডিসিকে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ওই চিঠিতে যেসব জেলায় দেশি পিঁয়াজ উৎপাদন হয় সেসব জেলার ডিসিদের বাজার মনিটরিং জোরদার, পিঁয়াজের গুদাম পরিদর্শন এবং বর্তমান মজুদের তথ্য পাঠাতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জেলাগুলো হচ্ছে : পাবনা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, কুষ্টিয়া, নওগাঁ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও নাটোর। এ ছাড়া সীমান্তবর্তী যেসব জেলা দিয়ে পিঁয়াজ আমদানি হয়, এমন জেলাগুলোর ডিসিদের আমদানিকৃত পিঁয়াজের ট্রাক চলাচল নির্বিঘ্ন করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ জেলাগুলো হচ্ছে- কক্সবাজার, সাতক্ষীরা, যশোর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুর, পঞ্চগড় ও লালমনিরহাট।পিঁয়াজের ট্রাক ফেরি পারাপারে অগ্রাধিকার : বিভিন্ন স্থলবন্দর হতে আমদানিকৃত পিঁয়াজের ট্রাক ঢাকাসহ সারা দেশে যাতে নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে সে জন্য ফেরি পারাপারে অগ্রাধিকার দেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গতকাল এ চিঠি পাঠানো হয়। আগে ছাড়তে হবে পিঁয়াজের ট্রাক : বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে গতকাল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে পাঠানো এক চিঠিতে পিঁয়াজের ট্রাক দ্রুত ছাড়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, আমদানিকৃত পিঁয়াজ পরিবহনকারী ট্রাক সীমান্ত এলাকায় আটকে থাকে। বিলম্বিত আনুষ্ঠানিকতা এবং স্থলবন্দরে ট্রাক জটলার কারণে এ ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয় বলে অজুহাত দেখানো হয়। বিষয়টি মনিটরিং করা প্রয়োজন।
আমদানিকৃত পিঁয়াজের কোয়ারেন্টাইন পরীক্ষা দ্রুত করার তাগিদ : পিঁয়াজ আমদানির পর স্থলবন্দরে অবস্থিত উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ উইং থেকে পরীক্ষার সনদ নিতে হয়। এ ছাড়া কৃষিপণ্য হিসেবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে আমদানির অনুমোদন নিতে হয়। এখন সংকটজনক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমদানি অনুমোদন এবং আমদানিকৃত পিঁয়াজের কোয়ারেন্টাইন পরীক্ষা দ্রুত করার জন্য গতকাল কৃষি মন্ত্রণালয়ে আরেকটি চিঠি পাঠানো হয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে।
মূল্য নিয়ন্ত্রণে ১১ অক্টোবর জরুরি বৈঠক বাণিজ্যে : পিঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ১১ অক্টোবর আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ওই বৈঠকে পিঁয়াজের ওপর আরোপিত ৫ শতাংশ আমদানি কর প্রত্যাহারের প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এইচ এম সফিকুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, হিসাব করে দেখা গেছে, পিঁয়াজের ওপর আরোপিত ৫ শতাংশ আমদানি কর প্রত্যাহার করলে পণ্যটির দাম কেজিতে ২ টাকা কমে। ফলে পণ্যটির ট্যাক্স কমানোর জন্য এখন আমরা এনবিআরকে চিঠি লিখছি না। আগামী ১১ অক্টোবর বাণিজ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে যে সভাটি হবে, সেখানে সুপারিশ গৃহীত হলে শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাব দেওয়া হবে এনবিআরকে।