শুক্রবার, ৮ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

ভাতিজাদের ফাঁসাতে মেয়েকে কুপিয়ে হত্যা

পরামর্শ আইনজীবীর আসামি ঠিক করা হয় আগে

কুমিল্লা প্রতিনিধি

জমি নিয়ে বিরোধের জেরে ভাতিজাদের ফাঁসাতে মেয়েকে কুপিয়ে হত্যা করেন বাবা। গতকাল কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম তানভীর সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। তিনি জানান, কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার বসন্তপুর গ্রামের সোলেমান জমি নিয়ে বিরোধের জেরে ভাতিজাদের ফাঁসাতে তার মেয়ে সালমা আক্তারকে (১৪) ১ অক্টোবর হত্যা করেন।

এ হত্যাকান্ডে অংশ নেন সোলেমান ও তার দুই ভাইসহ সাতজন। পরে ২ অক্টোবর বাড়ির পাশের পুকুর থেকে সালমার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর আগে মেয়ে হত্যার ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় তিনজনসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করেন সোলেমান।

জানা যায়, মাদরাসাছাত্রী সালমাকে হত্যার কয়েক দিন আগে নিজেদের কাউকে আহত করে ভাতিজাদের বিরুদ্ধে মামলা করা যায় কি না তা নিয়ে এক আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করেন সোলেমান। এ কাজে সহায়তা করেন সোলেমানের উকিল শ্বশুর আবদুর রহমান। তিনি সম্পর্কে সালমার নানা হন। হত্যাকান্ডের দিন আবদুর রহমানের বাড়িতে মিটিং হয়। পরিকল্পনা করা হয় কাকে কাকে হত্যা মামলার আসামি করা হবে তা নিয়েও। কিন্তু মা ও বাকি সন্তানদের সামনে সালমাকে হত্যা করা যাবে না-এ চিন্তা থেকে খুব কৌশলে স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়ে দেন সোলেমান। সালমা রান্না করবে, এমন কারণ দেখিয়ে তাকে বাড়িতে রেখে দেওয়া হয়। আবদুর রহমানের বাড়িতে পরিকল্পনা করে রাতের কোনো এক সময় ঘরে প্রবেশ করেন সোলেমান ও অন্য খুনিরা।

আসামিদের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম তানভীর জানান, প্রথমে শ্বাসরোধ করা হয় সালমার। তারপর এলোপাতাড়ি গলা, পেট, কাঁধ ও পায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর তাকে পাশের পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়। হত্যাকান্ডের সময় সোলেমান নিজেও অস্ত্র দিয়ে মেয়েকে আঘাত করেন। তাছাড়া সোলেমানের দুই ভাই লোকমান ও বাতেন, প্রতিবেশী আবুল হোসেন, মূল পরিকল্পনাকারী আবদুর রহমান, প্রতিবেশী শফিউল্লাহ ও সোলেমানের বন্ধু খলিল হত্যাকান্ডে অংশ নেন। হত্যাকান্ডের পর সোলেমান ও হত্যাকারীরা সোলেমানের ঘরের বেড়া কেটে নেন। হত্যাকান্ডের চার দিন পর সালমার বাবা সোলেমানকে গলায় ছুরিকাহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পুলিশের ধারণা, ঘটনা ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে নিজের গলায় ছুরি চালান সোলেমান। মাত্র সাত শতক জায়গা নিয়ে ভাতিজাদের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বিরোধ থেকে এমন ঘটনা ঘটে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম তানভীর জানান, এমন নৃশংস ঘটনার মুখোমুখি আগে কখনো হইনি। এ ঘটনায় মেয়ে সন্তানের প্রতি সমাজে এখনো প্রচুর আক্রোশ আছে, তা প্রতীয়মান হয়। হত্যাকান্ডের মূল হোতা আবদুর রহমান ও সোলেমানের বন্ধু খলিলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। বাকিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে। পিতা সোলেমান চিকিৎসাধীন থাকায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়নি।

সর্বশেষ খবর