ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্লট বরাদ্দ নেওয়া এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার (এস কে সিনহা) বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। অসৎ উদ্দেশ্যে নিজ ক্ষমতার অপব্যবহার করে ৭ কোটি ১৪ লাখ ৫ হাজার ৮৬৫ টাকার সম্পদ জ্ঞাত আয়বহির্ভূতভাবে অবৈধ পন্থায় বেনামে অর্জন ও মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ধারায় গতকাল মামলাটি করা হয়। মামলায় বাদী হয়েছেন দুদকের উপপরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধান।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা তার নিজ নামে ইতিপূর্বে রাজউক থেকে উত্তরা আবাসিক এলাকায় একটি প্লট বরাদ্দ নেন। পরবর্তীতে তিনি অসৎ উদ্দেশ্যে নিজ ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে প্রতারণার আশ্রয়ে তার ভাই নরেন্দ্র কুমার সিনহার নামে রাজউক পূর্বাচল প্রকল্পে প্লটের জন্য আবেদন করান এবং ৩ কাঠার একটি প্লট বরাদ্দ করান। এরপর তিনি তার ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ওই ৩ কাঠার প্লটটিকে ৫ কাঠার প্লটে উন্নীত করান। পরে পুনরায় নিজ ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে পূর্বাচল থেকে প্লট স্থানান্তর করে উত্তরার সেক্টর-৪, রোড নং-৬, বাড়ি নং-১/এ প্লটটি রাজউক থেকে অনুমোদন করান। এই প্লটে তিনি ৯ তলা ভবন নির্মাণ করেছেন। দুদকের অনুসন্ধানকালে নিরপেক্ষ প্রকৌশলীর প্রতিবেদন অনুযায়ী উত্তরার ওই ৯ তলা ভবনটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৬ কোটি ৩১ লাখ ৫ হাজার ৮৬৫ টাকা। এ ছাড়া প্লটের মূল্য হিসাবে রাজউককে পরিশোধ করা হয় ৭৫ লাখ টাকা। সে হিসাবে প্লটের মূল্যসহ ভবন নির্মাণে মোট ব্যয় ৭ কোটি ৬ লাখ ৫ হাজার ৮৬৫ টাকা। ওই সম্পদের মধ্যে কেবল জনৈক খালেদা চৌধুরীর কাছ থেকে ফ্ল্যাট বিক্রির অগ্রিম বাবদ ৭০ লাখ টাকা পেয়েছেন। সেই টাকা বাদে অবশিষ্ট ৬ কোটি ৩৬ লাখ ৫ হাজার ৮৬৫ টাকা এবং জনৈক শংখজিত সিংহর নামীয় হিসাবে স্থায়ী ও নগদে জমা আছে ৭৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ ৭ কোটি ১৪ লাখ ৫ হাজার ৮৬৫ টাকার সম্পদ এস কে সিনহা অসৎ উদ্দেশে নিজ ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে নিজ ভাই ও নিজের আত্মীয়ের নামে বেনামে অর্জন করেছেন, যার কোনো বৈধ উৎস নেই বা তার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ বলে দাবি করেছে দুদক। এর আগে জালিয়াতির মাধ্যমে ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) ঋণের ৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে করা মামলার বিচারকাজ শেষে রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ ছিল। আগামী ২১ অক্টোবর এই মামলায় রায় হওয়ার কথা।