রবিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

যুদ্ধাপরাধের ২৭ আপিল নিষ্পত্তির অপেক্ষায়

ঝুলছে কায়সার আজহারের রিভিউ আবেদন

আরাফাত মুন্না

যুদ্ধাপরাধের ২৭ আপিল নিষ্পত্তির অপেক্ষায়

মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা, খুন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের রায়ের বিরুদ্ধে করা ২৭টি আপিল নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে। এ ছাড়াও দুই যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদন্ডের বিরুদ্ধে করা রিভিউ আবেদন শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। আপিল ও রিভিউ নিষ্পত্তি না হওয়ার পেছনে করোনা মহামারী পরিস্থিতিকে দায়ী করছে রাষ্ট্রপক্ষ। এসব আপিল শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি জেনারেল। তিনি বলেন, শিগগিরই শুনানির উদ্যোগ নেওয়া           হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন শাখার তথ্য অনুযায়ী- যেসব যুদ্ধাপরাধীর আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে তারা হলেন মোবারক হোসেন, আবদুল জব্বার রাজ্জাক, মাহিদুর রহমান, সিরাজুল হক ওরফে সিরাজ মাস্টার, খান মো. আকরাম হোসেন, ফোরকান মল্লিক, ওবায়দুল হক তাহের, আতাউর রহমান ননী, মজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়া, মহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়া, সামসুদ্দিন আহমেদ, শামসুল হক, এস এম ইউসুফ আলী, মো. সাখাওয়াত হোসেন, বিল্লাল হোসেন, মো. আবদুল লতিফ, ইউনুছ আহমেদ, মো. আমির আহমেদ ওরফে আমির আলী, মো. জয়নুল আবেদীন, মো. আবদুল কুদ্দুস, এ গনি ওরফে এ গনি হাওলাদার, মো. রিয়াজ উদ্দিন ফকির, মো. ইসাহাক সিকদার, মো. আবদুল কুদ্দুস, মো. রনজু মিয়া ও মো. খলিলুর রহমান। এসব আসামির বেশির ভাগেরই বিচারে ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদন্ড দিয়েছে।

এদিকে ২০১৯ সালের ১৪ জানুয়ারি দেওয়া রায়ে যুদ্ধাপরাধী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের মৃত্যুদন্ড বহাল রাখে আপিল বিভাগ। এরপর আপিল বিভাগে এ রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে একই বছর ২৯ অক্টোবর আবেদন করেন কায়সার। অন্যদিকে ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদন্ড বহাল রাখে আপিল বিভাগ। রায়ের অনুলিপি পাওয়ার পর গত বছর ১৯ জুলাই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আইনজীবীদের মাধ্যমে আবেদন করেন আজহার। দুটি রিভিউ আবেদনই শুনানির জন্য অপেক্ষায় রয়েছে।

জানা গেছে, শুরুতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের সুযোগ ছিল না। ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। পরে তার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শাহবাগে গড়ে ওঠে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন। এরই ধারাবাহিকতায় ট্রাইব্যুনালের দন্ডাদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের আপিলের সমান সুযোগ রেখে জাতীয় সংসদে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) সংশোধন বিল পাস হয়। সেই থেকে ট্রাইব্যুনালের দন্ডাদেশের বিরুদ্ধে কারাগারে থাকা আসামিরা যেমন আপিলের সুযোগ পেয়ে আসছেন, একইভাবে দন্ডাদেশ বাড়াতে রাষ্ট্রপক্ষও আপিল করার সুযোগ পাচ্ছে।

যুদ্ধাপরাধ মামলার আপিল শুনানির বিষয়ে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘদিন আদালতের নিয়মিত কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এ কারণে সব মামলার শুনানিই কিছুটা পিছিয়েছে। এ ছাড়া আপিল বিভাগ বর্তমানে পুরনো ডেথ রেফারেন্স নিষ্পত্তি করছে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ শুনানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেল দেশে ফিরলে এবং উচ্চ আদালতের চলমান ছুটি শেষ হলে যুদ্ধাপরাধের এসব আপিলের বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে।

ট্রাইব্যুনাল সংশ্লিষ্টরা জানান, ট্রাইব্যুনালের দন্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিলের প্রথম রায়ে আবদুল কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদন্ড দেয় আপিল বিভাগ। ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য আপিল বিভাগে আসা মামলাগুলোর মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র সাতটি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। চূড়ান্ত নিষ্পত্তির পর মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়েছে ছয়জনের। তারা হলেন আবদুল কাদের মোল্লা, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, মতিউর রহমান নিজামী ও মীর কাসেম আলী। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদন্ডের রায়ের পর ২০১৫ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর এক রায়ে তার সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদন্ড দেয় আপিল বিভাগ। রিভিউতে ২০১৭ সালের ১৫ মে আমৃত্যু কারাদন্ড বহাল থাকে সাঈদীর। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযম (৯০ বছরের কারাদন্ড), আবদুল আলীম (আমৃত্যু কারাদন্ড), আবদুস সুবহানসহ (মৃত্যুদন্ড) মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত মাহবুবুর রহমান, আকমল আলী তালুকদার ও মোসলেম প্রধান আপিল করলেও পৃথক সময়ে তাদের স্বাভাবিক মৃত্যু হওয়ায় আপিলগুলো কার্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়।

সর্বশেষ খবর