রাজধানীর আমিনবাজারে তুরাগ নদে যাত্রীবাহী ট্রলার ডুবির ঘটনায় চার শিশুসহ পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস। তারা হলো- সায়লা বিবি, তার আড়াই বছরের ছেলে রিপন, সায়লার ভাগিনা ৪ বছরের শিশু আরমান। বাকি দুই শিশুর পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ফায়ার সার্ভিস ধারণা করছে, নিখোঁজ অন্য দুজনেরও মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই দুজনের সন্ধান মেলেনি। আজ থেকে আবার উদ্ধার অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।
এদিকে, নৌকাডুবির ঘটনায় তুরাগ পাড়ে স্বজনদের কান্নার রোল পড়ে যায়। সাঁতরে তীরে আসা স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে তুরাগ পাড়ের বাতাস। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় জমায় অন্য স্বজনরা। একপর্যায়ে ডুবুরিরা লাশের সন্ধান পেলে কান্না আরও বাড়তে থাকে। অনেকে স্বজনের অপেক্ষায় নদের দিকে তাকিয়ে ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে কাঁদতে থাকেন। গতকাল সকালে যাত্রীবাহী ট্রলারের সঙ্গে একটি বালুবাহী বাল্কহেডের ধাক্কায় ডুবে যায় ট্রলারটি। এ ঘটনায় নিখোঁজ হয় ট্রলারের নারী ও শিশুসহ সাত যাত্রী। পরে উদ্ধার অভিযান শুরু করে ফায়ার সার্ভিস, নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের ডুবুরিরা। পর্যায়ক্রমে উদ্ধার করা হয় চার শিশু ও এক নারীর লাশ। এ ঘটনায় বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক ফজলুর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ডুবে যাওয়া ট্রলারে ধাক্কা দেওয়া বালুবাহী বাল্কহেডটি জব্দের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে নৌ পুলিশ ও বিআইডব্লিউটিএ। তলিয়ে যাওয়া সাত নারী ও শিশু হলেন- সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জের হজারিয়া গ্রামের শফিকুলের স্ত্রী মোসা. রূপায়ণ, তার ছেলে আরমান, মেয়ে জেসমিন, রূপায়ণের বোন কাবিলের স্ত্রী মোসা. সায়লা বিবি, সায়লার আড়াই বছরের ছেলে রিপন এবং আরমিনা (৮) ও ফারহান মনি (৫) নামে দুই শিশু। ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা মো. রায়হান জানিয়েছেন, তলিয়ে যাওয়া সাতজনের মধ্যে পাঁচজন একই পরিবারের। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ভোরে একটি ট্রলারে তুরাগ নদের উত্তরপাশে আমিনবাজার থেকে গাবতলী ল্যান্ডিং স্টেশনের দিকে যাচ্ছিলেন ১৮ জন শ্রমিক। তাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। ওই নারীরা মূলত ল্যান্ডিং স্টেশনের পাশে কয়লার ডিপোতে কাজ করতেন। কাজের সময় ওই সন্তানদের পাশে বসিয়ে রাখতেন তারা। তুরাগ নদে পারাপারের সময় হঠাৎ একটি বালুবাহী বাল্কহেডের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ট্রলারটি ডুবে যায়। এ সময় এক নারী ও ছয় শিশু তলিয়ে যায়। অন্যরা সাঁতরে নদের তীরে উঠে আসে। পরে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেওয়া হয়। সাভার ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যারহাউস ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান বলেন, ঘটনার পরপরই তাদের একটি ইউনিট উদ্ধারকাজ শুরু করেন। পরে ফায়ার সার্ভিস সদর দফতর থেকে আরও তিনটি ইউনিট উদ্ধারকাজে যোগ দেয়। এরপর পর্যায়ক্রমে নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের ডুবুরিরা উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয়। বেলা ১টার দিকে দুই শিশু ও এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে আরও দুই শিশুর সন্ধান পায় ডুবুরিরা। বিকাল ৩টার দিকে ডুবে যাওয়া মাঝারি সাইজের ট্রলারটি ১১০ ফুট গভীর থেকে ধরলা-৪ ক্রেন বোট দিয়ে ওপরে তোলা হয়। আমিনবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সবুর খান বলেন, ট্রলার ডুবির ঘটনায় উদ্ধার হওয়া মরদেহগুলো নৌপুলিশের হেফাজতে আছে। নৌপুলিশের এসপি খন্দকার ফরিদুল ইসলাম জানান, নৌপুলিশের পক্ষ থেকে হত্যা মামলা করা হবে। প্রাথমিকভাবে বাল্কহেডটি চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। তবে দ্রুত বাল্কহেডটি চিহ্নিত করা সম্ভব হবে।