রবিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

প্রজ্ঞাপন জারি করে শিল্পে কাঁচামাল আমদানিতে বাধা দেওয়া যাবে না

আমদানি নীতি সংশোধনের প্রস্তাব এনবিআরের

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

কোনো আইন বা প্রজ্ঞাপন জারি করে শিল্পের পণ্য ও কাঁচামাল আমদানিতে যাতে বাধা সৃষ্টি না করা যায়- সে লক্ষ্যে প্রস্তাবিত আমদানি নীতিতে একটি ধারা সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। রাজস্ব আদায়কারী সংস্থাটি তার প্রস্তাবে বলেছে, অন্য আইনে যাই থাকুক না কেন আমদানি নীতি আদেশ জারির পর শিল্প খাতের জন্য বৈধ ও কারখানায় ব্যবহৃত হবে- এমন সব নিয়মিত পণ্য ও কাঁচামালের ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা যাবে না।  মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আগামী তিন বছরের (২০২১-২০২৩) জন্য নতুন একটি আমদানি নীতি প্রণয়ন করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, যেটির খসড়া মতামতের জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থায় পাঠানো হয়েছে। ওই খসড়ার ওপর ২৭ সেপ্টেম্বর কিছু বিষয় সংযোজন, বিয়োজন ও সংশোধনের লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি মতামত পাঠিয়েছে এনবিআর, যেটিতে স্বাক্ষর করেন সংস্থাটির সদস্য (কাস্টমস : নীতি ও আইসিটি) সৈয়দ গোলাম কিবরীয়া। প্রস্তাবিত সংশোধনীর পক্ষে যুক্তি দিয়ে এনবিআরের কর্মকর্তারা জানান, আমদানি নীতি আদেশ জারির পর কোনো বিভাগ বা দফতর কর্তৃক আইন, বিধি, প্রজ্ঞাপন বা আদেশের মাধ্যমে শিল্প খাতের কাঁচামাল ও পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে নতুন নতুন শর্ত আরোপ করে থাকে। এতে শিল্পের উৎপাদন ব্যাহত হয়, উদ্যোক্তাদের উৎপাদন ব্যয় বাড়ে, সর্বোপরি দেশের শিল্প খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উপরন্তু এ ধরনের বিধিনিষেধ কোনো কোনো ক্ষেত্রে রপ্তানি পণ্য উৎপাদনেও বাধা সৃষ্টি করে। এ কারণে এনবিআর মনে করছে, শর্ত আরোপের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণের জন্য এ ধরনের বিধান আমদানি নীতিতে সংযুক্ত করা দরকার।

ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের দাবি, আমদানি নীতি আদেশ জারির পরও সরকারের কিছু কিছু সংস্থা সময় সময় বিভিন্ন প্রজ্ঞাপন ও আদেশ জারি করে যাতে তারা বিপাকে পড়েন।

  আমদানি নীতিতে অনুমোদন থাকার পরও কোনো সংস্থার হঠাৎ জারি করা বিধি-নিষেধের কারণে প্রয়োজনীয় শিল্পপণ্য ও কাঁচামাল ছাড় করাতে পারেন না তারা। এর ফলে শুধু উৎপাদন ব্যাহত হয় তাই নয়, অনেক ক্ষেত্রে সময়মতো পণ্য ডেলিভারি দিতে না পারায় ক্রেতারা অর্ডার বাতিল করে দেন। বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রি (বিসিআই)-এর প্রেসিডেন্ট আরিফুল আলম চৌধুরী পারভেজ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের ডায়িং ফ্যাক্টরিতে প্রসেসিংয়ের জন্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল সল্ট ব্যবহৃত হয়। দেখা যাচ্ছে, হঠাৎ করে একটি সংস্থা এই লবণ আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এতে করে আমাদের অতিরিক্ত দামে ওই পণ্যটি সংগ্রহ করতে হয়। অনেক সময় দাম দিয়েও পণ্যটি সংগ্রহ করা সম্ভব না হলে ডায়িং প্রসেসে জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় পুরো পণ্য উৎপাদন প্রক্রিয়াটিই আটকে যায়। সময়মতো পণ্য সরবরাহ করতে না পারলে ক্রেতারাও ক্ষুব্ধ হন। তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক এই সভাপতি বলেন, বর্তমানে দেশে নানা ধরনের নতুন নতুন শিল্প-কারখানা গড়ে উঠছে। এতে এমন অনেক পণ্য ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানি হচ্ছে যেগুলো আগে সাধারণ এইচএস কোডে আনা যেত। এখন কাস্টমস হঠাৎ হঠাৎ ক্লারিফিকেশন দিয়ে প্রচলিত এইচএস কোডের বদলে নতুন এইচএস কোড উল্লেখ করে পণ্যটি আটকে দেয়। এক্ষেত্রে আমাদের দাবি হচ্ছে, উৎপাদন অব্যাহত রাখতে যাতে মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে আমদানিকৃত কাঁচামাল তাৎক্ষণিক ছাড়ের সুযোগ দেওয়া হয়। আর নতুন এইচএস কোডে পণ্য আনতে ব্যবসায়ীদের একটি নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হয়।

সর্বশেষ খবর