সোমবার, ১১ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

পিঁয়াজের শুল্ক প্রত্যাহারে চিঠি এনবিআরে

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

নানা কৌশলের পরও পিঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে না আসায় এবার শুল্ক প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এ চিঠি পাঠিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গত ৭ অক্টোবর লেখা হলেও তিন দিন পর গতকাল বিকালে চিঠিটি পাঠানো হয়। এতে বলা হয়েছে, ‘জাতীয় স্বার্থে পিঁয়াজের ওপর আরোপিত ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আপাতত প্রত্যাহারের অনুরোধ করা হলো।’

দেশীয় পিঁয়াজ উৎপাদনে কৃষকদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে চলতি বছরের বাজেটে ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করা হয়। দাম কমাতে এবার সেটিই প্রত্যাহার করতে বলছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

সূত্র জানায়, পিঁয়াজের আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের প্রভাব সম্পর্কে ট্যারিফ কমিশন থেকে একটি প্রতিবেদন পাঠানো হয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার করা হলে প্রতি কেজি পিঁয়াজে ২ টাকা দাম কমতে পারে। ফলে শুল্ক প্রত্যাহারে পণ্যটির দাম কতটা কমবে, আদৌ কমবে কি-না তা নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এক সপ্তাহের ব্যবধানে পিঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৪০ টাকা থেকে বেড়ে দ্বিগুণ হওয়ার পরপরই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত বৃহস্পতিবার পণ্যটির মজুদ ও সরবরাহের তথ্য জানতে ডিসিদের চিঠি পাঠানোর পাশাপাশি এনবিআরকে শুল্ক কমানোর অনুরোধ জানানোর চিঠিটিও তৈরি করে রাখে। তবে সরকারের নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় সেদিন চিঠিটি পাঠানো হয়নি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আমদানি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মূল্য নিয়ন্ত্রণে আমাদের হাতে যত উপকরণ ছিল ব্যবহার করেছি। ডিসিদের চিঠি দেওয়া হয়েছে, মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে, আমদানিকৃত পিঁয়াজের ট্রাক দ্রুত ছাড়করণে স্থলবন্দরসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সবশেষ শুল্ক প্রত্যাহারের চিঠি দেওয়া হলো।

মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়, পিঁয়াজ আংশিক আমদানিনির্ভর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। নিকট অতীতে এ পণ্যের বাজার বেশ কয়েকবার অস্থিতিশীল হয়েছে। ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১- অর্থবছরে এ সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল। বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, পণ্যটির মূল্য সম্প্রতি অনেকটাই বেড়েছে, তার অন্যতম কারণ, আমদানি মূল্য বৃদ্ধি পাওয়া। চিঠিতে আরও বলা হয়, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে গত বছরের মার্চ অবধি পণ্যটির ওপর আমদানি শুল্ক ছিল না। তারপরও আমদানি হ্রাস পাওয়ায় সংকট দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে। চলতি বছর ৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করায় পণ্যটির অনুৎপাদনশীল সময়ে (সেপ্টেম্বর-মার্চ) বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

তিন জেলায় মজুদ ৯০ হাজার মেট্রিক টন : পিঁয়াজ উৎপাদন হয় এমন তিনটি জেলার উৎপাদন ও মজুদের তথ্য পেয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এতে দেখা যাচ্ছে, ফরিদপুরে গত মৌসুমে ৫ লাখ ৮৯ হাজার ১৮৫ মেট্রিক টন পিঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে, যার বিপরীতে এখন মজুদ আছে ৮৮ হাজার ৩৭৭ মেট্রিক টন। মাদারীপুরে ৬১ হাজার ৭০৬ মেট্রিক টন উৎপাদনের বিপরীতে মজুদ ৯৮২ মেট্রিক টন এবং শরীয়তপুরে ৪১ হাজার ৬৬৩ মেট্রিক টন উৎপাদনের বিপরীতে এখন পণ্যটির মজুদ আছে ৫ মেট্রিক টন। তিন জেলায় সব মিলিয়ে ৯০ হাজার মেট্রিক টন পিঁয়াজ মজুদ রয়েছে বলে তথ্য পেয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে এ বেশির ভাগই বীজ পিঁয়াজ বলে জেলা প্রশাসকরা জানিয়েছেন। কর্মকর্তারা জানান, অন্য জেলার তথ্যগুলো পাওয়ার পর জানা যাবে দেশে কী পরিমাণ মজুদ আছে। সে অনুযায়ী আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হবে। কারণ গত বছর অতিরিক্ত আমদানির কারণে হঠাৎ পণ্যটির দাম কমে যায়। ব্যবসায়ীদের অনেকে বন্দর থেকে খালাস বন্ধ করে দেওয়ায় অনেক পিঁয়াজ পচে যায়। ফলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ে আজ বৈঠক : পিঁয়াজ, কাঁচামরিচ, ভোজ্যতেল চিনিসহ সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আজ বৈঠক করতে যাচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এতে সভাপতিত্ব করবেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

সর্বশেষ খবর