বুধবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

চটকদার বিজ্ঞাপন চলবে না

ই-কমার্সে প্রতারণা ও জালিয়াতি বন্ধে নিষিদ্ধ হচ্ছে বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা

উবায়দুল্লাহ বাদল

ই-ভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, ধামাকা শপিং, আলিশা মার্ট, কিউকমসহ ই-কমার্সে প্রতারণা বন্ধে মূল স্লোগান হবে ‘ক্রেতা সাবধান’। পাশাপাশি নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে অনলাইনে বিভ্রান্তিমূলক চটকদার বিজ্ঞাপন প্রচারণা। অনলাইনের পণ্য সরাসরি দেখার পরই ক্রেতারা মূল্য পরিশোধ করতে পারবেন। পণ্যের গায়ে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের নাম ও মেয়াদ লেখা থাকতে হবে। এমনকি কতদিনের মধ্যে পণ্য সরবরাহ করবে তার দিনক্ষণ ও সময়সীমা উল্লেখ থাকতে হবে। অনলাইন থেকে একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ কত টাকার পণ্য কিনতে পারবেন তারও সিলিং নির্ধারণ করা হবে। কেউ সিলিংয়ের বেশি পণ্য কিনতে চাইলে সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করতে হবে। এমন সব ধারা ও বিধান যুক্ত করে এ খাতের বিদ্যমান আইন সংশোধন করতে যাচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে ই-কমার্স সংশ্লিষ্ট বিদ্যমান আইন, বিধি ও নীতিমালাগুলোর ঘাটতি বিশ্লেষণ করতে সরকার কর্তৃক গঠিত হয়েছে উপকমিটি। কমিটির একাধিক সদস্যের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে এসব তথ্য। তবে এ বিষয়ে নাম প্রকাশ করে কেউই কথা বলতে রাজি হননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিটির একাধিক সদস্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, প্রাথমিকভাবে ই-কমার্স প্রতারণা বন্ধে নতুন আইন বা কর্তৃপক্ষ গঠনের চিন্তাভাবনা ছিল সরকারের নীতি-নির্ধারকদের। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে স্টেকহোল্ডারদের মতামতের আলোকে সেখান থেকে সরে এসেছে সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ‘ডিজিটাল কমার্স আইন প্রণয়ন ও কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত কমিটি’র বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে নতুন আইন নয়, ই-কমার্স সংশ্লিষ্ট বিদ্যমান আইন, বিধি ও নীতিমালার ঘাটতি চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ধারা সংযোজন করতে হবে। সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট সব আইন সংশোধন করা হবে। যাতে এ খাতের সমস্যার সমাধান হয়, আবার বিনিয়োগেও যেন নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে। ৫ অক্টোবর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এই কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে (আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য) আহ্বায়ক এবং উপসচিবকে (কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেল) সদস্য সচিব করে ১০ সদস্যের একটি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা ইতিমধ্যেই বিদ্যমান আইনের বেশ কিছু ঘাটতি চিহ্নিত করেছেন। শিগগিরই উপকমিটি বৈঠক করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সুপারিশ সংবলিত প্রতিবেদন মূল কমিটির কাছে জমা দেবে। ওই সুপারিশের আলোকে সংশ্লিষ্ট আইন-বিধি ও নীতিমালা সংশোধন করা হবে। কমিটির একজন সদস্য বলেন, ‘ক্রেতা সাবধান’ স্লোগানই হবে সংশ্লিষ্ট আইনের মূল নীতি। বিশেষ করে অনলাইনে বিভ্রান্তিমূলক চটকদার বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধের ব্যবস্থা করা হবে। কারণ শুধু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে দোষ দিলেই হবে না, এ জন্য ক্রেতারাও কম দায়ী নন। অতিরিক্ত মুনাফার লোভে পড়ে অনেক ক্রেতা হুমড়ি খেয়ে পড়েন। কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই করার প্রয়োজন মনে করেন না। যখন বিপদে পড়েন তখন তারা সংঘবদ্ধ হয়ে রাস্তায় নেমে মানববন্ধনসহ নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করেন। ততক্ষণে প্রতারকরা উধাও হয়ে যায়। অনেকে পণ্য অনলাইনে দেখেই বিকাশ বা বিভিন্নভাবে মূল্য পরিশোধ করে থাকেন, এটাও বন্ধ করা হবে। উপ-কমিটির অপর এক সদস্য বলেন, অনলাইন কেনাকাটায় সব ধরনের  আনফেয়ার ট্রেড প্র্যাকটিস (ব্যবসায় অনৈতিক কার্যকলাপ) বন্ধের ব্যবস্থা করা হবে। এমনকি অনলাইন থেকে একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ কত টাকা বা কি পরিমাণ পণ্য কিনতে পারবেন তার সিলিং নির্ধারণ করা হতে পারে। প্রস্তাবিত সিলিংয়ের বেশি টাকা বা পণ্য কিনতে চাইলে নির্দিষ্ট চ্যানেলে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানানোর ব্যবস্থা করা হবে। ৫ অক্টোবর ‘ডিজিটাল কমার্স আইন প্রণয়ন ও কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত কমিটি’র বৈঠক শেষে কমিটির প্রধান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, ই-কমার্স সংক্রান্ত নতুন আইন বা কর্তৃপক্ষ গঠনের বিষয়টি জানতে মাসখানেক সময় লাগবে। এ বিষয়ে একটি উপকমিটি গঠিত হয়েছে। তাদের প্রতিবেদনের সুপারিশের ওপর নির্ভর করবে আইন ও কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে কি না। উল্লেখ্য, গত ২৮ সেপ্টেম্বর ই-কমার্স আইন ও কর্তৃপক্ষ গঠনের লক্ষ্যে ১৬ সদস্যের কমিটি গঠন করে সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য) এ এইচ এম সফিকুজ্জামানকে কমিটির আহ্বায়ক এবং উপসচিব (কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেল) মুহাম্মদ সাঈদ আলীকে সদস্য সচিব করা হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর