বুধবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

শিশুরা জেগে দেখল মায়ের নিথর দেহ বাবার ঝুলন্ত লাশ

নেত্রকোনা প্রতিনিধি

ঘুম থেকে জেগেই ছোট্ট শিশু অপূর্ব আর তার ছোট বোন জ্যোতি দেখে তাদের মা মেঝেতে শুয়ে। বাবা ঘরের আড়ায় ঝুলছে। কিছুই বুঝতে না পেরে পার্শ্ববর্তী নানার বাড়ি দৌড়ে গিয়ে খবর দিল মামা ও খালাদের। এমন মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল সকালে নেত্রকোনা জেলার হাওর উপজেলা মদনের তিয়শ্রী ইউনিয়নের বালালি গ্রামে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে নান্দু মীরের (৫৫) ঝুলন্ত মরদেহ ও তার স্ত্রী হিমা আক্তার ওরফে মেরাজুর (৪৫) মাটিতে পড়ে থাকা মরদেহ উদ্ধার করে দুপুরে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। শিশু দুটি নানার বাড়িতে অবস্থান করছে। তাদের চোখে-মুখে অজানা ভয়। নার্সারির ছাত্র অপূর্ব জানায়, তার ছোট বোন জ্যোতি ওরফে আদর করে ডাকা বাবুনি উঠে কান্না করছিল। পরে সে দরজা খুলে বোনকে নিয়ে পাশেই মামার বাড়ি চলে আসে।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নান্দু মীর মদন উপজেলার নায়েকপুর ইউনিয়নের আলমশ্রী গ্রামের মৃত শামছু মীরের ছেলে। স্ত্রী হিমা আক্তার মেরাজু পাশ্ববর্তী তিয়শ্রী ইউনিয়নের বালালি গ্রামের মৃত আবদুল মন্নাফের মেয়ে। তারা প্রায় দেড় যুগ আগে বিয়ে করেন। দীর্ঘ ১৮ বছর পরে তাদের প্রথম ছেলে সন্তান জন্ম নেয়। এর মাঝে গত প্রায় বছর দশেক আগে শ্বশুরবাড়ির এলাকায় তিয়শ্রী ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন এলাকায় জমি কিনে বাড়ি তৈরি করেন নান্দু মীর। তিনি কৃষিকাজ ও গরু-ছাগল পালন করতেন। তাদের মধ্যে প্রায়ই কলহ লেগে থাকত।

স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রতিদিনের মতো সোমবার রাতেও সন্তানদের ঘুম পাড়িয়ে নিজ ঘরেই স্বামী-স্ত্রী শুয়ে পড়েন। মঙ্গলবার সকালে বালালি গ্রামের মৃত মিন্নত আলীর ছেলে সুনাই মিয়া নান্দু মীরের ছাগলের কাছে নিজের ছাগলের প্রজনন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ছাগলটি নিয়ে এলে ঘরের দরজা বন্ধ দেখতে পান। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর ডাকাডাকি করলে শিশুরা ভিতর থেকে ঘরের দরজা খুলে দিয়ে কান্নাকাটি শুরু করে। এ সময় ঘরের ভিতর মাটিতে পড়ে থাকা মেরাজু আক্তার হিমার রক্তাক্ত দেহ ও নান্দু মীরের ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পেয়ে চিৎকার শুরু করলে প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসেন। পরে স্থানীয় লোকজন মদন থানায় খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ঝুলন্ত লাশ নামিয়ে তাদের সুরতহাল নিয়ে লাশ মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নেত্রকোনার পুলিশ সুপার মো. আকবর আলী মুনসী জানান, কোনো ক্লু এখনো পাওয়া যায়নি। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, স্ত্রীকে শাবল দিয়ে আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে তিনিও আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে পারেন। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নেত্রকোনা মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়াও ঘটনার তদন্তে পিবিআই ও সিআইডির ক্রাইমসিন টিম ঘটনাস্থল কর্ডন করে রেখে আলামত সংগ্রহ করে।

সর্বশেষ খবর