বুধবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

কিডনি বিক্রি ২০ লাখে, ডোনার পেত ২ লাখ

পাঁচ প্রতারক গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ব্যবহার করে অবৈধভাবে কিডনি কেনাবেচা করত সংঘবদ্ধ একটি চক্র। তারা প্রতিটি কিডনি বিক্রি করত ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকায়। এখানে ডোনারদের দেওয়া হতো মাত্র ২ লাখ টাকা। প্রতারণার মাধ্যমে অবৈধভাবে কিডনি বেচাকেনার এ চক্রটির অন্যতম হোতাসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। তারা হলেন- শাহরিয়ার ইমরান আহম্মেদ, মেহেদী হাসান, সাইফুল ইসলাম, আবদুল মান্নান এবং তাজুল ইসলাম ওরফে তাজু। এ সময় তাদের কাছ থেকে কিডনি দাতাদের চারটি পাসপোর্ট, মেডিকেল চিকিৎসার জন্য ভিসা সম্পর্কিত বেশকিছু কাগজপত্র, পাঁচটি মোবাইল ফোন এবং দেশি-বিদেশি মুদ্রা জব্দ করা হয়। সোমবার রাতে র‌্যাব-৫, র‌্যাব-২ ও র‌্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখার যৌথ অভিযানে ঢাকা ও জয়পুরহাটের বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মলনে সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, গ্রেফতারদের মধ্যে ইমরান ‘বাংলাদেশ কিডনি ও লিভার পেশেন্ট চিকিৎসাসেবা’ এবং ‘কিডনি লিভার চিকিৎসাসেবা’ নামে ফেসবুকে দুটি পেজ খুলে এ চক্রটি পরিচালনা করে আসছিল। গ্রেফতার আবদুল মান্নান মূলত অর্থের কথা বলে কিডনি দিতে মানুষকে প্রলুব্ধ করেন। এর আগে, তিনি এ অপরাধে একাধিকবার গ্রেফতার হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইনে ছয়টিরও বেশি মামলা রয়েছে। মান্নানের অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করেন তাজু। তার বিরুদ্ধেও একাধিক মামলা রয়েছে। এ চক্রটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন প্রয়োজন এমন বিত্তশালীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং কিডনি জোগাড় করা সম্ভব বলে আশ্বস্ত করে। পরে তারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গরিব ও অভাবি মানুষদের চিহ্নিত করে অর্থের লোভ দেখিয়ে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনে প্রলুব্ধ করে। এ চক্রের ১৫ থেকে ২০ জন সদস্য রয়েছে এবং তারা তিনভাগ হয়ে কাজ করে। প্রথম গ্রুপটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যাদের কিডনি প্রয়োজন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। পরের সদস্যরা পূর্বের গ্রুপের চাহিদা অনুযায়ী গরিব-অভাবি মানুষকে খুঁজে বের করে। শেষ ধাপে থাকা গ্রুপটি দ্বিতীয় গ্রুপের সংগ্রহ করা কিডনি ডোনারদের যাবতীয় পরীক্ষা করে পার্শ্ববর্তী দেশে বৈধ/অবৈধভাবে নিয়ে যায়। গ্রেফতার সাইফুল ও মেহেদী কিডনি দাতাদের পাসপোর্ট, মেডিকেল ভিসা এবং অন্যান্য কাগজপত্র জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করেন। এ কাজে তারা জনপ্রতি ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা নেন। যাদের কিডনি প্রয়োজন তাদের কাছ থেকে অবস্থা ভেদে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা নেওয়া হতো। পরে কিডনি দাতাকে ৩ লাখ বা ৪ লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলে অগ্রিম ২ লাখ টাকা দিত। প্রতারক চক্রটি অধিকাংশ ক্ষেত্রে কিডনি দাতাকে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী টাকা না দিয়ে ‘জীবন নাশের’ হুমকি দিত। চক্রটি দাতা এবং গ্রহীতার মধ্যে নিকটাত্মীয় বানানোর সব জাল কাগজপত্র তৈরি করে, যেন কোথাও কোনো সমস্যা না হয়। চক্রের মূলহোতা ইমরান প্রতিটি কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন বাবদ ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা এবং মান্নান ও তাজুল প্রতি কিডনি দাতা সংগ্রহ বাবদ যথাক্রমে ৫ লাখ এবং ৩ লাখ টাকা গ্রহণ করত। আইনের হাত থেকে বাঁচার জন্য এ চক্রটি কোনো প্রকার রিসিট, পাসপোর্ট বা অন্যান্য প্রমাণ ভুক্তভোগী ডোনারকে সরবরাহ করা থেকে বিরত থাকত। চুক্তি অনুযায়ী কিছু অর্থ ও ভয়ভীতি দেখিয়ে ভিকটিমদের চুপ রাখত। এ পর্যন্ত ইমরান কিডনি বিক্রির জন্য প্রায় শতাধিক মানুষকে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার করেছে। র‌্যাব কর্মকর্তা আল মঈন বলেন, প্রতারণার মাধ্যমে মানবদেহের কিডনিসহ নানাবিধ অঙ্গের অবৈধ ট্রান্সপ্লান্টেশনের সঙ্গে সক্রিয় রয়েছে কয়েকটি চক্র। এসব চক্রের ফাঁদে প্রলুব্ধ হয়ে অসহায় নিম্নআয়ের মানুষ ক্ষেত্র বিশেষ গ্রাহকরাও প্রতারিত হচ্ছে। আইন বহির্ভূত, স্পর্শকাতর ও অবৈধ ট্রান্সপ্লান্টেশনের এহেন কার্যক্রমে চক্রের সদস্যরা অর্থের লোভে অমানবিক কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছে। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে র‌্যাব সাইবার মনিটরিং সেল ভার্চুয়াল জগৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অবৈধ কিডনিসহ অন্যান্য অঙ্গ ক্রয়-বিক্রয় সিন্ডিকেটের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে। সিন্ডিকেট সদস্যরা অনলাইনে বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে গ্রাহক ও ডোনারদের আকৃষ্ট করছে। একই সঙ্গে অপরাধের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করছে। এমনই একটি চক্রের সদস্য গ্রেফতার পাঁচজন।

সর্বশেষ খবর