বৃহস্পতিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

যতই ঝুঁকি আসুক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রতিদিন ডেস্ক

যতই ঝুঁকি আসুক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন -পিআইডি

দুর্যোগের ঝুঁকি বিষয়ে সবাইকে সতর্কতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যতই ঝুঁকি আসুক দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে হবে। তিনি বলেন, এই দেশটা আমাদের, কাজেই যত ঝুঁকি আসুক দেশের উন্নয়ন আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে। দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে হবে। দারিদ্র্যের হাত থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে হবে। গতকাল সকালে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) ৫০ বছর পদার্পণ ও আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস-২০২১ উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। বাসস।

প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানের অপরপ্রান্তে মুক্তিযোদ্ধা মাঠ কক্সবাজার প্রান্ত সংযুক্ত ছিল। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো এনামুর রহমান এবং ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে চারটি ইউনিটেরও উদ্বোধন করেন। এগুলো হচ্ছে- দ্রুত সাড়াদান ইউনিট, পানি থেকে উদ্ধার ইউনিট, অতি জোয়ার মনিটরিং ও সাড়াদান ইউনিট এবং খেলায় খেলায় দুর্যোগ প্রস্তুতি ইউনিট (স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে জনসচেতনতামূলক)। এ ছাড়া, ‘দুর্যোগ সহনশীল বাংলাদেশ বিনির্মাণে শেখ হাসিনা’ শীর্ষক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক একটি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন তিনি এবং দুর্যোগ প্রশমন বিষয়ক আওয়ামী লীগ সরকারের প্রচেষ্টা সম্পর্কিত ভিডিও চিত্র ‘দুর্যোগ প্রশমনের ৫০ বছর বঙ্গবন্ধু থেকে শেখ হাসিনা’ শীর্ষক ভিডিও চিত্র ও অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হয়। সিপিপির ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে তিনজন সংগঠক এবং ছয়জন স্বেচ্ছাসেবক নারী-পুরুষকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে ডা. এনামুর রহমান অনুষ্ঠানে আজীবন সম্মাননা প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস গণভবন প্রান্ত থেকে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।

সিপিপির স্বেচ্ছাসেবকদের দলে নারী স্বেচ্ছাসেবক অন্তর্ভুক্ত করায় এই কর্মসূচি অতীতের থেকে আরও বেশি কার্যকর হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি থেকে যাতে আমরা মুক্ত হতে পারি সেই ব্যবস্থা সবসময় নেব। বঙ্গবন্ধুকন্যা জাতির পিতার ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ থেকে সেই বিখ্যাত উক্তি ‘আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারবানা’র উদ্ধৃতি তুলে ধরে বলেন, ‘যত দুর্যোগই আসুক বাঙালিকে, বাংলাদেশকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না- এটাই হচ্ছে আমাদের কথা।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে দুর্যোগ ঝুঁকি মোকাবিলায় একটি আদর্শ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। আমাদের এই সম্মান যাতে বজায় থাকে সে জন্য ভবিষ্যতে সে বিষয়েও সবাইকে সচেতন থাকতে হবে এবং এই ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে হবে। জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে মানুষকে দুর্যোগ নিরাপত্তা প্রদানসহ মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণেও তাঁর সরকার উদ্যোগ নিয়েছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, আগামীতে বাংলাদেশ উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে যে এগিয়ে যাবে সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি রেখেই আমরা বিভিন্ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করে দিয়ে গেলাম। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সবসময় জনগণের পাশে আছে। দুর্যোগে আর কেউ না থাকুক আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সবসময় পাশে রয়েছে। জাতির পিতা ১৯৭৩ সালের ১ জুলাই দুর্যোগ ঝুঁঁকি হ্রাসে ‘ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি)’ গ্রহণ করেন, যা আজ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু ঘূর্ণিঝড় থেকে জনগণের জানমাল রক্ষায় সেই সময় ১৭২টি উঁচু মাটির কিল্লা তৈরি করেন যা পরবর্তীকালে জনগণ ‘মুজিব কিল্লা’ নামকরণ করেন। তিনি বলেন, আমরা পূর্বের মুজিব কিল্লাসমূহ সংস্কারসহ নতুন করে আরও ৩৭৮টি মুজিব কিল্লা নির্মাণ করছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাউন্সিল গঠন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন প্রণয়ন করেছে এবং এই আইনের আওতায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর গঠন করেছে যা দুর্যোগ মোকাবিলা, ঝুঁকি হ্রাসকরণ ও ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। পাশাপাশি, সরকার ২০২১-২০২৫ সাল মেয়াদের জন্য জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভ্যন্তরীণ বাস্তুহারা মানুষের দুর্দশার বিষয়গুলো আমলে নিয়ে সরকার ২০১৫ সালে একটি কৌশলপত্র প্রণয়ন করে এবং জাতীয় রিজিলিয়েন্স পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, যা সেন্দাই ফ্রেমওয়ার্ক ও এসডিজির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। এই ব-দ্বীপ অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নে শতবর্ষ মেয়াদি ডেল্টা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ৮০টি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ তাঁর সরকার শুরু করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বন্যা আমাদের আসবেই কাজেই বন্যা নিয়ন্ত্রণ করার বা বন্যার সঙ্গে বসবাস করার অভ্যাস আমাদের করতে হবে। বন্যায় মানুষ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সম্পদ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেভাবেই আমাদের উন্নয়ন প্রকল্প নিতে হবে এবং প্রতিটি এলাকায় আমাদের জলাধার থাকতে হবে। তিনি বলেন, আমরা ২০২২ সালের মধ্যে ৫১০ কিলোমিটার নদী ড্রেজিংয়ের পরিকল্পনা নিয়েছি এবং গ্রীষ্মকালে সেচের পানি সংরক্ষণের জন্য জলাধার নির্মাণ, ৪ হাজার ৮৮৩ কিলোমিটার খাল খনন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ, সংস্কারসহ নানাবিধ প্রকল্প গ্রহণ করেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্যোগ ঝুঁঁকিহ্রাসে আমাদের সময়ে সারা দেশে ২৩০টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র ও ৩২০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। আরও ২২০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ও ৪২৩টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। ৬৪ জেলায় ৬৬টি জেলা ত্রাণ গুদাম কাম দুর্যোগব্যবস্থাপনা তথ্য কেন্দ্র স্থাপন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তিনি বলেন, ভূমিকম্প ও নগর এলাকায় রাসায়নিক দুর্যোগসহ অগ্নিœকান্ড ঝুঁকিহ্রাস ও সাড়াদান কার্যক্রমে নতুন করে আমরা আরও ২ হাজার ২৭৫ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করেছি। এর আগে দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাসে ফায়ার সার্ভিস, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ও সহযোগী সংস্থার সক্ষমতা বাড়াতে যথাক্রমে ৬৯ কোটি এবং ২৩৪ কোটি টাকার সরঞ্জাম ক্রয় করেছি। ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্সকে আরও শক্তিশালীকরণে তাঁর সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন যেসব বহুতল ভবন হচ্ছে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা যেন সেসব ভবনে মজুদ থাকে। বহুতল ভবন নির্মাণের সময় যেমন তা নিশ্চিত করতে হবে, তেমনি আবার কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে সেখান থেকে মানুষকে উদ্ধারের সরঞ্জামাদি ও ফায়ার সার্র্ভিসের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি সরকার সংগ্রহ করছে। তিনি দুর্যোগ ঝুঁকি প্রশমনে ব্যক্তিগত স্থাপনা তৈরির সময়ও সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনি ঘর-বাড়ি, অফিস, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান যাই করেন না কেন সেটা করার সময় আপনাকে অগ্নিকান্ড, ঝড়, বন্যা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকির কথা মাথায় রাখতে হবে এবং বিল্ডিং কোড মেনেই ভবন তৈরি করতে হবে। বন্যায় অসহায় মানুষ ও গৃহপালিত পশুপাখি নিরাপদ জায়গায় স্থানান্তরের জন্য নৌবাহিনীর সহায়তায় ৬০টি মাল্টিপারপাস রেসকিউ বোট তৈরি ও হস্তান্তর প্রক্রিয়া চলমান আছে বলেও জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় না আসলে এসব আর কেউ করত বলে মনে হয় না। কারণ অন্যদের মানুষের সম্পর্কে কোনো দায়বদ্ধতা নেই। আর আওয়ামী লীগের রাজনীতিই হচ্ছে মানুষের জন্য। তিনি প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলা করেও তাঁর সরকারের এগিয়ে যাওয়ার কথা বলতে গিয়ে ২০১৩, ১৪ এবং ১৫ সালে বিএনপির আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যার কথাও স্মরণ করিয়ে দেন। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকায় গ্লোবাল এডাপটেশন সেন্টারের কার্যালয় স্থাপন করেছি। এবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনে অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশের ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা-দশক ২০৩০’ এর কার্যক্রম সম্পর্কে বিশ্ব নেতাদের অবহিত করেছি এবং এটা প্রত্যেকের কাছে খুব সমাদৃত হয়েছে। পাশাপাশি, আমি বিভিন্ন ফোরামে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়ক্ষতি ও পুনর্বাসনের বিষয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো যেন সহায়তা পায় তা জোরালোভাবে তুলে ধরেছি।

সর্বশেষ খবর