বৃহস্পতিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

সাবেক মন্ত্রী মোশাররফের এপিএস ফুয়াদ গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক ও ফরিদপুর প্রতিনিধি

সাবেক মন্ত্রী মোশাররফের এপিএস ফুয়াদ গ্রেফতার

সাবেক স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের একান্ত ব্যক্তিগত সহকারী (এপিএস) যুবলীগ নেতা এ এইচ এম ফুয়াদকে মানি লন্ডারিং মামলায় গ্রেফতার করেছে ফরিদপুর জেলা পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে তাকে রাজধানীর ভাটারা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। গতকাল আদালত তার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এদিকে তার গ্রেফতার ও রিমান্ডের খবর ছড়িয়ে পড়লে ফরিদপুর শহরের বিভিন্ন স্থানে মানুষের মাঝে মিষ্টি বিতরণের খবর পাওয়া গেছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, ২ হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে ফরিদপুরের আলোচিত দুই ভাই আওয়ামী  লীগ নেতা সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও ইমতিয়াজ হাসান রুবেলের বিরুদ্ধে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) করা মামলার অভিযোগপত্রে আসামির তালিকায় চার নম্বরে ফুয়াদের নাম রয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন আত্মগোপনে ছিলেন। এর আগে তাকে ধরতে পুলিশ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েছিল। গত বছর ২৬ জুন মানি লন্ডারিং আইনে করা মামলার আসামি হওয়ার পর ফরিদপুর জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক পদ থেকে অপসারণ করা হয় নগরকান্দা উপজেলার বিলনালিয়ার মোজদার চোকদারের ছেলে এ এইচ এম ফুয়াদকে। তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংসহ আটটি মামলা রয়েছে। গতকাল দুপুরে ফরিদপুর জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামাল পাশা জানান, ফুয়াদ দীর্ঘদিন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে ছিলেন। তিনি দীর্ঘ ১০ বছর ধরে ফরিদপুর শহরে হেলমেট, হাতুড়ি বাহিনীসহ বিভিন্ন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, পাসপোর্ট অফিস, বিআরটিএ অফিস নিয়ন্ত্রণ, বিভিন্ন হাটবাজার, বালুমহাল ইজারা, ভূমি দখল, বাসস্ট্যান্ড ও সিঅ্যান্ডবি ঘাট দখলসহ সরকারি অফিসে ত্রাস সৃষ্টি করে অঢেল সম্পদ অর্জন করেছেন। ফুয়াদ ফরিদপুরের আলোচিত ছোটন হত্যা মামলার অন্যতম আসামি। এ মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে বিকালে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় পুলিশ ছোটন হত্যাসহ অন্যান্য মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডের জন্য আবেদন করে। আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। পুলিশ ও বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ফুয়াদ দায়িত্ব পান তৎকালীন প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের পিও পদে। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। পরে ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের এপিএস সত্যজিৎ মুখার্জিকে সরিয়ে সেই পদ তিনি বাগিয়ে নিয়ে হয়ে ওঠেন ফরিদপুরের একচ্ছত্র অধিপতি। একের পর এক ফরিদপুরের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের বাদ দিয়ে জামায়াত, বিএনপি ও ক্যাডার বাহিনীর সদস্যদের দলে নিয়ে রাজনীতির পাক্কা খেলোয়াড় হয়ে ওঠেন তিনি। একই সঙ্গে ফরিদপুরের শুধু এলজিইডি ছাড়া সব অফিস তার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন। স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর এপিএস হওয়ার সুবাদে তিনি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ দেশের জেলার সব অফিসে চলে তার তদবির বাণিজ্য। ২০২০ সালের ১৭ জুন ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস ও দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে আটক হয় শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বরকত, প্রেস ক্লাবের সভাপতি ইমতিয়াজ হাসান রুবেলসহ আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন ক্ষমতাধর নেতা। এরপর থেকেই পলাতক ছিলেন ফুয়াদ। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামাল পাশা বলেন, মানি লন্ডারিংসহ মোট ৮টি মামলার আসামি ফুয়াদ। তার নামে তিনটি মামলায় ওয়ারেন্ট রয়েছে।

সর্বশেষ খবর