শুক্রবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা
সম্প্রীতি বিনষ্ট ও সহিংসতাকারীদের প্রতি হুঁশিয়ারি

এমন শাস্তি হবে ভবিষ্যতে কেউ সাহস পাবে না : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

এমন শাস্তি হবে ভবিষ্যতে কেউ সাহস পাবে না : প্রধানমন্ত্রী

কুমিল্লায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের অপচেষ্টার ঘটনার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, খুব ব্যাপকভাবে তদন্ত হচ্ছে। অনেক তথ্য আমরা পাচ্ছি এবং অবশ্যই এ ধরনের ঘটনা যারা ঘটাবে তাদের আমরা খুঁজে বের করবই। এমন শাস্তি দিতে হবে ভবিষ্যতে যেন আর কেউ এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর সাহস না পায়। গতকাল গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি ঢাকেশ্বরী মন্দিরে যুক্ত হয়ে ভিডিও কনফারেন্সে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বী নেতা এবং ভক্তদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। 

কুমিল্লার ঘটনার তদন্ত চলছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কিছুদিন আগে কুমিল্লায় যে ঘটনা ঘটেছে ইতিমধ্যে সেটিও তদন্ত হচ্ছে, খুব ব্যাপকভাবে তদন্ত হচ্ছে। অনেক তথ্য আমরা পাচ্ছি।

সরকারপ্রধান বলেন, যে ঘটনা ঘটেছে সঙ্গে সঙ্গে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি, সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছিলাম। এভাবে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। যেখানে যেখানে যারাই এ ধরনের ঘটনা ঘটাবে সঙ্গে সঙ্গে তাদের খুঁজে বের করা হবে। আমরা অতীতেও করেছি, এবারও করতে পারব। তিনি  বলেন, যথাযথ শাস্তি তাদের দিতে হবে। এমন শাস্তি দিতে হবে ভবিষ্যতে যেন আর কেউ সাহস না পায়। শেখ হাসিনা বলেন, এখন প্রযুক্তির যুগ এটা বের করা যাবে এবং সে যেই হোক না কেন, যে ধর্মেরই হোক না কেন তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা অবশ্যই নেওয়া হবে। আমরা তা করেছি এবং করব।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিষয়ে প্রতিবেশী দেশকেও সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধর্মের নামে বিভেদ, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ বিষয়ে- সেটা শুধু আমাদের নিজেদের দেশ না, প্রতিবেশী দেশকেও সজাগ থাকতে হবে, সচেতন থাকতে হবে। প্রতিবেশী দেশ মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের সহযোগিতা করেছে, তাদের কথা আমরা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করি। সেখানেও এমন কিছু যেন না করা হয় যার প্রভাব আমাদের দেশে এসে পড়ে। আমাদের সনাতন সম্প্রদায়ের ওপর আঘাত আসে। এ ব্যাপারে তাদেরও সচেতন থাকতে হবে- এটা আমার অনুরোধ থাকল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু লোক ধর্মান্ধতায় ভোগে। তারা সব সময় সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করতে চায়। এটা শুধু আমাদের দেশে নয়, শুধু মুসলমান হিসেবে নয়, সব ধর্মেই কিন্তু এই ধর্মান্ধতা আছে। তারা সব সময় একটা গোলমাল, একটা কিছু করার চেষ্টা করে। আমরা যদি সবাই এক হয়ে চলি, নিশ্চয়ই তারা ক্ষতি করতে পারবে না। শেখ হাসিনা বলেন, মাঝেমধ্যে দুষ্টু চক্র কিছু ঘটনা ঘটিয়ে মানুষের ভিতরে এই চেতনা নষ্ট করতে চায়। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক, যখন একটা জিনিস সুন্দরভাবে চলছে সেটাকে নষ্ট করা। বাংলাদেশ যখন উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে সেই সময় এই যাত্রাটাকে ব্যাহত করা। সেই সঙ্গে দেশের ভিতরে একটা সমস্যা করা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারে না, বিশ্বাস অর্জন করতে পারে না। রাজনীতি নেই, কোনো আদর্শ নেই, আসলে তারাই এ ধরনের কাজ করে। এটা তাদের এক ধরনের দুর্বলতা। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন করার আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, আপনারা কখনই নিজেদের সংখ্যালঘু মনে করবেন না। এই দেশের নাগরিক হিসেবে সমঅধিকার নিয়ে আপনারা বসবাস করবেন। আপনারা সমঅধিকার ভোগ করবেন। সমঅধিকার নিয়ে ধর্ম পালন করবেন, উৎসব করবেন। সেটাই আমরা চাই। এটাই আমাদের বাংলাদেশের আসল নীতি।  

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ একটা অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। বাংলাদেশে সব ধর্ম-বর্ণের সবাই একসঙ্গে বসবাস করবে। যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে। অর্থাৎ ধর্ম যার যার উৎসব সবার। বাংলাদেশে কিন্তু এটা সব সময় ছিল, আছে। উৎসবের সময় প্রত্যেকে একসঙ্গে শামিল হয়ে আনন্দ উপভোগ করে। তিনি বলেন, আমি চাই আমাদের দেশের মানুষ সুন্দরভাবে জীবনযাপন করবে, সব ধর্মের মানুষই তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করবে। সেটাই আমাদের লক্ষ্য। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা ১৯৭৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর বলেছিলেন, ‘বাংলার মাটিতে সাম্প্রদায়িকতার স্থান নেই। মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ বাংলাদেশে যারা বসবাস করেন, সবাই এ দেশের নাগরিক। প্রতিটি ক্ষেত্রে তারা সমঅধিকার ভোগ করবেন।’- আমরা কিন্তু সেটাই সব সময় মেনে চলছি। বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ইতিমধ্যেই আমরা হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য অনেক কাজ করে দিয়েছি। আপনারা নিজেদের কখনই ক্ষুদ্র সম্প্রদায় মনে করবেন না। এই মাটিতে আপনার জন্ম। কাজেই এই মাটিতে সমঅধিকার নিয়ে বসবাস করবেন। ইসলামেও বলা আছে, প্রত্যেক ধর্মের স্বাধীনতার কথা। কিন্তু কিছু লোক ধর্মান্ধতায় ভোগে। তারা সব সময় সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করতে চায়। সব ধর্মেই ধর্মান্ধ শ্রেণিটা আছে। তারা সব সময় গোলমাল সৃষ্টি করার চেষ্টা করে। তাই সবাই যদি আমরা এক হয়ে চলি, তবে তারা কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। ঢাকেশ্বরী মন্দির প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে গণভবনের সঙ্গে সংযুক্ত ছিলেন সনাতন ধর্মাবলম্বী নেতা ও ভক্তরা। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির প্রান্তে এই সময় ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি শৈলেন্দ্র নাথ মজুমদার, সাধারণ সম্পাদক কিশোর রঞ্জন মন্ডল, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত, সাধারণ সম্পদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জি, রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন ঢাকার অধ্যক্ষ পূর্ণাত্মানন্দ মহারাজসহ সনাতন ধর্মাবলম্বী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর