শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা
শেখ রাসেলের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বাংলাদেশ গড়তে চাই

নিজস্ব প্রতিবেদক

অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বাংলাদেশ গড়তে চাই

শেখ রাসেল দিবস-২০২১-এর উদ্বোধন ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে গতকাল গণভবন থেকে প্রধান অতিথির ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা -পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একটা অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বাংলাদেশকে গড়তে চাই। উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে চাই। সোনার বাংলাদেশ গড়তে চাই। যে দেশে কোনো অন্যায় থাকবে না, অবিচার থাকবে না, মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচবে; সেটাই আমি চাই।

বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র এবং ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট পরিবারের অন্যদের সঙ্গে শহীদ শেখ রাসেলের ৫৮তম জন্মদিন উপলক্ষে ‘শেখ রাসেল দিবস-২০২১’ এর উদ্বোধনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

গতকাল সকালে গণভবন থেকে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন  প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ সন্তান শেখ রাসেলকে নিয়ে সংকলিত ‘শেখ রাসেল : শৈশবে ঝরে যাওয়া ফুল’ ও ‘শেখ রাসেল : দীপ্ত জয়োল্লাস, অদম্য আত্মবিশ্বাস’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘শেখ রাসেল : শৈশবে ঝরে যাওয়া ফুল’ বইটির প্রধান উপদেষ্টা যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল। বইটি সম্পাদনা করেছেন কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত। বইটির উপদেষ্টা সম্পাদক বাংলাদেশ রোলার স্কেটিং ফেডারেশনের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ। ‘শেখ রাসেল : দীপ্ত জয়োল্লাস, অদম্য আত্মবিশ্বাস’ বইটির সম্পাদনা করেছেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের যৌথ আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। বিশেষ অতিথি ছিলেন শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান মো. রকিবুর রহমান, সংগঠনের উপদেষ্টা ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, তরফদার মো. রুহুল আমিন ও মো. সিরাজুল ইসলাম মোল্লা প্রমুখ। অনুষ্ঠানে শিশু বক্তা আফসানা জাফর সৃজিতা বক্তৃতা করে।

অনুষ্ঠানে শিক্ষা, ক্রীড়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, শিল্পকলা-সাহিত্য-সংস্কৃতি এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু-এ ৫টি ক্যাটাগরিতে প্রতিটি ১ ভরি করে ১০টি ‘শেখ রাসেল স্বর্ণ পদক’, ১০টি ল্যাপটপ ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। এ ছাড়া শেখ রাসেল অনলাইন কুইজ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের ১০টি ল্যাপটপ এবং লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের (এলইডিপি) আওতায় প্রশিক্ষণার্থীর মধ্য থেকে সর্বোচ্চ উপার্জনকারীদের মাঝে ৪ হাজার ল্যাপটপ প্রদান করা হয়।

শেখ রাসেলের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে আপ্লুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই দেশে যেন ’৭৫-এর মতো হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের পুনরাবৃত্তি না ঘটে এবং আর কোনো শিশুকে যেন রাসেলের ভাগ্যবরণ করতে না হয়, সে ব্যাপারে দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে। তিনি বলেন, এই বাংলাদেশে আর কোনো দিন যাতে হত্যা, ক্যু এবং ষড়যন্ত্র না হয়। ঘাতকের বুলেটে আর কোনো শিশুকে যাতে এভাবে জীবন দিতে না হয় এবং দেশের অগ্রগতি যাতে থেমে না যায় সে ব্যাপারে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্‌বান জানাচ্ছি। শিশুদের জীবন যাতে সুন্দর হয়। কারণ, একজন শিশুকে হত্যা করা মানেই লাখো কোটি শিশুর জীবনকে শঙ্কায় ফেলে দেওয়া। আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি বাংলাদেশের মানুষের কাছে একটাই আহ্‌বান জানাব, এই শিশুদের নিরাপত্তা দেওয়া, ভালোবাসা দেওয়া, সুন্দরভাবে গড়ে তোলা, তাদের জীবনকে সার্থক এবং অর্থবহ করা-এই কর্তব্য পালনই যেন সবার আদর্শ হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা ফুল পূর্ণাঙ্গভাবে ফোটার আগেই অকালে ঝরে যাবে, এটা কারও কাম্য নয়। আমরা এরকম চাই না বরং চাই বাংলাদেশ একটি শান্তিপূর্ণ দেশ হবে। প্রত্যেকটি শিশুর জীবন এই দেশে অর্থবহ এবং সুন্দর হবে। কেউ অকালে ঝরে যাবে না। ছোট ভাই রাসেলের স্মৃতিচারণা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাসেল ছোটবেলা থেকে বাচ্চাদের নিয়ে প্যারেড করত। সে বড় ভাই শেখ জামালের মতো সেনা অফিসার হতে চাইত। বেঁচে থাকলে আজকে হয়তো সেনাবাহিনীর বড় অফিসার হতো। ’৭৫-এর হত্যাকান্ডের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, সেদিন রাসেল মায়ের কাছে যাব বলে কান্না করছিল। তাকেও হত্যা করা হলো। আমার একটাই প্রশ্ন, এ শিশুটির কী অপরাধ ছিল?

আওয়ামী লীগের সম্প্রীতি-শান্তির শোভাযাত্রা আজ : দেশব্যাপী চলমান সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আজ মঙ্গলবার সারা দেশে ‘সম্প্রীতি সমাবেশ ও শান্তি শোভাযাত্রা’ কর্মসূচি পালন করবে আওয়ামী লীগ। মূল দলের সঙ্গে সংগতি রেখে সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন এই কর্মসূচি দেশব্যাপী পালন করবে। বেলা ১১টায় কেন্দ্রীয়ভাবে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে কর্মসূচি পালন করা হবে।

গতকাল বিকালে আওয়ামী লীগের এক অনির্ধারিত বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডি কার্যালয়ে এতে ভার্চুয়ালি যোগদান করেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় সাম্প্রদায়িক হামলা ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সারা দেশে দলীয় নেতা-কর্মীদের সজাগ ও সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, একটি চিহ্নিত মহল পরিকল্পিতভাবে দেশে সাম্প্রদায়িক হানাহানি সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে দলের প্রতিটি নেতা-কর্মীকে ঐক্যবদ্ধ ও সজাগ থাকতে হবে। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা এসব তথ্য জানিয়েছেন। পরে দলের পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অনির্ধারিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করেছে। ইতিমধ্যে অনেকেই গ্রেফতার হয়েছে এবং বাকিদেরও আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। সরকার পরিস্থিতির ওপর সতর্ক দৃষ্টি রাখছে এবং এ ধরনের সন্ত্রাসী ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

ধানমন্ডিতে অনির্ধারিত এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আবদুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খান, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আনোয়ার হোসেন, সাহাবুদ্দিন ফরাজী, সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম। ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ বেলা ১১টায় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ‘সম্প্রীতি সমাবেশ ও শান্তি শোভাযাত্রা’ কর্মসূচি পালন করা হবে।

সর্বশেষ খবর