বুধবার, ২০ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

ভুয়া ভিডিও ছড়িয়ে সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, ফেসবুকে ভুয়া ভিডিও ছড়িয়ে সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা চলছে। স্বার্থান্বেষী মহল টার্গেট করে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। কিছুদিন আগে পল্লবীতে শাহীন নামে        এক ব্যক্তিকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। যা সবার হৃদয়ে দাগ কাটে। সেই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ক্লিপ আকারে প্রচার করে একটি মহল নোয়াখালীর যতন সাহাকে একইভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে অপপ্রচার করছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক, ন্যক্কারজনক ও অমানবিকও বটে।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর কুর্মিটোলায় র‌্যাব সদর দফতরে আয়োজিত ‘র‌্যাবের প্রযুক্তিগত আধুনিকায়ন’ আভিযানিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে বিভিন্ন প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্তিকরণ’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। র‌্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন, পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন ও ইন্সপেকশন) ড. মো. মইনুর রহমান চৌধুরী, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের পরিচালক (এনটিএমসি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিয়াউল আহসান, র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি অপস) কর্নেল কে এম আজাদ প্রমুখ। অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রযুক্তিগত সক্ষমতার মাধ্যমে র‌্যাব অপরাধ দমন ও অপরাধীদের গ্রেফতারের বিষয়ে দুটি টিভিসি প্রচার করে র‌্যাব। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যারা এ ধরনের অপপ্রচার চালিয়ে ফায়দা লোটার চেষ্টা করছেন, তাদের হুঁশিয়ার করে দিচ্ছি, তাদের অবশ্যই খুঁজে বের করা হবে। উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। কুমিল্লার মন্ডপে ঘটনা ঘটানোর প্রধান অভিযুক্তকে আমরা শনাক্ত করেছি। খুব অল্প সময়ের মধ্যে তাকে আমরা ধরে ফেলতে পারব। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কেন এ হত্যাকান্ড, কেন এ মৃত্যু। কার উদ্দেশ্য সফল হওয়ার জন্য এ মৃত্যু। আমরা দেখলাম পরিতোষ নামে এক অল্প বয়সী ছেলে ফেসবুকে আপত্তিকর স্ট্যাটাস দিয়েছে। সেটা কেন্দ্র করে সহিংসতা। আমাদের পুলিশ বাহিনী তার বাড়িঘর রক্ষায় সর্বত্র চেষ্টা করেছে। তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু ইতিমধ্যে তার পাশের গ্রামে অগ্নিসংযোগ লুটপাট ভাঙচুর করা হয়েছে। এটার আমরা নিন্দা জানাচ্ছি। ফেসবুকে মিথ্যা প্রচারের মাধ্যমে রামু, নাসিরনগর ভোলায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের অপচেষ্টা করা হয়েছে। গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যখনই এসব ঘটনা আপনারা ফেসবুকে দেখেন তার সত্যতা যাচাই করবেন। উত্তেজনা সংবরণ করবেন। খামাখা উসকানিতে কান্ড ঘটিয়ে বসবেন না। ইতিমধ্যে রংপুরে এহেন কান্ড ঘটিয়েছে। র‌্যাব ডিজি চৌধুরী মামুন বলেছেন, ‘তথ্য দিতে সেই ভয় পায় যে অপরাধী। সাধারণ মানুষ কখনো তথ্য দিতে ভয় পায় না। অপরাধীরা যদি তথ্য দেয় তাহলে হয়তো ধরা পড়ে যাবে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর জালে আটকে যাবে। সে জন্য তথ্য দিতে ভয় পায়। আমরা প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বিস্তৃত করার উদ্যোগ নিয়েছি। এখন সার্চ দিলেই অপরাধ, অপরাধী বা আসামি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য মিলবে। একই অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন বলেন- র‌্যাব আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীকে পরিণত হয়েছে। পুলিশ, বিজিবি, সেনা, নৌ, বিমান ও আনসার বাহিনীসহ সাত বাহিনীর সদস্যরা মিলে জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় কাজ করছে। দেশপ্রেম ভালোবাসায় উদ্বুদ্ধ হয়ে কাজ করছে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পুলিশের (ভারপ্রাপ্ত) আইজিপি ড. মো. মইনুর রহমান চৌধুরী বলেন, র‌্যাবের প্রযুক্তিগত যে আধুনিকায়ন হচ্ছে, এর ভালো দিকটা নিয়ে সোসাইটিকে দিতে পারব, দেশকে দিতে পারব এ প্রত্যাশা করছি। এনটিএমসি প্রধান জিয়াউল আহসান বলেন, প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় অপরাধেরও বহুমাত্রিকতা বাড়ছে। এজন্য অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর প্রযুক্তিগত শক্তি বৃদ্ধি বাড়াতে হবে। ‘এনটিএমসি’ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, গোয়েন্দা সংস্থা, তদন্তকারী সংস্থাকে সব সময় তথ্য প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করে থাকে। আমরা যে ইন্টিগ্রেটেড সল্যুশনস কাঠামো তৈরি করেছি তার মাধ্যমে সব আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, গোয়েন্দা সংস্থা, তদন্তকারী সংস্থা ছাড়াও সরকারের বিভিন্ন সংস্থাকে তথ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। তথ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে আমাদের অনেকের মনে অনেক ধরনের ধারণা থাকতেই পারে। অনেকেই মনে করতে পারেন তার সব তথ্য মনে হয় নিয়ে গেল। কিন্তু এটি ভুল ধারণা। তবে আমাকে বুঝতে হবে এ তথ্যে যেন কোনো অপরাধ সংঘটিত না হয়। তথ্যের সংবরণ ও তথ্যের নিরাপত্তা এটিও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। র‌্যাবের এডিজি কর্নেল কে এম আজাদ বলেছেন, যে দেশ প্রযুক্তিতে যত উন্নত, অপরাধ দমনে সেই দেশ তত এগিয়েছে। র‌্যাব সদর দফতর ও ব্যাটালিয়নে যুক্ত ‘অত্যাধুনিক প্রযুক্তি’র মাধ্যমে যেকোনো ধরনের গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি অতীতের চেয়ে আরও সক্ষমতার সঙ্গে অপরাধী শনাক্ত ও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং যেকোনো বিষয়ে র‌্যাব অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। সাম্প্রতিক সময়ে র‌্যাব উদ্ভাবিত ‘জেল ডাটাবেজ’, ‘ক্রিমিনাল ডাটাবেজ’ ডাটা হাব, ইত্যাদি আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সফলভাবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অপরাধ দমন করেছে এবং অপরাধীকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমানে প্রযুক্তির প্ল্যাটফরম হচ্ছে এনটিএমসি। বিশ্বে যত ধরনের উন্নত প্রযুক্তি বা যন্ত্রপাতি আছে তার সবই এখানে আছে। ‘এনটিএমসি’ থেকে বিভিন্ন আভিযানিক এবং অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী এখন অতীতের চেয়ে অনেক সহজে অপরাধ দমন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ এবং অপরাধীকে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হচ্ছে। র‌্যাব সদর দফতর এনটিএমসি থেকে ডাটা হাবসহ অনেক সহযোগিতা পাচ্ছে। এ সহযোগিতা শুধু সদর দফতর না, এখন থেকে র‌্যাবের ১৫টি ব্যাটালিয়ন এ সুবিধা পাবে। এ ছাড়া দুর্গম এলাকায় থাকা ক্যাম্পগুলোও ব্যাটালিয়ন থেকে সুবিধা পাবে। র‌্যাব অতীতের চেয়ে আরও সক্ষমতার সঙ্গে অপরাধী শনাক্ত ও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং যেকোনো বিষয়ে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।

সর্বশেষ খবর