বুধবার, ২০ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

কুমিল্লার নানুয়ার দিঘির পাড়ে ২৫০ বছরের সম্প্রীতির বন্ধন

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

কুমিল্লা নগরীকে ব্যাংক ও ট্যাংকের নগরী বলা হয়। ট্যাংকের (দিঘির) মধ্যে উল্লেখযোগ্য ধর্মসাগর দিঘি, রানীর দিঘি, নানুয়ার দিঘি ও আমির দিঘি। ১৪৫৮ সালে খনন হওয়া প্রাচীন নানুয়ার দিঘিকে নগরীর ঐতিহ্যের বাহক বলা হয়। এই দিঘির পাড়ে বসবাস ছিল দেশের বিশিষ্টজনদের। এখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের বসবাস ৭০০ বছর ধরে। মুসলিম সম্প্রদায়ের বসবাস ২৫০ বছর ধরে। হিন্দু- মুসলিমদের মধ্যে ২৫০ বছর ধরে ছিল সম্প্রীতির বন্ধন। সেই দিঘির উত্তর পাড়ে সম্প্রতি ঘটেছে অপ্রীতিকর ঘটনা।

ইতিহাস-ঐতিহ্য গবেষক আহসানুল কবীর বলেন, কুমিল্লা ত্রিপুরা রাজ্যের অধীন ছিল। রাজা ধর্মমানিক্য একই সময়ে তার নামে ধর্মসাগর দিঘি ও স্ত্রী নানুয়া দেবীর নামে নানুয়ার দিঘি খনন করেন। এর আয়তন ১৬ একর। এই দিঘির পাড়ের বাসিন্দা জেলার প্রথম গ্র্যাজুয়েট মোহিনী মোহন বর্ধন। তিনিই প্রথম বাংলা ভাষায় আদালতে শুনানির আবেদন জানান। নবীনগরের জমিদার অনঙ্গ নাহার বাড়ি এখানে। বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত ইকবাল আহমেদ বাচ্চুর বাড়ি। প্রয়াত সমবায়ী জাহানারা বেগমের বাড়ি। কুমিল্লা জেলা পরিষদের ৩০ বছরের চেয়ারম্যান খান বাহাদুর আবিদুর রেজা চৌধুরীর বাড়ি এখানে। দিঘির পাড়ে বাড়ি লেখক সুলতান মাহমুদ মজুমদারের। তার সঙ্গে কবি নজরুলের সম্পর্ক ছিল। এই পরিবারের সন্তান সাবেক মুখ্য সচিব আলী ইমাম মজুমদার। এর পাড়ের বাসিন্দা প্রয়াত নৌপরিবহনমন্ত্রী কর্নেল আকবর হোসেন ও কুমিল্লা সিটির বর্তমান মেয়র মনিরুল হক সাক্কুসহ প্রমুখ ব্যক্তি। তিনি আরও বলেন, এখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের বসবাস ৭০০ বছর ধরে। মুসলিম সম্প্রদায়ের বসবাস ২৫০ বছর ধরে। হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে ২৫০ বছর ধরে ছিল সম্প্রীতির বন্ধন। তিনি বলেন, ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গকে ঘিরে স্যার সলিমুল্লাহ কুমিল্লায় আসেন। তাঁর আগমন ঠেকাতে একবার বিক্ষোভ হয়। তবে সেটি বড় আকারে হয়নি। ১৯৬৪ সালে সোনারগাঁয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়। তখন কুমিল্লাবাসীকে শান্ত রাখার জন্য পাড়ায় পাড়ায় কমিটি করা হয়। পাহারা বসানো হয়। তৎকালীন কুমিল্লা জেলা প্রশাসক আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ, মুসলিম লীগের নেতা আবাদ মিয়া ও আওয়ামী লীগ নেতা জহিরুল কাইয়ুম মিলে কুমিল্লাকে রক্ষা করেন।

দিঘির পশ্চিম পাড়ের বাসিন্দা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফরের পরিবারের সদস্য ব্যাংক কর্মকর্তা কাজী ফখরুল আলম। তিনি বলেন, এই দিঘির পাড়ে ১৯৫১ সাল থেকে তার পরিবারের বসবাস। এই দিঘির স্বচ্ছ জলে মিশে আছে তাদের আনন্দঘন শৈশব। সেই সব দিন তিনি খুব মিস করেন। এই দিঘির পাড়ে শিক্ষিত ও সুশীল মানুষের বসবাস ছিল। এখানে বিভিন্ন ধর্মের মানুষের বসবাস রয়েছে, সবার মধ্যে রয়েছে সম্প্রীতিও। মুক্তিযুদ্ধের সময় হিন্দু পরিবারের কাউকে ধরে নিয়ে গেলে মুসলিমরা গিয়ে ছাড়িয়ে এনেছেন। একে অন্যের সুখে দুঃখে এগিয়ে যেতেন। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেন, এই দিঘির পাড়েই আমরা বেড়ে উঠেছি। আমি বিএনপি করলেও এখানে নৌকা-ধানের শীষের ব্যাপার ছিল না। এই মন্ডপের অনুমতি আমিই দিয়েছি। আমরা এই এলাকায় সব সময় শান্তিতে বসবাস করেছি। উল্লেখ্য, গত বুধবার নানুয়ার দিঘির পাড়ে দুর্গাপূজার মন্ডপে মূর্তির ওপর কোরআন শরিফ রাখার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে বিভিন্ন মন্ডপে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর