শুক্রবার, ২২ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভিতরে বাইরে বাড়তি নিরাপত্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভিতরে বাইরে বাড়তি নিরাপত্তা

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর ভিতরে ও বাইরে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এজন্য ইতিমধ্যে বেশ কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আরও কিছু ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। নিরাপত্তার পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের জন্মহার নিয়ন্ত্রণেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কক্সবাজারের পাশাপাশি ভাসানচরে থাকা রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রেও বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সন্ধ্যার পর ভাসানচর থেকে নোয়াখালী কিংবা হাতিয়ায় যাতায়াত বন্ধ থাকবে। এ সময় ওই পথে মূল ভূখন্ডের কোনো নৌযান চলাচল করতে পারবে না। গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত ‘বলপ্রয়োগে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের সমন্বয়, ব?্যবস্থাপনা ও আইনশৃঙ্খলা সম্পর্কিত জাতীয় কমিটি’র সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব, জননিরাপত্তা সচিব, পররাষ্ট্র সচিব, সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপ্যাল স্টাফ অফিসার, সুরক্ষা সেবা সচিব, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক, এনএসআই মহাপরিচালক, ডিজিএফআই মহাপরিচালক, এনজিও ব্যুরোর মহাপরিচালক, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার এবং কক্সবাজারের শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার। বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, কক্সবাজার ও ভাসানচরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর ভিতরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতি এসব এলাকায় বাড়ানোরও ব্যবস্থা করা হবে। নিরাপত্তা বাড়াতে এপিবিএন, কোস্টগার্ডসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জনবল ও লজিস্টিক সাপোর্ট দেওয়া হবে। ক্যাম্পের ভিতরে পুলিশ, এপিবিএন, আনসার ও র‌্যাবের যৌথ টহল আরও বাড়ানো হবে। ক্যাম্পের বাইরে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব রয়েছে। তারা সব সময় সতর্ক অবস্থায় রয়েছে ও থাকবে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাদক প্রবেশ, সেবন ও বিক্রি রোধে মনিটরিং বাড়ানো হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিতে ক্যাম্পগুলোয় কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। বেশ কিছু ওয়াচ টাওয়ার হয়েছে, আরও হবে। অভ্যন্তরীণ রাস্তার কাজও শুরু হবে কিছুদিনের মধ্যেই। কোনো কোনো জায়গায় শুরুও হয়েছে। আর্মির ইঞ্জিনিয়ারিং কোর সেটা করছে। সেখানে ফায়ার সার্ভিসের সুবিধাও বাড়ানো হচ্ছে। ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের জন্মহার প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্মহার লাগামহীন হওয়ায় এদের পরিবারের পরিসর বেড়ে যাচ্ছে। জন্মহার নিয়ন্ত্রণ ও নতুন জন্ম নেওয়া রোহিঙ্গাদের তালিকাভুক্তিকরণের বিষয়টি আলোচনায় আসছে। মিয়ানমার সীমান্তের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, মাদক চোরাচালান প্রতিরোধে সীমান্তে টহল আরও বাড়ানো হবে। নাফ নদে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদারকি আরও জোরদার করা হবে। প্রয়োজনে উখিয়া ও টেকনাফে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য বাড়ানোর চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সীমান্তে গুলির আমাদের কোনো উদ্দেশ্য নেই। কেউ যদি সীমান্তের নিয়ম ভাঙে তখন বিজিবি ব্যবস্থা নেয়। কেউ যদি ফায়ার ওপেন করে, বিজিবিও পাল্টা ফায়ার ওপেন করে। নিরপরাধ লোককে ফায়ার করা বিজিবির কর্ম নয়। বিজিবি যদি দেখে কেউ ফায়ার করছে, তখন তারা পাল্টা ফায়ার করে। এখানে ফায়ার করার জন্য বিজিবি নয়, বিজিবি সীমান্ত রক্ষার জন্য। সীমান্ত রক্ষায় যা যা প্রয়োজন বিজিবিকে তা করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ভাসানচরের রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভাসানচরে ডিসেম্বর থেকে স্বল্প সময়ের মধ্যে আমাদের যে টার্গেট ১ লাখ রোহিঙ্গা নিয়ে যাওয়ার তা আমরা জোরদার করব। যাতে ডিসেম্বরে শুরু করে ১ লাখ রোহিঙ্গা তারপর আরও অবশিষ্ট অংশ সেখানে নেব। তাদের থাকা, নিরাপত্তা, আসা-যাওয়ার জন্য যা যা লজিস্টিক সাপোর্ট দরকার সেগুলো সেখানে প্রতিষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের ভাসানচর থেকে পালানো বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর