শুক্রবার, ২২ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

কুমিল্লা না মেঘনা কী নামে হবে বিভাগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

কুমিল্লা বিভাগের নাম ‘কুমিল্লা’ রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে করজোড়ে অনুরোধ করলেন মহানগরী আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সদর আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। প্রধানমন্ত্রী বলেন মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা/তোমার আমার ঠিকানা’র অনুপ্রেরণায় এবং দেশের প্রধান নদী হিসেবে এ বিভাগের নাম ‘মেঘনা’ রাখা হবে। গতকাল সকালে কুমিল্লা মহানগরী আওয়ামী লীগের নবনির্মিত কার্যালয় ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গণভবন প্রান্ত থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কুমিল্লা প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে গণভবনের সঙ্গে সংযুক্ত ছিলেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, হাসেম খান এমপি, ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন এমপি, ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত এমপি, নাসিমুল আলম চৌধুরী নজরুল এমপি, অ্যারোমা দত্ত এমপিসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।

অনুষ্ঠানের শুরুতে কুমিল্লাকে বিভাগ হিসেবে ঘোষণার দাবি রাখেন কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য ও মহানগরী আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। তাঁর দাবির সঙ্গে সহমত জানান অনুষ্ঠানে উপস্থিত জেলার সর্বস্তরের নেতা-কর্মীও। তাঁদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিভাগের ব্যাপারে আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি দুটি বিভাগ বানাব দুটি নদীর নামে। একটি পদ্মা, একটি মেঘনা। এ দুই নামে দুটি বিভাগ করতে চাই।’ প্রধানমন্ত্রীর কথা শেষ না হতেই বাহাউদ্দিন বাহার বলেন, ‘আপা! কুমিল্লা নামে করেন। সারা কুমিল্লাবাসীর দাবি আপা।’ উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ওই “কু” নাম দেব না আমি। কুমিল্লা দেব না আমি।’ সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে আবারও অনুরোধ জানাতে থাকেন বাহার। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি কুমিল্লা নাম দেব না। কারণ তোমার ওই কুমিল্লা নামের সঙ্গে মোশতাকের নাম জড়িত। সেজন্য আমি দেব না। ওই কুমিল্লা নাম নিলেই তো মোশতাকের কথা মনে ওঠে।’ এবার বাহার বলেন, ‘কোনো কুলাঙ্গারের নামে দেশের পরিচয় হয় না আপা। বাংলাদেশের পরিচয় বঙ্গবন্ধুর ওপর, মোনায়েম খানের ওপর নয়। বঙ্গবন্ধুকেই চেনে সারা বিশ্ব। বাংলাদেশ চিনত না। বলত শেখ মুজিবের দেশ। কোনো কুলাঙ্গারের নামে পরিচয় নয় দেশ। বঙ্গবন্ধুর নামেই পরিচিত।’ এ অবস্থায় সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা বাহারকে থামিয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও সরকারপ্রধান বলেন, ‘বাহার তাহলে তুমিই বল কুমিল্লা নাম হবে কেন? চাঁদপুর বলে আমার নাম হবে, নোয়াখালী বলবে আমাদের নাম। নোয়াখালী সব থেকে পুরনো একটি জেলা। কুমিল্লা তো ত্রিপুরার একটা ভগ্নাংশ।’ তার পরও বিরোধিতা করতেই থাকেন বাহাউদ্দিন বাহার। এবার প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ফরিদপুর বিভাগ করব পদ্মা নামে।’ কুমিল্লা নামে বিভাগ হোক এটা ৫০ লাখ মানুষের দাবি জানিয়ে বাহার বলেন, ‘ফরিদপুর বিভাগ কী হবে জানি না, কিন্তু আমাদেরটা আমাদের নামে দেন।’ তবে নিজের অবস্থানে অনড় থেকে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি ফরিদপুর বিভাগ করব পদ্মা নামে। ফরিদপুর নামও দিচ্ছি না। কুমিল্লা বিভাগ হবে মেঘনা নামে। কারণ “পদ্মা মেঘনা যমুনা/তোমার আমার ঠিকানা” এ স্লোগান দিয়ে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ করেছে, বিজয় অর্জন করেছে।’ বাহার বলেন, আপা কুমিল্লা নামে করেন আপা, সবার একটাই দাবি। শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ (কুমিল্লা) নামে অন্য জেলাগুলো আসতে চায় না।’ বাহার বলেন, কেন আসবে না আপা? সবাই আসবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি দুটি বিভাগের নাম ঠিক করেছি, পদ্মা ও মেঘনা নামে করব। বাহার তুমি ছাত্রলীগ করার সময় স্লোগান দাওনি ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা/তোমার আমার ঠিকানা’, ঢাকা না পিন্ডি/ঢাকা ঢাকা। বাহার বলেন, জি আপা ছাত্রলীগ করার সময় এ স্লোগান দিয়েছি। বীর বাঙালি অস্ত্র ধর/বাংলাদেশ স্বাধীন কর। আমরা বঙ্গবন্ধুর কর্মী। আপা বিভাগটা কুমিল্লা করেন।

বাহারের যুক্তিতর্কের কারণে একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আচ্ছা তুমি সবার কাছ থেকে লিখিত নিয়ে আস। তোমাকে দায়িত্ব দিলাম, সবার কাছ থেকে মানিয়ে নিয়ে আস, যাও।’ বাহার বলেন, ‘আপা, আপনি দিলেই মানবে। আপনি মুখ দিয়ে বললেই হয়ে যাবে আপা।’ আরও কিছুক্ষণ ধরে কুমিল্লা নামেই বিভাগ করতে অনুনয় চালিয়ে যান সংসদ সদস্য বাহার। শেষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যদি বিভাগ চাও, আমি মেঘনা নামেই করে দিতে পারি।’ বাহার তবু বলেন, ‘করজোড়ে অনুরোধ আপা।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মেঘনা পার হয়েই তো যেতে হয় কুমিল্লা। আর পদ্মা পার হলেই তো ফরিদপুর।’ বাহার আবার বলেন, ‘আপা, আমরা আপা হিসেবেই চাই। প্রধানমন্ত্রী না। আপা, আপনি আমাদের আপা, এ হিসেবেই চাই। বঙ্গবন্ধুকন্যা। বঙ্গবন্ধুকন্যা ফিরিয়ে দেবেন না বাহারকে।’ এ সময় নেতা-কর্মীরা হাততালি দিয়ে সমর্থন জানান সংসদ সদস্য বাহারকে। বাহার বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা ফেরত দিতে পারবেন না বাহারকে।’ প্রধানমন্ত্রী জানান অন্য জেলাগুলো এমন নাম মানবে না। তিনি বলেন, ‘তাহলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নাম দিতে হবে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া চাচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নাম হোক। ফেনী চায় ফেনী নাম হোক। চাঁদপুর নামটা আরও সুন্দর। চাঁদপুর চায় চাঁদপুর হোক।’ বাহার বলেন, আপনি চাইলে হবে না- তা হতে পারে না আপা। বাহার বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছিল কুমিল্লার সাব ডিভিশন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার প্রস্তাব রাখলাম। যদি পছন্দ হয় ভালো, না হলে হবে না। আমি কী করব।’ বাহার আবার বলেন, ‘আপনি এভাবে বললে আমরা কোথায় যাব, কার কাছে যাব?’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দুটি বড় নদী, নদীর নামটা সম্মান দিয়ে রাখতে চাই। যে স্লোগান দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে সে স্লোগান দিচ্ছি, আবার কী?’ ‘আমরা কার কাছে যাব আপা?’ বক্তব্য শেষ করার আগমুহূর্তেও ‘মেঘনা’ নামে কুমিল্লা বিভাগের নামকরণের প্রস্তাবটা সবাইকে গ্রহণ করার আবেদন জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সর্বশেষ খবর