রবিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

পীরগঞ্জে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার নেপথ্যে উসকানিমূলক পোস্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক

রংপুরের পীরগঞ্জে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনায় নেপথ্য উসকানিদাতা দুজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন সৈকত মন্ডল (২৪) ও রবিউল ইসলাম (৩৬)। র‌্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা এবং র‌্যাব-১৩-এর যৌথ অপরেশনে গত শুক্রবার টঙ্গী থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। র‌্যাব বলছে, সৈকত মন্ডলের ফেসবুক পাতায় ‘ধর্মীয় অবমাননার’ পোস্ট দেখে রংপুরের পীরগঞ্জে মানুষ জড়ো হয়ে মাঝিপাড়ায় হিন্দুদের ওপর হামলা করেছিল। রবিউল পাশের মসজিদের মাইক থেকে লোকজনকে জড়ো হওয়ার জন্য প্রচার চালিয়েছিলেন।

 কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে গতকাল দুপুরে র‌্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সৈকত তার ব্যক্তিগত ‘ইমেজ’ প্রচার এবং তার ফেসবুকে ‘ফলোয়ার’ বাড়াতে উসকানিমূলক পোস্ট দিয়ে লোকজন জড়ো করে। ১৭ অক্টোবর রাতে তার পোস্ট ছিল, ‘এ মুহূর্তে গ্রামপুলিশের কাছ থেকে পাওয়া সংবাদ, হিন্দুদের আক্রমণে এক মুসলিমকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।’ এর বাইরেও অনেকগুলো উসকানিমূলক পোস্ট দেন তিনি। ওই দিনই পীরগঞ্জের বড় করিমপুর গ্রামে দুর্বৃত্তরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে কয়েকটি বাড়িঘর ও দোকানপাটে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে।

দুর্গাপূজার মধ্যে কুমিল্লায় সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের পর সেই রাতে পীরগঞ্জে হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্তত ২৩টি বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

গ্রেফতার দুজনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের বরাতে কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেফতার ব্যক্তিরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অরাজকতা তৈরি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের লক্ষ্যে হামলা-অগ্নিসংযোগ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার এবং মাইকিং করে হামলাকারীদের জড়ো করেন। সৈকত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানিমূলক, বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যাচারের মাধ্যমে স্থানীয় জনসাধারণকে উত্তেজিত করে তোলেন। তিনি সহযোগী রবিউলকে মাইকিং করে লোকজন জড়ো করতে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। ঘটনার পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান। সৈকত ম ল রংপুরের একটি কলেজের স্নাতকে অধ্যয়নরত। তিনি বিভিন্ন সময়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন উসকানিমূলক ও বিভ্রান্তিকর পোস্ট প্রদান ও শেয়ার করতেন। রবিউল স্থানীয় একটি মসজিদের মুয়াজ্জিন। এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার মঈন বলেন, এর আগে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন ঘটনার শুরুর দিককার উসকানিদাতা পরিতোষ ও উজ্জ্বল। ফেসবুকে উসকানিমূলক মূল পোস্টটি দিয়েছিলেন পরিতোষ। পরিতোষ আর উজ্জ্বলের মধ্যে বৈরী সম্পর্ক ছিল। পরিতোষ পোস্ট দিয়ে উজ্জ্বলকে বলেন, ধর্মীয় উসকানিমূলক পোস্ট দিলে তোর কেমন লাগে! এরপর পোস্টটি তিনি ডিলেট করলেও উজ্জ্বল তা কপি ও সেভ করে রাখেন। এরপর সেটিই উজ্জ্বল নিজের ফেসবুক পেজ থেকে প্রচার করেন। এরপর সেই পোস্টটি পিক করেন সৈকত। সৈকতের মাধ্যমে তা জেনেই রবিউল মসজিদে মাইকিং করেন, হামলার নেতৃত্ব দেন এবং নিজেও হামলায় অংশ নেন। ঠিক কী উদ্দেশ্যে উসকানিমূলক পোস্ট দিয়েছিলেন সৈকত- জানতে চাইলে কমান্ডার মঈন বলেন, তার (সৈকত) ফেসবুক পেজে ২৭০০-২৮০০ ফলোয়ার রয়েছে। পোস্টটিকে তিনি কাজে লাগিয়েছেন ফলোয়ার বাড়ানোর জন্য। পাশাপাশি তার ব্যক্তিগত ইমেজ বাড়বে বলেও মনে করেছিলেন সৈকত।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর