মঙ্গলবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

বায়োপসির জন্য খালেদা জিয়ার নমুনা সংগ্রহ

সার্জিক্যাল আইসিইউ থেকে কেবিনে স্থানান্তর, বিএনপি বলছে- বিপদমুক্ত, বিদেশ নেওয়ার দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

বায়োপসির জন্য খালেদা জিয়ার নমুনা সংগ্রহ

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শরীরে দেখা দেওয়া লাম্পে (ছোট মাংসপিন্ড) ক্ষতিকর জীবাণু আছে কি না তা নির্ণয়ে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এই নমুনা বায়োপসি পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। ৭২ ঘণ্টা পরে বায়োপসি রিপোর্ট হাতে আসতে পারে বলে জানিয়েছেন বেগম জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে সার্জিক্যাল আইসিইউতে এই নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে সন্ধ্যায় কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। খালেদা জিয়ার সর্বশেষ অবস্থা জানাতে বিকালে জরুরি এক সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া সুস্থ আছেন। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, তার ভাই শামীম এস্কান্দার ও পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান সিঁথি কথা বলেছেন। চিকিৎসকেরাও আমাকে জানিয়েছেন, ম্যাডাম সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন। তিনি বিপদমুক্ত। এ সময় অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের শরীরের এক জায়গায় ছোট একটা লাম্প আছে। এই লাম্প ক্ষতিকর কি না তা জানতে হলে বায়োপসি করা প্রয়োজন ছিল। তাই বায়োপসি করতে তাকে সার্জিক্যাল আইসিইউতে নিয়ে যাওয়া হয়। এখন তিনি সুস্থ আছেন। তার সব শারীরিক পরীক্ষার অন্য সূচকগুলো স্থিতিশীল আছে। তিনি আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে দোয়াও চেয়েছেন, যাতে অতি দ্রুত সুস্থ হন এবং দেশের বাইরে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা যায়। এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক জাহিদ বলেন, বায়োপসি মানে চিকিৎসা না। এটা একটা টেস্টের অংশ। পরবর্তী চিকিৎসা পদ্ধতি বায়োপসি রিপোর্ট দেখে নির্ধারিত হবে। বেগম জিয়ার বয়স এখন ৭৬ বছর। তার আরও যেসব জটিলতা রয়েছে, সেগুলো মাথায় রেখে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে একটা অ্যাডভান্স সেন্টার প্রয়োজন রয়েছে বলে এভারকেয়ার হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ড মতামত দিয়েছে। লাম্প কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, লাম্প শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘ছোট চাকা’। এটা ১ দশমিক ২ সেন্টিমিটার পরিমাণে হয়। বায়োপসির রেজাল্ট পেতে ৭২ ঘণ্টা থেকে শুরু করে ক্ষেত্রবিশেষে ১৫-২১ দিন সময় লাগে। কাজেই বায়োপসির রেজাল্টের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড বলে আসছেন, বেগম জিয়ার পরিপূর্ণ চিকিৎসায় দেশে অ্যাডভান্স সেন্টার নেই। এ জন্য তার পরিবারের পক্ষ থেকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছিল। দুর্ভাগ্য, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সেই অধিকারটুকুও সরকার দেয়নি। এ জন্য আইনগত কোনো বাধা আছে বলে আমরা মনে করি না। কারণ, জামিন পাওয়া তার অধিকার, এটা কোনো দয়া নয়। সরকারের উচিত, অবিলম্বে তাকে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া। খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসা যদি না পান তার জন্য সরকারকেই শতভাগ দায়-দায়িত্ব নিতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. মো. আল মামুনও উপস্থিত ছিলেন।

গত কয়েকদিন ধরে বেগম খালেদা জিয়া জ্বর অনুভব করার পর গত ১২ অক্টোবর তাকে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের তত্ত্বাবধানে একটি মেডিকেল বোর্ডের অধীনে চিকিৎসাধীন আছেন। খালেদা জিয়া বহু বছর আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস ও চোখের সমস্যায় ভুগছেন। গত এপ্রিল মাসে তিনি বাসায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। সেখানে ব্যক্তিগত বিশেষ চিকিৎসদের একটি মেডিকেল টিমের চিকিৎসায় সেরে উঠলেও পোস্ট কভিড জটিলতায় গত ২৭ এপ্রিল তাকে  এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কয়েকদিনের মধ্যে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে তাকে সিসিইউতে নেওয়া হয়। প্রায় দুই মাস তিনি সিসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে ১৯ জুন মেডিকেল বোর্ড বাসায় নিয়ে চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে ছাড়পত্র দেয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর