মঙ্গলবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

অভিমানী এক দলের গল্প

অভিমানী এক দলের গল্প

কঠোর অনুশীলন এবং ভালো স্কিল থাকলেই কি ম্যাচ জেতা যায়? মোটেও না। ম্যাচ জয়ের জন্য যেমন ফিটনেস ও স্কিল দরকার, তেমনি দরকার বুদ্ধিমত্তার। জয়ের জন্য মাথা খাটাতে হয়।

নিজের টার্গেট থাকতে হয়, দলের পরিকল্পনা অনুযায়ী পারফর্ম করতে হয়। বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের ফিটনেসে ততটা ঘাটতি যে নেই তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর এই লেভেলে যারা ক্রিকেট খেলেন তাদের স্কিলেও খুব একটা ঘাটতি থাকার কথা নয়। তারপরও বাংলাদেশ দল নিজেদের চেয়ে দুর্বল দলের বিরুদ্ধে হেরে যাচ্ছে এই বিশ্বকাপে। চাপে ভেঙে পড়ে ম্যাচ হারছে। নেপথ্যে বড় কারণ হচ্ছে- বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা তাদের মস্তিষ্কের সঠিক ব্যবহার করছেন না বলে ক্রিকেট বিশ্লেষকদের দাবি।

শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ম্যাচটির দিকে তাকালেই অনেক কিছু পরিষ্কার হয়ে যায়। ১৭১ রান করার পরও টাইগাররা জিততে পারেনি। তার মানে এই নয় যে, এমন স্কোর করে অন্য কোনো দল আগে কখনো হারেনি। তবে শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উইকেট অনুযায়ী বাংলাদেশ দলের স্কোরটা মোটেও ‘ছোট’ ছিল না।

সাধারণভাবে দেখলে মনে হবে, কেবল মাত্র লিটন দাসের দুটি ক্যাচ মিস এবং মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনের ১৬তম ওভারে দেওয়া ২২ রানই দলকে জয় থেকে ছিটকে ফেলে দিয়েছে! তা ঠিক, কিন্তু ম্যাচটির ব্যবচ্ছেদ করলে আরও অনেক বিষয়ই সামনে চলে আসে।

বোলিং পরিবর্তনটা মোটেও ঠিক ছিল না অধিনায়কের। সাকিব আল হাসান নবম ওভারে যখন বোলিং করতে এসে মাত্র ১ রানে ২ উইকেট নিলেন তখন ম্যাচের গতিই পাল্টে গেল। ঠিক পরের ওভারেই সাইফুদ্দিন আরেকটি উইকেট নিয়ে যেন লঙ্কানদের মেরুদ ই ভেঙে দিলেন। এর পরের দুই ওভারে দারুণ বোলিং করলেন মেহেদী হাসান ও মাহমুদুল্লাহ নিজে। তখন ১২ ওভারে শ্রীলঙ্কার স্কোর ৪ উইকেটে ৯০ রানে। পরের ৪৮ বলে থেকে দরকার ছিল ৮৪ রান। এরপর পার্টটাইমার বোলার আনার কোনো দরকারই ছিল না। এমন সহজ অবস্থানে থাকার পর মাহমুদুল্লাহ কেন সাকিবের হাতে বল তুলে না দিয়ে পার্টটাইমার আফিফকে বোলিং করতে দিলেন?

ওই ওভারে আফিফ দিলেন ১৫ রান। তারপরও সাবধান হওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু পরের ওভারে নিজে বোলিং করতে এসে দিলেন ১৬ রান। তারপর সাইফুদ্দিনের ২২ রানের সেই ওভার!

অথচ তখনো সাকিবের কোটার দুই ওভার বাকি! এই সময় বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে বোলিং করতে না দেওয়ার পেছনে ব্যাখ্যা হচ্ছে, উইকেটে ছিলেন বামহাতি ব্যাটসম্যান, সাকিবও বামহাতি বোলার। বামহাতি ব্যাটসম্যানের বিরুদ্ধে বামহাতি বোলার নাকি কার্যকর নয়! তাই বলে দলের মহাবিপদের সময়, এমন একজন বোলারকে বসিয়ে রাখা হবে?

বড় অদ্ভুত ক্যাপ্টেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ক্রিকেটীয় ব্যাকরণ! দল হারে হারুক তবু ব্যাকরণের বাইরে যাওয়া যাবে না!

এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, ম্যাচের আগে প্রতিপক্ষের শক্তিমত্ত্বা কিংবা দুর্বলতা নিয়ে কি আদৌ কোনো বিশ্লেষণ করেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা? কোন বোলারের কি দুর্বলতা, কোন ব্যাটসম্যান কোন শট খেলতে পারেন না! নাকি ক্রিকেটাররা পড়ে থাকেন কেবলই সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে!

বাংলাদেশের এই দলের ক্রিকেটাররা বড্ড অভিমানী! দর্শকের সমালোচনাও তারা হজম করতে পারেন না। স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম রাউন্ডে প্রথম ম্যাচে হারার পর সমালোচনা সহ্য করতে না পেরে মিডিয়ার সামনে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন মাহমুদুল্লাহ। বিশ্বকাপের মতো আসরে একটি দেশকে নেতৃত্ব দেওয়া একজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার কেন এতটা আবেগপ্রবণ হবেন -এমন প্রশ্ন উঠতেই পারে! অন্য সিনিয়রদের অতি আবেগী হওয়ার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা চলছে। ১৮ কোটি মানুষের স্বপ্ন যাদের কাঁধে তাদের কি আরও একটুখানি ধৈর্য্যশীল হওয়া উচিত নয় কি!

গতকাল দুপুরে দুবাইয়ে ক্রিকেটারদের হোটেলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লঙ্কানদের বিরুদ্ধে হারের পর কোনো ক্রিকেটার অন্যকারও সঙ্গে দেখাও করেননি। যে যার মতো খাবার অর্ডার দিচ্ছেন, রুমেই বসে থাকছেন। আগামীকাল আবুধাবিতে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচ। তার আগে টাইগাররা স্বাভাবিক হবেন কিনা সেটাই বড় প্রশ্ন!

এখনো তো সব কিছু শেষ হয়ে যায়নি! যদিও গ্রুপের সবচেয়ে সহজ প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে হেরেছে বাংলাদেশ। কিন্তু বিশ্বকাপ জিততে চাইলে সব দলকে হারানোর সক্ষমতা থাকতে হবে। অতি আবেগ থেকে মনকে মুক্ত করে হতে হবে দৃঢ় মনোবলের অধিকারী। টি-২০ বিশ্বকাপের সব শেষ আসরে গ্রুপে সহজ প্রতিপক্ষ আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে হারার পরও বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেখান থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে নতুন করে উদ্দীপ্ত হতে পারে বাংলাদেশ।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর