শুক্রবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

নরসিংদীতে ভোটের সংঘর্ষে নিহত ২

নরসিংদী প্রতিনিধি

নরসিংদীতে ভোটের সংঘর্ষে নিহত ২

নিহতের স্বজনদের আহাজারি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

আধিপত্য বিস্তার ও ইউপি নির্বাচন কেন্দ্র করে নরসিংদীর রায়পুরার কাচারিকান্দি গ্রামে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে দুজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৩০ জন। গতকাল ভোরে কাচারিকান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আহতদের উদ্ধার করে রায়পুরাসহ নরসিংদীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত দুজনের লাশ রায়পুরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দুজনকে আটক করা হয়েছে।

নিহতরা হলেন- কাচারিকান্দি গ্রামের মারফত আলীর ছেলে সাদির মিয়া (২২) ও একই গ্রামের আসাদ মিয়ার ছেলে হিরণ (৩৫)।

গুলিবিদ্ধ হয়ে আহতরা হলেন- রমজান (১৮), মোকলেস (২২), আহিদ মিয়া (৪৩), জজ মিয়া (১৪), শামসুন্নাহার (৩৪), দানা মিয়া (৬০) ও আলামিন মিয়া (২০)। টেঁটাবিদ্ধ হয়ে আহতরা হলেন- নাজির (২১), নাজমা (২৪), দানিস মিয়া (২৪) ও মো. হক মিয়া (৫০)। এরা সবাই কাচারিকান্দি গ্রামের ছোট শাহ আলমের সমর্থক। এদের মধ্যে মুমূর্ষু অবস্থায় জজ মিয়াকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, এলাকার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার পাড়াতলী ইউনিয়নের কাচারিকান্দি গ্রামে বড় শাহ আলম মেম্বার ও একই গ্রামের ছোট শাহ আলমের সঙ্গে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। দ্বন্দ্বের জের ধরে ছয় মাস আগে উল্লিখিত দুই গ্রপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ওই সংঘর্ষে ছোট শাহ আলম গ্রুপের ইয়াসিন ও শাহিন নামে দুজন নিহত হন। এ ঘটনায় বড় শাহ আলম গ্রুপের সদস্যরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যান। এরই মধ্যে ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়। ইউপি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য বড় শাহ আলম মেম্বারের লোকজন গ্রামে ঢোকার চেষ্টা চালান। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল ভোর রাতে বড় শাহ আলম মেম্বারের গ্রুপের সদস্যরা টেঁটা, বল্লম ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে গ্রামে ঢোকেন। ছোট শাহ আলমের বাড়িতে তারা হামলা চালান। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ছোট শাহ আলমের সমর্থকরা বাধা দেওয়ার চেষ্টা চালান। এ সময় উভয় পক্ষে সংঘর্ষ বেধে যায়। এতে প্রতিপক্ষের হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ছোট শাহ আলম গ্রুপের সাদির মিয়া ও হিরণ নামে দুজন ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এ সময় প্রতিপক্ষের হামলায় ৮ জন গুলিবিদ্ধসহ কমপক্ষে ৩০ জন আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে রায়পুরাসহ নরসিংদীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

অপর একটি সূত্রে জানা যায়, আগামী ১১ নভেম্বর রায়পুরা উপজেলার পাড়াতলী ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন ফেরদৌস কামাল জুয়েল। তফসিল ও মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই এলাকায় ছোট শাহ আলম তার পক্ষ হয়ে নৌকার প্রচারণা শুরু করেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্র্থী মানসুর রহমান মাসু। এলাকায় শক্তি বৃদ্ধি করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে মানসুর রহমান মাসু হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ফেরারি আসামি বড় শাহ আলম মেম্বার ও তাদের সমর্থকদের গ্রামে ফিরিয়ে আনেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল ভোরে বড় শাহ আলম মেম্বার ও তাদের সমর্থকরা অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ছোট শাহ আলম ও তাদের সমর্থকদের ওপর হামলা চালায়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে দুজন নিহত ও ৩০ জন আহত হন। গালে ও হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত শামসুন্নাহার বলেন, ‘হঠাৎ সকালে বিকট শব্দ। ঘর থেকে বের হতেই দেখি বড় শাহ আলম মেম্বারের লোকজন আমাদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি করছে। এ সময় আমার মুখে ও শরীরে গুলি লাগে।’ গুলিবিদ্ধ আলামিন মিয়া বলেন, ‘বড় শাহ আলম মেম্বার সাদিরের বুকে অস্ত্র ঠেকিয়ে নিজ হাতে গুলি করে হত্যা করেন। এ অবস্থা দেখে আমি দৌড়ে এগিয়ে যাই। তখন শাহ আলম মেম্বার আমার মুখ লক্ষ্য করে গুলি করেন। এ সময় একটি গুলি আমার ঠোঁটে এসে লাগে। আমি তার বিচার চাই।’ টেঁটাবিদ্ধ দানা মিয়া বলেন, ‘এলাকায় দুটি হত্যা মামলা হওয়ার পর বড় শাহ আলম মেম্বার পুলিশের ভয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যান। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই গতকাল গ্রামে এসে হঠাৎ আমাদের ওপর আক্রমণ চালান। টেঁটা, বল্লম, দা, ছুরি ও অস্ত্র নিয়ে আমাদের ওপর এলোপাতাড়ি হামলা করেন। তাদের হামলায় কমপক্ষে ১০ জন গুলিবিদ্ধসহ ৩০ জন আহত হয়েছেন।’ এ ব্যাপারে কথা বলতে বড় শাহ আলম মেম্বার ও ছোট শাহ আলমের মোবাইল ফোনে কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী পাঠান বলেন, দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর বড় শাহ আলম মেম্বার ও তার সমর্থকরা ভোরে গ্রামে ফিরে আসেন এবং প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালান। এতে ছোট শাহ আলম পক্ষের দুজন নিহত হন। বেশ কয়েকজন আহতও হন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এখন পরিবেশ শান্ত রয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দুজনকে আটক করা হয়েছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যানুসারে, বগুড়া : বগুড়ার শেরপুরে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা বিদ্রোহী প্রার্থীর প্রচারণা সভায় হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। গত বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের খানপুর পূর্বপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। হামলায় আহতদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর। তাদের স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তারা হলেন- খানপুর গ্রামের দবির উদ্দিন তরফদারের ছেলে আনারুল ইসলাম (৬৫) ও একই গ্রামের সাইফুল ইসলাম (৪০)। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে যাওয়ায় তাদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। এ ঘটনায় গতকাল সকালে বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী ভুক্তভোগী আনারুল ইসলাম বাদী হয়ে শেরপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এদিকে শিবগঞ্জে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনী প্রচারণাকে কেন্দ্র করে নৌকার কর্মী-সমর্থকরা বিদ্রোহী প্রার্থীর নির্বাচনী অফিসে হামলা করেছেন। হামলায় নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর ছাড়াও কমপক্ষে ৮ জন আহত হয়েছেন। বুধবার রাত ৮টায় উপজেলার বিহার ইউনিয়নের বিহার হাটে এ হামলার ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বিহার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ও বর্তমান চেয়ারম্যান মহিদুল ইসলামের নামে নৌকা ও বিদ্রোহী প্রার্থী যুবলীগ নেতা মতিউর রহমান মতিনের নামে মোটরসাইকেল প্রতীক বরাদ্দ করা হয়। বুধবার প্রতীক বরাদ্দের পর পরই প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারে মাঠে নামেন। সন্ধ্যার পর উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজ আহম্মেদ রিজু প্রায় ১০০ মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে বিহার হাট এলাকায় মোটরসাইকেল প্রতীকের পক্ষে নির্বাচনী সভা করেন। রাত ৮টার দিকে নৌকা মার্কার কর্মী-সমর্থকরা মোটরসাইকেল মার্কার একটি নির্বাচনী অফিসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর শুরু করেন। এ সময় সেখানে রাখা কমপক্ষে ১০টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। নৌকা মার্কার কর্মীদের হামলায় মোটরসাইকেল মার্কার কমপক্ষে ৮ জন কর্মী সমর্থক আহত হয় বলে দাবি করেছেন বিদ্রোহী প্রার্থী মতিউর রহমান মতিন।  ফরিদপুর : ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়ন পরিষদের আসন্ন নির্বাচনে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর অফিসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও কয়েক ব্যক্তিকে আহত করার ঘটনায় মামলা হয়েছে। গতকাল নগরকান্দা থানায় ১৮ জনের নামোল্লেখসহ বেশ কয়েকজনকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করেন মোটরসাইকেল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী কামাল হোসেন মিয়ার সমর্থক মো. রইচ শেখ। স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনী অফিসে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর) আসনের সংসদ সদস্য পদে উপনির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে প্রচারণায় বাধা ও মারপিটের অভিযোগ উঠেছে। সিরাজগঞ্জ প্রেস ক্লাবে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী মোক্তার হোসেন সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন। লিখিত বক্তব্যে তিনি উল্লেখ করে বলেন, আমার প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে আমাকে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছে।

গত ২৭ তারিখ বুধবার দুপুর ২টায় জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে আমার নেতৃত্বে বাঘাবাড়ী সিএনজি স্ট্যান্ড মোড়ে নির্বাচনী প্রচারণার সময় শাহজাদপুর পৌর মেয়রের নেতৃত্বে ৩০-৪০ জন আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনী আমাকে কিল-ঘুষি লাথি মেরে পাঞ্জাবি ছিঁড়ে দেয় এবং আমার সঙ্গে থাকা হিলটন প্রাং ও আবদুল জলিলসহ ১০-১২ জন নেতা-কর্মীকে গুরুতর আহতসহ তাদের হত্যা করার হুমকি দেওয়া হয়।

এ সময় আমার কাছে থাকা মোবাইল ফোন, একটি  সোনার চেইন ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়।

সর্বশেষ খবর