শুক্রবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

শীতে করোনা বাড়ার শঙ্কা, সতর্ক থাকতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

ই-কমার্স কোম্পানি নিবন্ধনের নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

শীতে করোনা বাড়ার শঙ্কা, সতর্ক থাকতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

সম্প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে আয়েশি ভাব ছেড়ে দেশবাসীকে আবারও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বিকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ভান্ডারে কম্বল গ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনা বলেন, দেখা যাচ্ছে যখনই শীতকাল আসছে পৃথিবীর সব দেশে আবার কিন্তু করোনাভাইরাস দেখা দিচ্ছে। এমনকি ইউএসএ, ইংল্যান্ড বা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ইতোমধ্যে এর প্রাদুর্ভাব কিছুটা দেখা যাচ্ছে, বৃদ্ধি পাচ্ছে। অসতর্ক হলে দেশে আবারও করোনা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে আশঙ্কা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন দেখা যাচ্ছে করোনা নেই, সবার মধ্যে একটু আয়েশি ভাব এসে গেছে। এখন সময় এসেছে আবার সতর্কতা অবলম্বন করার। আর সতর্কতা অবলম্বন করতে পারলে ইনশাআল্লাহ এই প্রাদুর্ভাব আমাদের বাংলাদেশকে আক্রান্ত করতে পারবে না। তিনি বলেন, শীতকাল আসলে একটু ঠান্ডা লাগলে সর্দি-কাশি হয়। আর সর্দি-কাশিটা হলেই কিন্তু এই করোনাভাইরাসের সন্দেহ জাগে। সেই দিকে সবাইকে একটু সতর্ক থাকতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, সারা দেশের মানুষকে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। যেন আবার এই করোনার প্রাদুর্ভাব না দেখা দেয়। সবাইকে সাবধানে থাকতে হবে। সবাইকে মাস্ক পরার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাস্কটা অবশ্যই পরে থাকতে হবে। এই মাস্কটা পরা থাকলে কেউ যদি সংক্রমিত হয়ে কথা বলতে আসে আপনি নিজে সংক্রমিত হবেন না। প্রতিষেধক টিকা নেওয়া ব্যক্তিরাও অন্যকে করোনা সংক্রমিত করতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, ভ্যাকসিন যারা নিয়েছে যদি তাদের কারও করোনা হয় তিনি কিন্তু করোনাটা ছড়াতে পারেন। নিজে হয়তো অত বুঝবেন না কিন্তু দেখা যাচ্ছে তিনি অন্যকে সংক্রমিত করছেন। এ বিষয়ে আমার মনে হয় দেশবাসীর এখন থেকে আরও সতর্ক হওয়া উচিত। আর এ বিষয়ে আরও প্রচার আমাদের দরকার, মানুষকে সতর্ক করা। শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সবাইকে আমলকী, আমড়া, লেবু, কমলা, জাম্বুরা, টমেটোসহ ভিটামিন সি যুক্ত খাবার ও শাক-সবজি বেশি করে খাওয়ার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।

আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে সবাইকে টিকা : আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে সবাইকে টিকা দেওয়ার প্রস্তুতির কথা জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ইতিমধ্যে টিকাদান কর্মসূচি যেটা চলছে আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে আমরা সব মানুষকে টিকা দিতে সক্ষম হব। তিনি বলেন, বাংলাদেশের কোনো মানুষ যেন বাদ না যায়, সবাই নীতিমালা অনুযায়ী টিকা গ্রহণ করার মতো যোগ্য প্রত্যেকটা মানুষ টিকা পাবে সে ব্যবস্থাটা আমরা করেছি। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদেরও টিকা দেওয়া হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, টিকাদান কর্মসূচি চলছে দেশব্যাপী। পাশাপাশি আমাদের ছাত্র সমাজকে আমরা টিকা দিচ্ছি এবং স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদেরও আমরা টিকা দেব। সে প্রস্তুতি আমরা ইতিমধ্যে নিয়েছি। দুই-এক দিনের মধ্যেই আমরা কাজ শুরু করব। সরকার করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে সব কিছুতেই একটা স্থবিরতা বিশ্বব্যাপী সৃষ্টি হয়েছিল। তবে বাংলাদেশে আমরা সব সময় চেষ্টা করেছি যে দেশে যেন কোনো মতে কোনো কিছু স্থবির না হয়, অন্তত সচল থাকে। সেদিক থেকে আমরা মনে করি, বাংলাদেশ যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেছে। অনুষ্ঠানে ৩৭টি ব্যাংক প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ভান্ডারে মোট ২৬ লাখ ৪৫ হাজার পিস কম্বল এবং ১০ লাখ টাকা অনুদান হিসেবে প্রদান করে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় প্রান্ত থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তার মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এসব অনুদান গ্রহণ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় প্রান্তে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম মজুমদারসহ বিভিন্ন ব্যাংকের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। ব্যাংক মালিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের যে কোনো দুঃসময়ে দেখেছি আমাদের ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশন সব সময় এগিয়ে আসে। প্রত্যেক ব্যাংকের পক্ষ থেকে সব সময় সহযোগিতা করে থাকেন। এমনকি এটা আমাদের বলারও প্রয়োজন হয় না। আপনারা নিজেরা নিজেদের থেকে এগিয়ে আসেন মানুষের কল্যাণে কাজ করার জন্য। সে জন্য আপনাদের সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

ই-কমার্স কোম্পানি নিবন্ধনের নির্দেশ : ই-কমার্স ব্যবসায় জড়িতদের আগামী দুই মাসের মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধন করতে হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা রাখতে হবে (ডিপোজিট)। ইভ্যালিসহ বিভিন্ন কোম্পানির শত শত কোটি টাকার প্রতারণা ও আত্মসাতের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মন্ত্রিসভার বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা যোগ দেন। পরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে আগামী দুই মাসের মধ্যে যারা ই-কমার্স ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকবে, তাদের সবাইকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধন করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি ডিপোজিট রাখতে হবে, যাতে ‘কোনো কিছু হলে’ সেই ডিপোজিট থেকে দেওয়া যায়। এ ছাড়া গোয়েন্দা ও যারা এসব তদারক করেন, তাদেরও যাচাই করে দেখতে পরিষ্কার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের বাইরে লেনদেন না করতে ব্যাপক প্রচারাভিযানের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যাতে মানুষকে বোঝানো হবে, যদি কেউ লেনদেন করেন, তা নিজ দায়িত্বে করতে হবে, তার দায়িত্ব সরকার নেবে না।

কপিরাইট আইন : বৈঠকে ‘কপিরাইট আইন, ২০২১’-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রস্তাবিত আইনে অনেক সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। প্রথম প্রকাশ হওয়ার পর ৬০ বছর পর্যন্ত কপিরাইট থাকবে। এ ক্ষেত্রে স্বত্বাধিকারী যদি মারাও যান, তাহলে প্রথম দিন থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত স্বত্বাধিকার পাবেন। ৬০ বছর পর স্বত্বাধিকারের কী হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ৬০ বছর পর সবার জন্য উন্মুক্ত হয়ে যাবে। ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘ধরুন একজন গান গাইলো। সে গানের স্বত্বাধিকার তার। ৬০ বছর আগে যদি অন্য কেউ সে গান গায় তাহলে তাকে আইন অনুযায়ী টাকা দিতে হবে। যদি তিনি আপনাকে অনুমতি না দিয়ে থাকেন।’ শাস্তি প্রসঙ্গে সচিব বলেন, শাস্তির জন্য তিনটি ধারা রয়েছে। প্রতিটি বিষয়ের জন্য আলাদা আলাদা শাস্তির বর্ণনা রয়েছে। উদাহরণ টেনে বলেন, ‘যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কপিরাইট বিদ্যমান রয়েছে, এমন কোনো কর্মের অধিকার লঙ্ঘনকারীর অনুলিপি তৈরি করেন, তাহলে সর্বনিম্ন ২ লাখ টাকা অথবা ২ বছরের কারাদন্ড ভোগ করতে হবে।’

মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৬১ শতাংশ : চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে মন্ত্রিসভা বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৬১ দশমিক ৫৪ শতাংশ, যা ২০২০ সালের এ সময়ে ছিল ৪৫ দশমিক ৭১ শতাংশ। এ প্রসঙ্গে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে মন্ত্রিসভার চারটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এসব বৈঠকে মোট ২৬টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরমধ্যে ১৬টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়েছে এবং ১০টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে একটি চুক্তি অনুমোদন ও ১০টি আইন সংসদে পাস হয়েছে। ২০২০ সালের একই সময়ে (১ জুলাই থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর) মন্ত্রিসভার নয়টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এরমধ্যে ৭০টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, আর বাস্তবায়ন হয় ৩২টি। বাস্তবায়নাধীন রয়েছে ৩৮টি সিদ্ধান্ত। এ সময়ের মধ্যে তিনটি নীতি বা কর্মকৌশল ও ছয়টি চুক্তির অনুমোদন দেওয়া হয়। সংসদে পাস হয় আটটি আইনের। বৈঠকে টাঙ্গাইলের আতিয়া বন (সংরক্ষণ) আইনের খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ওষুধ আইনের খসড়া উপস্থাপনের পর আলোচনা করা হলেও সেটি নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়নি। এটি আরও পর্যালোচনা করতে বলা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি আরও জানান, মন্ত্রিসভার অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রুততম সময়ে সারা দেশের শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন।

১ নভেম্বর ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া শুরু : সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া শুরু হবে ১ নভেম্বর অর্থাৎ আগামী সোমবার থেকে। ঢাকায় শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ৩ লাখ ৪৪ হাজার। এর মধ্যে ৩ লাখ শিক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হয়েছে। শিক্ষার্থীদের টিকা দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঢাকায় ১২টি স্থান নির্দিষ্ট করেছে। আপাতত সেখান থেকেই শুরু হবে এ টিকা কার্যক্রম। এর সঙ্গে পরবর্তী সময়ে আরও যুক্ত হবে সিটি করপোরেশনের কমিউনিটি সেন্টারগুলো।

সর্বশেষ খবর