সোমবার, ১ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

জয় যেন দূরের বাতিঘর

জয় যেন এখন বাংলাদেশের কাছে দূরের বাতিঘর। দেখা গেলেও গন্তব্যে পৌঁছা যাচ্ছে না। পরাজয়ের বৃত্তে আটকে পড়েছে বাংলাদেশ দল। কখনো ক্যাচ মিস হচ্ছে, কখনো বোলাররা খেই হারিয়ে ফেলছেন। আবার কখনো ব্যাটসম্যানরা হতাশ করে দিচ্ছেন। সম্মিলিত ব্যর্থতায় টি-২০ বিশ্বকাপে টানা তিন ম্যাচে হার। স্বপ্নের টি-২০ বিশ্বকাপ এখন দুঃস্বপ্নের আসর।

টি-২০ ক্রিকেট নাকি তরুণদের খেলা। উজ্জীবিত তারুণ্য যেমন ব্যাট হাতে ছক্কা-চারের ফুলঝুরি সাজিয়ে রানের পাহাড় গড়বেন, আবার বল হাতে আতঙ্ক ছড়িয়ে প্রতিপক্ষকে নাস্তানাবুদ করবেন! কিন্তু বাংলাদেশ দলের তরুণদের পারফরম্যান্সে যেন বার্ধক্যের ছাপ। সংযুক্ত আরব আমিরাতে এসে তারা না পারছেন ঝড়ো গতিতে রান  তুলতে, না পারছেন বল হাতে ক্যারিশমা দেখাতে। ফিল্ডিংয়ে তো একের পর এক ক্যাচ মিস করে দলকে ঠেলে দিচ্ছেন বিপদের মুখে। নিজেকে মেলে ধরতে পারছেন না সিনিয়র ক্রিকেটাররাও। মাঝেমধ্যে তারা রীতিমতো দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিচ্ছেন! একের পর এক ম্যাচ হারছে লাল-সবুজরা।

বাংলাদেশের তরুণরা মোটেও উজ্জীবিত নন। যেখানে এই আসরে নামিবিয়ার মতো দল ক্যারিশম্যাটিক পারফরম্যান্স দেখাচ্ছে। দেশের হাজারও সমস্যায় থাকা আফগানিস্তানের ক্রিকেটাররা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিচ্ছে সেখানে বিশ্ব মঞ্চে বাংলার তরুণরা যেন খাবি খাচ্ছে! আফিফ-লিটনরা যেন ট্রমার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। মানসিকভাবে তারা রীতিমতো বিপর্যস্ত। তা না হলে এই দুই সেরা ফিল্ডার কেন একের পর এক ক্যাচ মিস করবেন? শেষ ম্যাচে নায়ক হতে পারতেন লিটন দাস। যদিও ৪৬ রানের দারুণ একটি ইনিংস খেলেছেন, কিন্তু দল হেরে যাওয়ায় বৃথাই গেছে তার চেষ্টা। ১৯তম ওভারের শেষ বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে লংঅনে ক্যাচ হয়েছেন তিনি। সাড়ে ছয় ফুট উচ্চতার দীর্ঘকায় ক্যারিবীয় ফিল্ডার বাউন্ডারি লাইনে বেশ কয়েক ফুট উঁচুতে লাফিয়ে বল তালুবন্দী করেন। কিন্তু কথা উঠতেই পারে, শারজাহর ছোট্ট স্টেডিয়ামে কেন ব্যাটে-বলে ঠিকঠাক হওয়ার পরও বল গ্যালারিতে ফেলতে পারলেন না লিটন? বিশ্বকাপের আগে ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সিরিজে লোয়ার অর্ডারে কী দুর্দান্ত ব্যাটিং করলেন আফিফ হোসেন! অসি মিডিয়ায় তাকে আখ্যা দেওয়া হলো ‘ডেঞ্জারম্যান’ হিসেবে! কিন্তু সেই ডেঞ্জারম্যান কেন বিশ্বকাপে এসে ভয় পাচ্ছেন? ফিল্ডিংয়ে যাকে মনে করা হয়, ‘বাংলাদেশের জন্টি রোডস’ সেই আফিফ কেন সহজ ক্যাচ ছাড়ছেন! ওপেনিংয়ে লিটনের তুলনায় বেশ ধারাবাহিক মোহাম্মদ নাঈম। কিন্তু পাওয়ার প্লেতে যতটা আক্রমণাত্মক হওয়া প্রয়োজন ততটা নন তিনি। সে কারণে ব্যক্তিগত স্কোর বাড়লেও দলের চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। আর পাওয়ার প্লেতে ভালো করতে না পারায় দলীয় স্কোরেই তার বড় প্রভাব পড়ছে। বোলিংয়ে প্রধান ভরসা মুস্তাফিজুর রহমান সেভাবে আগ্রাহী হতে পারছেন না। উল্টো মাঝেমধ্যেই খেই হারিয়ে ফেলে অনেক বেশি রান দিচ্ছেন। সৌম্যর সরকার মাঝেমধ্যে সুযোগ পেলেও তা কাজে লাগাতে পারছেন না। সিনিয়রদের হতাশাজনক পারফরম্যান্সের পর আমিরাতে তরুণদের ব্যর্থতা বাংলাদেশকে হতাশ করেছে। টি-২০ বিশ্বকাপের আগের ছয় আসরের মতো এবার সপ্তমেও সৌভাগ্যের দরজা খুলছে না। সে কারণেই কিনা আমিরাতে বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার আগেই টিম ম্যানেজমেন্ট চিন্তা করছে ২০২২ সালের অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপের কথা!

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর