বৃহস্পতিবার, ৪ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচন

৫ শতাধিক স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী বিএনপির

শফিউল আলম দোলন

আগামী ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে দেশের আটটি বিভাগের বিভিন্ন জেলায় মোট ৮৪৬টি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচনে বিএনপির পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে অংশ নিচ্ছেন। বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিলেও ধানের শীষ মার্কা ছাড়াই ভোটের মাঠে সক্রিয় রয়েছেন বিএনপির এসব স্থানীয় নেতা-কর্মী। দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ গ্রহণের ওপর কোনো রকমের আপত্তি নেই দলটির। ফলে সারা দেশে ৫০০-এর বেশি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর মাধ্যমে জানা গেছে, কোনো কোনো ইউনিয়নে বিএনপির একাধিক প্রার্থীও ভোটের মাঠে রয়েছেন। বিশেষ করে যেসব এলাকায় বিএনপির ভোটব্যাংক রয়েছে সেখানে তাদের তৎপরতা অপেক্ষাকৃত বেশি। এমনকি আওয়ামী লীগের শক্ত বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে- এমন এলাকাতেও কোন্দল ও ভোটব্যাংকগুলোকে কাজে লাগিয়ে জয়লাভের ব্যাপারে আশাবাদী বিএনপি প্রার্থীরা।

জানা গেছে, দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে ৮১ জন চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে চেয়ারম্যান পদে ভোট হবে ৭৬৫ ইউপিতে। বিএনপির তৃণমূলের বেশির ভাগ নেতা-কর্মীই নির্বাচনের পক্ষে। স্থানীয় প্রভাব ও দলীয় অবস্থান ধরে রাখতে সবাই ভোটের মাঠে থাকতে চান।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ভোট নিয়ে কথা না বলাই ভালো। এ সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এদের অধীনে ভোটে যাওয়া না যাওয়া একই কথা। এই মুহূর্তে আমরা এসব ভোট নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি না। আমাদের লক্ষ্য সরকারের পতন। আমরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করছি। তবে ইপি নির্বাচনে দলীয়ভাবে কেউ অংশ নিচ্ছে না। কোনো প্রার্থীর পক্ষে নেতারা প্রচারেও নামেনি। এ অবস্থায় কেউ যদি স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করতে চায় আমরা তাদের বাধাও দেব না।’ দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না- এটা দলের সিদ্ধান্ত। তারপরও দলের কেউ যদি স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নেয় সেটা একান্তই তাদের নিজস্ব ব্যাপার।

বিভিন্ন জেলায় দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে বেশির ভাগ ইউনিয়নেই বিএনপি নেতারা মাঠে রয়েছেন। তার মধ্যে বরিশাল জেলায় সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে তিনটিতে বিএনপির তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এর মধ্যে সদর উপজেলার রায়পাশা-কড়াপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে সাতজন প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আলহাজ নুরুল আমীনের ভাই বিএনপি সমর্থক আলহাজ মনিরুজ্জামান মনির স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিচ্ছেন। চরকাউয়ায় ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক মামুন সরদার ও চন্দ্রমোহনে সিরাজুল ইসলাম মাস্টার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।

খুলনার চার উপজেলার ২৭টি ইউনিয়নের মধ্যে ডুমুরিয়ার শরাফপুর ইউনিয়নে বিএম আলমগীর হোসেন, সাহস ইউনিয়নে মোল্লা মাহবুবুর রহমান, ধামালিয়ায় জহুরুল হক, রঘুনাথপুরে আমিনুল ইসলাম, খর্ণিয়ায় শেখ দিদারুল হোসেন, আটলিয়ায় দৌলত হোসেন সরদার ও ভান্ডারপাড়া ইউনিয়নে জিয়াউর রহমান জীবন, তেরখাদা উপজেলার বারাসাত ইউনিয়নে মো. আল আমিন হোসেন, বটিয়াঘাটায় ইমরান মোল্লা ও সুরখালী ইউনিয়নে বিএনপি নেতা শেখ হেমায়েত আলী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন।

কুমিল্লার ২২টি ইউনিয়নের মধ্যে মেঘনা উপজেলার দুটিতে বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে উপজেলার লুটেরচর ইউপি থেকে উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি আবদুল অদুদ মুন্সী এবং মানিকারচর ইউপি থেকে আতাউর রহমান ভূঁইয়া নির্বাচনে লড়ছেন। এ ছাড়া রাজশাহীর গোদাগাড়ী সদর ইউনিয়নে তৌহিদুল ইসলাম, মোহনপুরে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা হোসেন, পাকড়িতে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আনারুল ইসলাম, রিশিকুল ইউনিয়নে মোশাররফ হোসেন, গোগ্রামে হযরত আলী, বাসুদেবপুরে মাহফুজুর রহমান ডালিম, আষাড়িয়াদহে গোলাম মোস্তফা ও দেওপাড়ায় নাসির উদ্দিন বাবু ভোটের মাঠে রয়েছেন।

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার সাত ইউপিতে বিএনপি প্রার্থীরা হলেন-১ নম্বর বাংলাবান্ধায় মো. রাশেদ আলী, ২ নম্বর তিরনই ইউনিয়নে মো. আলমগীর হোসেন, ৩ নম্বর তেঁতুলিয়া ইউনিয়নে মো. শাহাদাত আলী, ৪ নম্বর শালবাহান ইউনিয়নে ফজলুর রহমান লিটন, মো. মতিয়ার রহমান, ৫ নম্বর বুড়াবুড়ি ইউনিয়নে মো. তারেক রহমান ও মো. রবিউল ইসলাম, ৬ নম্বর ভজনপুর ইউনিয়নে মোকছেদ আলী ও মো.  মোসলেমউদ্দীন এবং ৭ নম্বর দেবনগর

ইউনিয়নে মো. মহসিনুল হক। চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে ৮টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে ৯ বিএনপি নেতা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। রাজশাহীর তানোরে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিএনপির ৮ নেতা হলেন- উপজেলার বাঁধাইড় ইউপিতে কামরুজ্জামান হেনা, পাঁচন্দরে মোমিনুল হক মমিন, সরনজাইয়ে মোজাম্মেল হক ও ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতি, কামারগাঁ ইউপিতে ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি দলিল লেখক খলিলুর রহমান খলিল ও যুবদল নেতা আলমগীর হোসেন। চাঁন্দুড়িয়া ইউপিতে থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দিনের ছেলে যুবদল নেতা মাহফুজুর রহমান রিমন, নওগাঁয় ২০টি ইউপিতে ২৫ জন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে নওগাঁ সদর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে বিএনপিপন্থি প্রার্থীর সংখ্যা ১৪ জন। এ ছাড়া রানীনগর উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ১১ জন এবং শেরপুর সদর উপজেলার ধলা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে শেরপুর সদর উপজেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক জাকির হোসেন চেয়ারম্যান পদে মাঠে রয়েছেন।

কক্সবাজার জেলায় ২১টি ইউনিয়নের নির্বাচনে রামু উপজেলায় ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে গর্জনিয়াতে রামু উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মৌলা চৌধুরীসহ উখিয়ার ৫টি ইউনিয়নের ৪টিতে বিএনপি সমর্থিত ছয়জন এবং কক্সবাজার সদরের ৫টি ইউনিয়নে দুটিতে তিন বিএনপি নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এদিকে, লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের চরকাদিরা ইউনিয়নে দুজন, মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার ৫ ইউনিয়নের মধ্যে ৪টিতে বিএনপির একাধিক নেতা, মাগুরায় সদর উপজেলার ১০টির মধ্যে ৪টিতে বিএনপির পাঁচজন স্বতন্ত্র প্রার্থী, লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মোট ৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫টিতে, দিনাজপুরের ২টি উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬টিতে, বোঁচাগঞ্জ উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪টিতে, হাকিমপুর উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ২টিতে, কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে চারটিতে বিএনপি নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন।

এ ছাড়া গাজীপুরের ৭টি ইউপির মধ্যে বোয়ালী ইউনিয়নে দুজন, তরগাঁও ইউনিয়নে একজন, সিংহশ্রী ইউনিয়নে একজন,  সনমানিয়া ইউনিয়নে দুজন ও ঘাগটিয়া ইউনিয়নে একজন বিএনপি নেতা ভোটের মাঠে রয়েছেন। পাবনার সুজানগর উপজেলার ১০ ইউনিয়নে একজন ও চাঁদপুর সদর উপজেলার ৯টি ইউপিতে বিএনপির প্রার্থীরা মাঠে সক্রিয়। লক্ষ্মীপুরের রামগতির ১টি ও কমলনগরের ৩টি ইউনিয়নে, মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার তেঁতুলবাড়িয়া ইউনিয়নে ও নাটোর সদরের সাতটির মধ্যে ছয়টিতে বিএনপির সাত নেতা রয়েছেন। তেবাড়িয়া ইউনিয়নে প্রার্থী হয়েছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক চেয়ারম্যানসহ দুজন। বড় হরিশপুরে, দিঘাপতিয়ায়, কাফুরিয়ায়, হালসায় মাজেদ মন্ডল ও লক্ষ্মীপুর খোলাবাড়িয়ায় একজন করে বিএনপি নেতা প্রার্থী হয়েছেন। নেত্রকোনার ৩টি উপজেলায় ১২টি ইউনিয়নে বিএনপির ১৫ জন  চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। এসব প্রার্থী ইউনিয়ন ও উপজেলা বিএনপির-অঙ্গ সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। জামালপুর সদর উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের মধ্যে দুটি ইউপিতে বিএনপির প্রার্থী রয়েছেন। যশোরের চৌগাছা ও ঝিকরগাছা উপজেলায় বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী ১২ জন। ফরিদপুরে নগরকান্দা ও সালথা উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নে, ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল ও হরিপুর উপজেলায় বিএনপির একাধিক  নেতা-কর্মী চেয়ারম্যান পদে লড়াই করছেন। হরিপুর উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে বিএনপির ছয়জন, ডাঙ্গীপাড়া ইউপিতে দুজন ও ভাতুরিয়ায় একজন। চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৮টি ইউপিতে নয় বিএনপি নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন। হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের মধ্যে ২টিতে নির্বাচনে লড়ছেন বিএনপির দুই প্রার্থী।

 

সিলেট জেলার তিন উপজেলায় বিএনপির ১২ জন স্বতন্ত্র পরিচয়ে নির্বাচন করছেন। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের মধ্যে ৪টিতে চেয়ারম্যান পদে বিএনপির ছয়জন নির্বাচন করছেন স্বতন্ত্র পরিচয়ে।

টাঙ্গাইলের তিন উপজেলার ২০ ইউনিয়নের মধ্যে বিএনপির সাতজন স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন। মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের ৭টি ইউনিয়নে বিএনপি নেতারা অংশ নিচ্ছেন। চুয়াডাঙ্গার ৫টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে শুধু দামুড়হুদা জুড়ানপুর ইউনিয়নে রুহুল আমিন নামে বিএনপির এক নেতা চেয়ারম্যান পদে মাঠে আছেন।

সুনামগঞ্জের ১২টি উপজেলার মধ্যে ছাতকের ১০ ইউনিয়নের মধ্যে ৬ ইউনিয়নে এবং দোয়ারাবাজার উপজেলার ৯ ইউনিয়নের মধ্যে ৭টিতে বিএনপির নেতা-কর্মীরা লড়ছেন। এ ছাড়া মানিকগঞ্জের সিংগাইরে ১১টি ইউপিতে বিএনপির ৪ নেতা অংশ নিচ্ছেন।

সর্বশেষ খবর