শুক্রবার, ৫ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ভোটের খুনোখুনি চলছেই

নরসিংদীতে গুলিতে নিহত ৪, বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা, ভাঙচুর লুটপাট

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভোটের খুনোখুনি চলছেই

নরসিংদীর আলোকবালীতে ইউপি নির্বাচন নিয়ে সংঘর্ষে নিহতের পাশে স্বজনদের আহাজারি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ঘিরে সহিংসতা চলছেই। গতকাল নরসিংদীর দুর্গম চরাঞ্চল আলোকবালীতে দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন চারজন। মেম্বার প্রার্থীসহ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন কমপক্ষে ৩০ জন। বেশ কয়েকটি বাড়িঘরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে নরসিংদীতেই আটজন প্রাণ হারালেন এ নির্বাচনী সহিংসতায়। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নির্বাচন ঘিরে হয়েছে সহিংসতা।

নরসিংদী প্রতিনিধি জানান, খুনোখুনি ও হামলা-পাল্টা হামলায় উত্তপ্ত নরসিংদীর মেঘনা নদীবেষ্টিত দুর্গম চরাঞ্চলগুলো। সংঘর্ষে রক্তাক্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। প্রতি মুহূর্তে হত্যা-পাল্টা হত্যা ঘটলেও শান্ত হচ্ছে না পক্ষগুলো। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল ভোর সাড়ে ৫টার দিকে আলোকবালীতে দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে চারজন নিহত হন। তারা হলেন নেকজানপুর গ্রামের কটু মিয়ার ছেলে আমির হোসেন (৪৫), আবদুল জলিলের ছেলে আশরাফুল (২২), আবদুল মনু মিয়ার মেয়ে খুশি বেগম (৫০) ও শহিদুল্লাহ মিয়ার ছেলে খায়রুল ইসলাম (৩০)। তারা সবাই আলোকবালী ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন দীপুর সমর্থক। এ ঘটনায় মেম্বার প্রার্থী আবু খায়ের গুলিবিদ্ধ হওয়াসহ কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছেন। তার মধ্যে আছেন খায়রুল (২৮), বাদশা মিয়া (৩২), হানিফ (৪৫), আনিস মিয়া, লতিফ (৪৫), আহসানুল্লাহ (২৬), শউকত মিয়া (২৪), আরিফ (২২), সনিয়া (১৭), মমিন আলী (৫৫), মাসুমা (২০), মকবুল হোসেন, আকাশ (১৪), জিয়াউর (৩৭), হাসেম (৪৮), মিজান ও বুলু (৫৫)। এরা সবাই দীপু সমর্থক। গুলিবিদ্ধ গুরুতর আহত ১০ জনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় তাহের নামে একজনকে হাসপাতাল থেকে আটক করেছে পুলিশ।

স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি মামুন হাসান সংঘর্ষ ও হতাহতের জন্য পুলিশকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, ‘হামলার আশঙ্কার কথা পুলিশকে জানালেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এমনকি থানায় অভিযোগ দিয়েও লাভ হয়নি। ফলে এতগুলো লোক মারা গেছে।’ তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছে নরসিংদী পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন কেন্দ্র করে আলোকবালী ইউপি চেয়ারম্যান দীপু ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহর মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। এর জেরেই ১০ দিন আগে দুই পক্ষে সংঘর্ষ হয়। তবে এখানে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান দীপু। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে আসাদ স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেন। পরে দলীয় নেতা-কর্মীদের চাপে তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। এ নিয়ে আসাদুল্লাহর সমর্থক মেম্বার প্রার্থী রিপন মোল্লা ও দীপু সমর্থক মেম্বার প্রার্থী আবু খায়েরের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এরই জেরে গতকাল সকালে রিপন মোল্লার সমর্থকরা টেঁটা-বল্লমসহ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নেকজানপুর গ্রামে আবু খায়ের সমর্থকদের ওপর অতর্কিত হামলা চালান। উভয় পক্ষে সংঘর্ষ চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনজন ঘটনাস্থলেই এবং ঢাকায় নেওয়ার পথে খায়রুল ইসলাম নামে আরও একজন মারা যান।

পটুয়াখালীতে সংঘর্ষ, গোলাগুলি : পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানান, ইউপি নির্বাচন ঘিরে নৌকা ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে একাধিক ইউনিয়নে বেশ কয়েকবার দফায় দফায় সংঘর্ষ ঘটেছে। গোলাগুলির পর পুলিশও পাল্টা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। এতে গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন অর্ধশত। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে তিনটি। সদর উপজেলার লোহালিয়া ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী যুবলীগ নেতা মো. জুয়েল মৃধাকে প্রকাশ্যে কুপিয়েছেন নৌকার প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মো. কবির হোসেন তালুকদারের ছোট ভাই পৌর কাউন্সিলর লাবুর নেতৃত্বে কর্মীরা। লাবুকে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেফতার করা হলেও গভীর রাতে মুচলেকা রেখে ছেড়ে দিয়েছে সদর থানা পুলিশ। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। বাউফলের নওমালায় বিদ্রোহী প্রার্থী, বর্তমান চেয়ারম্যান শাহজাদা হাওলাদারের সবুজ নামে এক কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। কয়েক দফা গোলাগুলির ঘটনায় নৌকার প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. কামাল হোসেন বিশ্বাসের পক্ষ থেকেও বাউফল থানায় মামলা হয়েছে বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে।

প্রার্থীর বাড়ি ভাঙচুর-লুট : ফরিদপুর প্রতিনিধি জানান, নগরকান্দার কোদালিয়া শহীদনগর ইউনিয়নে নির্বাচন কেন্দ্র করে আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ইমাম-উল ইসলামের ভাজনকান্দা গ্রামের বাড়িতে হামলা হয়েছে। বুধবার রাতে নৌকার পক্ষে স্লোগান দিয়ে ৪-৫ শ ব্যক্তি এ হামলা চালায়। হামলাকারীরা ঘরের মালামাল তছনছ ও লুট করে। তাদের হাতে আহত হয়েছেন কমপক্ষে তিনজন। তাদের ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

নির্বাচনী অফিসে আগুন : মেহেরপুর প্রতিনিধি জানান, গাংনীর তেঁতুলবাড়িয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী আল মামুনের নির্বাচনী অফিসে অগ্নিসংযোগ হয়েছে। এতে পোস্টার, ব্যানার ও চেয়ার পুড়ে গেছে। বুধবার রাতের কোনো একসময় কল্যাণপুর মন্ডলপাড়ায় নির্বাচনী অফিসে দেওয়া এ আগুন স্থানীয়রা পানি ঢেলে নিয়ন্ত্রণে আনেন।

ত্রাস সৃষ্টির অভিযোগে অস্ত্রসহ গ্রেফতার : খুলনা থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, খুলনায় ইউপি নির্বাচনে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে ত্রাস সৃষ্টির অভিযোগে আশরাফুল আলমকে (৫৫) বিদেশি পিস্তল, গুলিসহ গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার রাতে লবণচরা পুটিমারী বাজার শ্মশানঘাট এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি বটিয়াঘাটার তেঁতুলতলা এলাকার আবদুল মান্নান হাওলাদারের ছেলে। তার কাছ থেকে বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, ২ রাউন্ড গুলি জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে।

সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা : গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট গ্রহণ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন কাশিয়ানী সদর ইউনিয়ন পরিষদের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মোহাম্মাদ আলী খোকন। তিনি বলেন, ‘রাতের আঁধারে আমার আনারস প্রতীকের পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। প্রচার কার্যক্রম ব্যাহত করতে কর্মী-সমর্থকদের নানাভাবে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে।

জোরপূর্বক কেন্দ্র দখল, জাল ভোট, নির্বাচনের ফল পরিবর্তন ও ভোট কারচুপির পরিকল্পনা করা হচ্ছে।’ গতকাল সকাল ১০টায় নিজ নির্বাচনী কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব অভিযোগ করেন।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর