শুক্রবার, ৫ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ব্রিটিশ উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক

ব্রিটিশ উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

ব্রিটিশ এমপিরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নেন -পিআইডি

উন্নয়ন যাত্রায় অংশীদার হতে ব্রিটিশ উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে প্রবাসী বাংলাদেশিদেরও বিনিয়োগ নিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

গতকাল লন্ডনের কুইন এলিজাবেথ সেন্টারের চার্চিল হলে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২১ : বিল্ডিং সাসটেইনেবল গ্রোথ পার্টনারশিপ অ্যান্ড রোড শো’র উদ্বোধনকালে তিনি এ আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবং ব্রিটিশ রাজসিংহাসনের উত্তরাধিকার প্রিন্স চার্লস। খবর বাংলানিউজ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জ্বালানি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জাহাজ নির্মাণ, অটোমোবাইল, লাইন ইঞ্জিনিয়ারিং, অ্যাগ্রো প্রসেসিং, ব্লু-ইকোনমি, টুরিজম, হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ, তথ্য-প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন আকর্ষণীয় সেক্টরে সুবিধা নিয়ে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য অপেক্ষা করছে বাংলাদেশ। ব্রিটিশ উদ্যোক্তারা বিনিয়োগের জন্য এসব সেক্টর বা এর বাইরে যে কোনো সেক্টর বেছে নিতে পারেন। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু অর্থনৈতিক অঞ্চল রয়েছে, যেখানে বিশেষ কোনো একটি দেশের কোম্পানিগুলো বিনিয়োগ করতে পারে। যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগকারীরা তাদের জন্য সে রকম কোনো একটি অঞ্চল বেছে নিতে পারেন। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের জন্য দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল, ২৮টি হাইটেক পার্ক প্রস্তুত করার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুবিধার কথা তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, দ্রুত নগরায়ণ, মানুষের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সক্ষমতা বৃদ্ধি, মধ্যম আয়ের ভোক্তাদের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি, দক্ষিণ এশিয়ার বিশাল বাজারের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পাশাপাশি আঞ্চলিক কানেকটিভিটি বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশ এখন আকর্ষণীয় বিনিয়োগ গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের জনসম্পদের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রতিযোগিতামূলক মজুরিতে দক্ষ মানবসম্পদ পাওয়া নিশ্চিত করতে সরকার গুরুত্ব দিয়ে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ব্যবসার অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকার সব ধরনের সহযোগিতা করবে জানিয়ে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনুকূল ব্যবসা পরিবেশ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ সরকারের এজেন্সিগুলো সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেবে। তিনি বলেন, বিনিয়োগের সর্বোত্তম সম্ভাব্য রিটার্ন পেতে ব্রিটিশ বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা সরবরাহ করা হবে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে সফলভাবে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করছে। এভাবে আরও কোম্পানিকে বিনিয়োগ নিয়ে এগিয়ে আসার এবং বাংলাদেশের পুঁজিবাজারেও বিনিয়োগ করার আমন্ত্রণ জানান তিনি। প্রবাসী বাংলাদেশিদেরও নিজের দেশে বিনিয়োগ নিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা বিদেশে আছেন, এখন নিজের দেশে আসেন, বিনিয়োগ করেন। আর এখানে যারা ব্যবসা করছেন তাদের জন্য সুবিধা, আপনারা বাংলাদেশে ইন্ডাস্ট্রি করতে পারেন। সরকারপ্রধান বলেন, বিশেষ করে আমাদের বাংলাদেশি যারা তাদের বিশেষভাবে আহ্বান করি। আপনারা আসেন এবং ব্রিটিশ বিনিয়োগকারীদের পার্টনার করে নিয়ে আসেন। তাদের সঙ্গে আপনারা বাংলাদেশে এসে ব্যবসা করেন। সবরকম সুযোগ-সুবিধা আপনারা পাবেন। তিনি বলেন, কারও যদি কোনো অসুবিধা থাকে, সেটা আমরা দেখব। যারা বাংলাদেশের আছেন, তারা যদি আসেন, তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা দেওয়া হবে। প্রবাসীদের খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দেশে খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়ে তোলেন তাহলে আমি মনে করি আরও বেশি ভালো তাজা শাক-সবজি, মাছ, ফল-মূল সব নিয়ে আসতে পারবেন। আমাদের কৃষিতে বিপ্লব ঘটেছে। সারা বছরই আমরা সব ধরনের সবজি সবকিছু উৎপাদন করতে পারি। গবেষণার মাধ্যমে সেটা আমরা অর্জন করেছি। যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্মের পর থেকে বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য চমৎকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উপভোগ করছে। শুধু তাই নয়, যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ায় যারা এগিয়ে এসেছে যুক্তরাজ্য তাদের মধ্যে অন্যতম। তখন থেকে দুই দেশের সম্পর্ক শক্তিশালী থেকে আরও শক্তিশালী হচ্ছে। যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য এবং যুক্তরাজ্য বাংলাদেশে দ্বিতীয় বৃহত্তম বিনিয়োগকারী দেশ হিসেবে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলনের মাধ্যমে দুই দেশের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সম্পর্ককে আরও ফলপ্রসূ হবে বলে আশা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোডশোটি ব্যবসা ও বিনিয়োগে বাংলাদেশের সম্ভাবনাগুলোকে তুলে ধরবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন বদলে যাওয়া দেশ। গত এক দশকে আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাপক উন্নতি করেছে। দেশকে উন্নত করতে সরকারের প্রচেষ্টার ফলে জাতিসংঘ বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা দিয়েছে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলসহ যোগাযোগ ও অবকাঠামো ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতি, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সেক্টরে বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, সড়ক রেলসহ অবকাঠামো সেক্টরে আমরা ব্যাপক উন্নয়ন করছি। শক্তিশালী নেতৃত্ব, সুশাসন, স্থিতিশীল সরকার, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, উন্নয়ন অগ্রাধিকারের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এখন বিশ্বে ৩১তম বৃহত্তম অর্থনীতি।

 

সর্বশেষ খবর