রবিবার, ৭ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

গতি বাড়ছে শিশুদের টিকায়

২৫টি বুথে দেওয়া হবে টিকা - কমিউনিটি ক্লিনিকে টিকা ক্যাম্পেইন শুরু

জয়শ্রী ভাদুড়ী

গতি বাড়ছে শিশুদের টিকায়

রাজধানীর ৮টি কেন্দ্রে ১২-১৭ বছর বয়সী শিশুদের দেওয়া হচ্ছে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা। গত পাঁচ দিনে প্রায় ৭৪ হাজার শিশুকে টিকার আওতায় আনা হয়েছে। গতি বাড়াতে কেন্দ্রগুলোতে বুথ বাড়িয়ে প্রতিদিন ৩০ হাজার শিশুকে টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনা করছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক ড. শাহেদুল খবীর বলেন, ‘গত ১ নভেম্বর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ২ হাজার             শিক্ষার্থীকে টিকা দিয়ে কর্মসূচি শুরু হয়েছে। এরপর ৮টি কেন্দ্রে প্রতিদিন ১৮ হাজার শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে টিকা নেওয়ার আগ্রহ রয়েছে। তাই কর্মসূচির পরিসর বাড়ানো হচ্ছে। কেন্দ্র না বাড়িয়ে চলমান ওই ৮ কেন্দ্রে এ সপ্তাহে ২৫টি বুথে টিকা দেওয়া হবে। প্রতিদিন প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়া হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বুথ বাড়াতে চাইলেও অনেক স্কুলে স্থান সংকটের কারণে সম্ভব হচ্ছে না। আপাতত কেন্দ্র বাড়ানো হচ্ছে না। টিকার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের কাজও চলছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান থাকবে দ্রুত রেজিস্ট্রেশন করে নেওয়ার। তবে অনেক শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষা সামনে থাকায় টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন করছেন না। অনেক শিক্ষার্থী চাইলেও রেজিস্ট্রেশন করতে পারছেন না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য পাঠানোর ফরম্যাটে ভুল থাকায় সংশোধনে কিছুটা সময় লেগেছে।’ রাজধানীর যে ৮টি স্কুলে ১২-১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া হচ্ছে সেগুলো হলো- হার্ডকো ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, চিটাগং গ্রামার স্কুল, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মিরপুর কমার্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কাকলী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, সাউথ ব্রিজ স্কুল এবং মিরপুরের স্কলাস্টিকা স্কুল। ৮টি স্কুলে প্রতিদিন ৮-১০টি বুথে দেওয়া হচ্ছে ফাইজারের টিকা। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, ফাইজারের এই টিকা সংরক্ষণ করতে হয় হিমাঙ্কের নিচে মাইনাস ৯০ ডিগ্রি থেকে মাইনাস ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। ফলে এ টিকা সংরক্ষণে আলট্র্রা কোল্ড ফ্রিজারের প্রয়োজন হয়। আর পরিবহনের জন্য প্রয়োজন হয় থার্মাল শিপিং কনটেইনার বা আলট্র্রা ফ্রিজার ভ্যান। ফলে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এসি রুম রয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ না থাকলে সেসব প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব হবে না। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির সদস্য ডা. শামসুল হক বলেন, এ কার্যক্রমে এমন স্কুলগুলো নির্ধারণ করা হয়েছে যেখানে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ছাড়াও তার আশপাশের স্কুলের শিক্ষার্থীদের টিকা দিতে পারবে। এই টিকা তৈরি করার জন্য যে ডায়লুয়েন্ট লাগে সেটা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে রাখতে হয়। এ দুটি বিষয় বিবেচনা করে যেখানে আমাদের এই সুযোগ আছে সেই স্কুলগুলো নির্বাচন করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে ২৫টি বুথ করা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য, প্রতিদিন যেন ৪ থেকে ৫ হাজার শিশুকে টিকা দিতে পারি। তবে পরবর্তীতে ঢাকা শহরসহ আরও প্রায় ২২টি জেলায় শিক্ষার্থীদের টিকাদান কর্মসূচি শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছি। পর্যায়ক্রমে সারা দেশে প্রতিটি জেলায় এই কর্মসূচি সম্প্রসারিত করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’ এর আগে গত ১৪ অক্টোবর মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার চারটি স্কুলের ১২-১৭ বয়সী ১২০ জনকে পরীক্ষামূলকভাবে টিকা দেওয়া হয় কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। তাদের ১৪ দিন পর্যবেক্ষণ করে ইতিবাচক ফল পাওয়ায় ব্যাপক পরিসরে এই বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া শুরু হয়।

কমিউনিটি ক্লিনিকে করোনার টিকা দেওয়া শুরু : আজ বিশেষ ক্যাম্পেইনের আওতায় দেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। আগামী ১১ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে এ কর্মসূচি। প্রায় ১৩ হাজারেরও বেশি কমিউনিটি ক্লিনিকে এ কর্মসূচি চলবে। এ ক্যাম্পেইনের আওতায় টিকা পাবে ৬৫ লাখের বেশি মানুষ। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, প্রতিটি উপজেলার কমিউনিটি ক্লিনিকে যে কোনো এক দিন এ ক্যাম্পেইনের আওতায় টিকা দেওয়া হবে। ক্যাম্পেইন চলাকালে শুধু প্রথম ডোজ দেওয়া হচ্ছে। আগামী মাসে একই ক্যাম্পেইনের আওতায় দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে। প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে গড়ে ৫০০ জনকে চীনের সিনোফার্মের টিকা দেওয়া হচ্ছে। টিকা দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট এলাকায় প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে জনগণকে অবহিত করা হচ্ছে। কমিউনিটি ক্লিনিকে টিকা দেওয়ার এই বিশেষ ক্যাম্পেইনের আগে আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে আরও দুটি ক্যাম্পেইনের আয়োজন করেছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর। দুই দফা ক্যাম্পেইনে টিকার আওতায় এসেছে প্রায় দেড় কোটি মানুষ। এখন পর্যন্ত দেশের ২৬ শতাংশ মানুষ অন্তত এক ডোজ টিকা ও ১৮ শতাংশ মানুষ দুই ডোজ টিকা পেয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর