রবিবার, ৭ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ভাড়া বৃদ্ধি কিছুতেই সমর্থনযোগ্য নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভাড়া বৃদ্ধি কিছুতেই সমর্থনযোগ্য নয়

গোলাম রহমান

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেছেন, এমনিতেই দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা। এর মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে পরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে ধর্মঘট শুরু হয়েছে। পরিবহনের ভাড়া বাড়লে নিত্যপণ্যের দাম আরও বাড়বে। একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। এখন তেলের দাম যতটা বাড়ানো হয়েছে, তাতে প্রতি কিলোমিটারে প্রত্যেক যাত্রীর জন্য ১-২ পয়সার বেশি প্রভাব পড়বে বলে মনে হয় না। এর পরিপ্রেক্ষিতে যানবাহনের ভাড়া বাড়ানো কিছুতেই সমর্থনযোগ্য নয়। ক্যাব সভাপতি বলেন, প্রতি বছর মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি নিয়ে একটা প্রতিবেদন আমরা তুলে ধরি। তাতে দেখা গেছে, গত কয়েক     বছরে ধারাবাহিকভাবে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। করোনায় অনেক মানুষের আয় কমেছে। চাকরি হারিয়েছে। তবুও ব্যয় বেড়েছে। ক্যাবের পক্ষ থেকে গত তিন-চার বছর ধরে সরকারকে একটা প্রস্তাব দিয়ে আসছি আমরা। সেটা হলো- যখন তেলের দাম বিশ্ববাজারে কম, তখন বেশি দামে দেশে তেল বিক্রি থেকে যে উদ্বৃত্ত অর্থ হবে, সেটা দিয়ে একটা ‘মূল্য স্থিতিশীলতা তহবিল’ করতে। যখন দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়বে, তখন ওই তহবিল থেকে ঘাটতি মেটাতে হবে। প্রয়োজনে কম সুদে সরকার ধারও নিতে পারবে এই তহবিল থেকে। প্রয়োজনে স্বল্প সুদে সরকার এই তহবিলকে ধার দিতেও পারবে। তাহলে তেলের দাম নিয়ে কখনো সংকট হবে না। কিন্তু সেটা হচ্ছে না।

তিনি বলেন, পত্রিকায় জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটা বিজ্ঞাপন দেখলাম, যেখানে বলা হয়েছে গত পাঁচ বছরে সরকারি কোষাগারে লাভ হিসেবে ১০ হাজার কোটি টাকা জমা দিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। ৩৩ হাজার কোটি টাকার বেশি বাজেটের প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এই অর্থ কোথা থেকে এলো? জ্বালানি তেলের দাম যখন বিশ্ববাজারে কম ছিল, তখন আমাদের দেশে বেশি দামে বিক্রি করে সেই উদ্বৃত্ত অর্থ কোষাগারে জমা হয়েছে। প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এখন বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় গত সাড়ে পাঁচ মাসে ডিজেলের ক্ষেত্রে বিপিসির ১ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। যেখানে ১০ হাজার কোটি টাকা সরকারের কোষাগারে জমা হয়েছে, সেখানে ১১০০ কোটি টাকা লোকসান হওয়ায় হঠাৎ জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো কোনোভাবেই কাম্য নয়। এজন্য আবারও বলছি, যে ১০ হাজার কোটি টাকা সরকার লাভ হিসেবে নিয়েছে, সেটা দিয়ে তহবিলটা গঠন করা হোক, যাতে জ্বালানি তেলের মূল্য স্থিতিশীল রাখা যায়।

গোলাম রহমান বলেন, লকডাউনের সময় অর্ধেক যাত্রী নেওয়ার শর্তে পরিবহনের যে ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল সেটা এখন থাকার কথা না। কিন্তু ভাড়া না কমানোর ব্যাপারে মানুষের অভিযোগ শুনি। লকডাউন উঠে যাওয়ার পর ভাড়া না কমালে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। ভাড়া একবার বেড়ে গেলে সেটা আর কমে না। এটা কাক্সিক্ষত নয়। জ্বালানি তেল একটা স্পর্শকাতর পণ্য। জ্বালানির দামের সঙ্গে পরিবহন ব্যয়, উৎপাদন ব্যয় সবকিছু জড়িত। যে কারণে জ্বালানির ব্যবসাটা সরকার প্রায় সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু সরকার ব্যবসা করবে, সেটা কাম্য নয়। এটা একটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, যেখানে সার্বিক বিষয়, মানুষের স্বস্তি, শান্তি, জনদুর্ভোগের বিষয় বিবেচনা করা হবে। কিন্তু সেটা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী যখন দেশের বাইরে, তখন এমন একটা বড় সিদ্ধান্ত একেবারেই অপ্রত্যাশিত।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর