সোমবার, ৮ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আগেই ফাঁসি কার্যকরের তোড়জোড়

আটকে দিল আপিল বিভাগ

আরাফাত মুন্না

আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আগেই এক আসামির মৃত্যুদন্ড কার্যকরের তোড়জোড় শুরু করার অভিযোগ উঠেছে। ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত শুকুর আলী নামে ওই আসামির আইনজীবী গতকাল বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে উত্থাপন করেন। পরে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের কনডেম সেলে থাকা শুকুর আলীর দন্ড কার্যকর প্রক্রিয়ার ওপর স্থগিতাদেশ দেয় আপিল বিভাগ। আসামির আইনজীবী হেলাল উদ্দিন মোল্লা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

এদিকে কারা সূত্র জানিয়েছে, শুকুর আলীর মৃত্যুদন্ড কার্যকরে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেছে বিচারিক আদালত। বিচারিক আদালতের পাঠানো পরোয়ানা পেয়েই দন্ড  কার্যকরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়কে অবহিত করা হয়েছে বলেও সূত্র জানায়।

আদেশের বিষয়ে হেলাল উদ্দিন জানান, গত ১৮ আগস্ট আপিল বিভাগ কুষ্টিয়ার একটি ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় শুকুর আলীর ফাঁসি বহাল রাখেন। এ মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আরও তিন আসামির সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয় আদালত। ফলে যাদের সাজা কমেছে, তাদের যেন কনডেম সেলে থাকতে না হয়, সে জন্য অ্যাডভান্স অর্ডার পাঠায় আপিল বিভাগ। ওই সংক্ষিপ্ত অর্ডারটি পেয়েই শুকুর আলীর মৃত্যুদন্ড কার্যকরের তোড়জোড় শুরু করে কাশিমপুর কারাগার কর্তৃপক্ষ। এর অংশ হিসেবে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন পাঠানো হয়। সে আবেদনও নাকচ হয়।

তিনি বলেন, আমরা রিভিউ আবেদনের জন্য আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ের অপেক্ষা করছিলাম। এর মধ্যে আসামির পরিবার থেকে আমাদের জানানো হয়, তার ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। তখন আমি কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করি। এরপর রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি প্রকাশ না হওয়ায় এবং ওকালতনামা পেতে দীর্ঘসূত্রতার প্রেক্ষাপটে বিষয়টি আমি আজ (রবিবার) আপিল বিভাগের নজরে আনি। সর্বোচ্চ আদালতকে আমি বলি, রিভিউ আবেদন করার আগে যেন আমার আসামির ফাঁসি কার্যকর করা না হয়। এ আইনজীবী আরও বলেন, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ আমার এ প্রার্থনা বিবেচনায় নিয়ে আমাকে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে একটি আবেদন করতে বলেন। এ সময় আদালত অ্যাটর্নি জেনারেলকে বলেন আইজি প্রিজন্সকে বলে দিতে যে, আপাতত ফাঁসি কার্যকরের সিদ্ধান্ত যেন স্থগিত রাখা হয়। বিকালে আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতে আবেদন করলে শুকুর আলীর ফাঁসি কার্যকর প্রক্রিয়া স্থগিত করে আদেশ দেওয়ার পাশাপাশি আবেদনটি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়েছেন বলে জানান আইনজীবী হেলাল উদ্দিন। সকালে আপিল বিভাগে এ বিষয়ে শুনানিতে আসামি পক্ষের আইনজীবী হেলাল উদ্দিন এবং রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, একজন আইনজীবী আপিল বিভাগে আবেদন করলেন, তার আসামির আপিলটা ডিসমিস (খারিজ) হয়েছে। কিন্তু তারা এখনো পূর্ণাঙ্গ রায়টি পাননি। রায়টি পেলে তারা রিভিউ করতে পারবেন। কিন্তু এর আগেই নাকি আসামির ফাঁসি কার্যকরের পদক্ষেপ নিচ্ছে কারা কর্তৃপক্ষ। তখন আদালত আইজি প্রিজন্সকে বলতে বললেন যে, পূর্ণাঙ্গ রায়ের আগে যেন ফাঁসি কার্যকর করা না হয়। অ্যাডভান্স অর্ডারের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, বিচারিক আদালতে কোনো আসামির মৃত্যুদন্ড হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে কনডেম সেলে (মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামিদের সেল) নিয়ে যাওয়া হয়। একই সঙ্গে আপিলে যাদের সাজা কমে তাদের নরমাল সেলে সরিয়ে আনা হয়। সাজা কমে যাওয়া আসামিদের যাতে আর একদিনও কনডেম সেলে থাকতে না হয়, সে জন্যই শুকুর আলীর মামলার অন্য তিন আসামির ক্ষেত্রে অ্যাডভান্স অর্ডার দিয়েছিলেন সর্বোচ্চ আদালত। নথি সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪ সালের ২৫ মার্চ রাতে দৌলতপুর উপজেলার লালনগর গ্রামের এক শিশু প্রতিবেশীর বাড়িতে টেলিভিশন দেখে ফেরার পথে আসামিরা তাকে অপহরণ করে। এরপর লালনগর ধরমগাড়ী মাঠের একটি তামাক খেতে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ শেষে শিশুটিকে তারা হত্যা করে। পরদিন তার বাবা আবদুল মালেক ঝনু বাদী হয়ে পাঁচজনকে আসামি করে দৌলতপুর থানায় মামলা করেন। এ মামলার বিচার শেষে ২০০৯ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি পাঁচজনের মৃত্যুদন্ড দেন কুষ্টিয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক আকবর হোসেন। পাঁচজন হলেন- কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার লালনগর গ্রামের খয়ের আলীর ছেলে শুকুর আলী, আবদুল গনির ছেলে কামু ওরফে কামরুল, পিজাব উদ্দিনের ছেলে নুরুদ্দিন সেন্টু, আবু তালেবের ছেলে আজানুর রহমান ও সিরাজুল প্রামাণিকের ছেলে মামুন হোসেন।

পরে নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদন্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য নথি ডেথ রেফারেন্স হিসেবে হাই কোর্টে আসে। পাশাপাশি আসামিরা আপিল করেন। এর মধ্যে কামু ওরফে কামরুল মারা যান। পরে ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শেষে হাই কোর্ট চার আসামির মৃত্যুদন্ড বহাল রাখে। পরে আসামিরা আপিল বিভাগে আপিল করেন।

গত ১৮ আগস্ট কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার লালনগরে ১৩ বছর বয়সী কিশোরী সাবিনাকে ধর্ষণের পর হত্যার দায়ে আসামি শুকুর আলীর মৃত্যুদন্ড বহাল রেখে রায় দেয় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত অপর তিন আসামির সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয় আদালত।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর