বৃহস্পতিবার, ১১ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

কোনো বিবেচনাতেই সঠিক হয়নি তেলের দাম বৃদ্ধি : সিপিডি

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক কোনো বিবেচনাতেই জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি সঠিক হয়নি বলে মনে করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। জনসাধারণের ভোগান্তির কথা মাথায় রেখে সরকারের এ সিদ্ধান্ত বাতিল করে তা আবার বিবেচনার সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।

গতকাল ‘জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি কতটুকু প্রয়োজন ছিল’ শীর্ষক এক ব্রিফিংয়ে সিপিডির পক্ষ থেকে এ কথা বলা হয়। ব্রিফিংয়ে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির সম্মানীয় ফেলো মুস্তাফিজুর রহমান এবং গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যুক্তিসংগত নয়। সরকারের নীতিমালার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয় এবং রাজনৈতিকভাবে এটা কোনো আলোকিত সিদ্ধান্ত নয় বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ফলে সামগ্রিকভাবে অর্থনীতি ও মানুষের জীবনযাত্রার ওপর চাপ সৃষ্টি হবে। এই মূল্যবৃদ্ধির ফলে হয়তো বিত্তবানদের ওপর খুব একটা প্রভাব পড়বে না। কিন্তু যারা দরিদ্র এবং যারা নতুন করে দরিদ্র হয়েছে, যারা কভিড আক্রান্ত অর্থনীতিতে নতুন করে রিকোভারির চেষ্টার মধ্যে রয়েছে, তাদের ওপর যে প্রভাব পড়বে, আমরা যদি ন্যায্যতার কথা বলি সেই ন্যায্যতার দিক থেকেও এটা (জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি) একটা অন্যায্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এই দাম বাড়ানো হচ্ছে বিপিসির লোকসানের কথা বলে। বিপিসির লোকসানের কারণ কী? আমরা জানি এখানে সুশাসনের অভাব রয়েছে। বিপিসির তেল সংগ্রহ, বিক্রি, মার্কেটিংয়ে সিস্টেমের ব্যবস্থাপনা ও সুশাসনের অনেক অভিযোগ রয়েছে। তারা বিভিন্ন মার্কেটিং কোম্পানিকে দিয়ে তেল মার্কেটিং করে। সেখানেও আমরা দেখি দুর্নীতির খবর। ফাহমিদা খাতুন বলেন, যখন কোনো একটা জিনিসের মূল্য ৫, ১০ বা ২০ শতাংশ বাড়ানো হয়, তখন আমরা বাজারে গিয়ে দেখব, মূল্য অনেক বেশি। এই যে এখন তেলের দাম ২৮ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে, সেখানে বাসের ভাড়া প্রকৃতপক্ষে ৫০ শতাংশ বেশি নেওয়া হয়েছে। মূল্যবৃদ্ধির বিভিন্ন নেতিবাচক দিক তুলে ধরে জ্বালানি তেল আবার আগের দামে ফিরিয়ে নেওয়ার সুপারিশ করে ফাহমিদা খাতুন বলেন, এটি (জ্বালানি তেল) একটি কৌশলগত পণ্য। এই পণ্য ছাড়া অর্থনীতি অচল হয়ে পড়বে। এ পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলছি পূর্ববর্তী দামে ফিরে যাওয়া দরকার। তিনি বলেন, তেলের ওপর বিভিন্ন ধরনের শুল্ক কর রয়েছে। সেখান থেকে কোনো একটি শুল্ক প্রত্যাহার করে ভর্তুকি হিসেবে দেওয়া যেতে পারে। যখন অর্থনীতিতে কোনো ধরনের সংকট দেখা দেয় বা জরুরি অবস্থা দেখা দেয়, মূল্যবৃদ্ধির কারণে মানুষের ওপর একটা বোঝা হয়ে দেখা দিচ্ছে, তখন সরকারের হাতে বিভিন্ন ধরনের ফিসক্যাল ইন্সট্রুমেন্ট থাকে। সেই ফিসক্যাল ইন্সট্রুমেন্টগুলা তখনই ব্যবহার করার সময়। ভর্তুকি বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে দেওয়া হয়ে থাকে। এখানে কেন এই মুহূর্তে দেওয়া হবে না? না দেওয়ার কোনো যুক্তি নেই। আরেক প্রশ্নের উত্তরে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সরকারের এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ ভুল সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্ত থেকে সরকারের সরে আসা উচিত। এক প্রশ্নের উত্তরে ফাহমিদা বলেন, প্রতিদিন ২০ কোটি টাকা ধরলে বছরে ৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এই ৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া খুব কঠিন বিষয়? মনে তো হয় না।

সর্বশেষ খবর